উচ্চ মাধ্যমিকের সিলেবাসে নতুন ১২ গল্প-কবিতা
উচ্চ মাধ্যমিকের সিলেবাস থেকে এক সময় বাদ পড়ে যাওয়া ‘বিলাসী’ ফিরে আসছে নতুন শিক্ষাবর্ষে। অপরাজেয় কথা সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের খ্যাতনামা এই ‘বিলাসী’ গল্পটি বহুদিন পর চলতি উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষাবর্ষে আবারও ফিরে এসেছে।
তবে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই বিখ্যাত গল্প ‘হৈমন্তী’ এখনও সিলেবাসে ফিরে আসেনি। ২০১৫ সালে গল্পটি পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দেওয়া হয়। বিলাসী, হৈমন্তী- কালজয়ী এসব গল্প চিরকালের চিরদিনের হয়ে বাঙালি হৃদয়ে দাগ কেটে আছে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, কয়েক বছর পর পর সিলেবাস পরিবর্তন করা হয়। তখন পাঠ্যবইও পরিমার্জন করা হয়। এবারও তা হয়েছে। এ কারণে কিছু নতুন গল্প-কবিতা যোগ হয়েছে। কিছু বাদ গেছে।
এবারের সিলেবাস থেকে মোতাহের হোসেন চৌধুরী, আহসান হাবীব, আল মাহমুদ, দিলওয়ার ও আনিসুজ্জামানের লেখা বাদ পড়েছে। আবার কোনো কোনো লেখক ও কবির আগের লেখা বাদ দিয়ে নতুন লেখা পাঠ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা প্রথমপত্র ‘সাহিত্যপাঠ’ পাঠ্যবইয়ে বেশকিছু সংযোজন-বিয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলা বইয়ে এবার সাতটি গদ্য ও পাঁচটি পদ্য বা কবিতা নতুন সংযোজন করা হয়েছে। প্রায় ৩০টি করে গদ্য ও পদ্য আছে এই গ্রন্থে। এর মধ্যে ১২টি করে পাঠ্যভুক্ত করা হয়েছে। ক্লাসে এগুলোই দুই বছর ধরে পড়ানো হবে। গত ৪ অক্টোবর থেকে অনলাইনে শুরু হয়েছে একাদশ শ্রেণির ক্লাস। এ বছর একাদশ শ্রেণিতে ১৫ লাখের বেশি ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়েছে। এই শিক্ষার্থীরা ২০২২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমান পরীক্ষায় অবতীর্ণ হবে।
‘বিলাসী’ ছাড়াও নতুন সিলেবাসে পাঠ্যভুক্ত হয়েছে ১২টি গদ্য। সেগুলো হলো- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘বাঙ্গালার লেখকদিগের প্রতি নিবেদন’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘অপরিচিতা’, রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের ‘গৃহ, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আহ্বান’, কাজী নজরুল ইসলামের ‘আমার পথ’, আবুল ফজলের ‘মানব-কল্যাণ’, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘মাসি-পিসি’, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘বায়ান্নর দিনগুলো’, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘রেইনকোট’, মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘মহাজাগতিক কিউরেটর এবং গী দ্য মোপাসাঁর ‘নেকলেস’।
আর এ বছরের পাঠ্য হিসেবে নির্ধারিত ১২টি পদ্য হলো- মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সোনার তরী’, জসীম উদ্দীনের ‘প্রতিদান’, জীবনানন্দ দাশের ‘সুচেতনা’, সুফিয়া কামালের ‘তাহারেই মনে পড়ে’, ফররুখ আহমেদের ‘পদ্মা’, সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘আঠারো বছর বয়স’, শামসুর রাহমানের ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর ‘আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি’, সৈয়দ শামসুল হকের ‘নুরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ এবং আবু হেনা মোস্তফা কামালের ‘ছবি।
আগের সিলেবাস থেকে এ বছর বাদ পড়েছে বেশকিছু গল্প ও কবিতা। গদ্যের মধ্যে বাদ পড়েছে- বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘বিড়াল’, রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের ‘চাষার দুক্ষু’, মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ‘জীবন ও বৃক্ষ’, এবং আনিসুজ্জামানের ‘জাদুঘরে কেন যাব’।
আর পদ্যের মধ্যে বাদ পড়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ঐকতান’, কাজী নজরুল ইসলামের ‘সাম্যবাদী’, জীবনানন্দ দাশের ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’, আহসান হাবীবের ‘সেই অস্ত্র’, আল মাহমুদের ‘লোক-লোকান্তর’ এবং দিলওয়ারের ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’।
নতুন সিলেবাসে পাঠ্যবইয়ের এই সংযোজন-বিয়োজন প্রসঙ্গে এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. মশিউজ্জামান বলেন, প্রতি তিন বছর পর পর সব শ্রেণির সিলেবাস পরিবর্তনের পাশাপাশি পাঠ্যবইয়েও পরিমার্জন করা হয়। একাদশ শ্রেণির সাহিত্যপাঠ বইটি সর্বশেষ পাঁচ বছর আগে ২০১৫ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। কোনো একটি বিষয়ের বই প্রকাশিত
হওয়ার দুই বছর পর আমরা মাঠ পর্যায়ে তার ‘ট্রাই আউট’ করি। ট্রাই আউট হলো যারা বইটি পড়েছেন আর যারা পড়িয়েছেন, তাদের উভয়ের মতামত সংগ্রহ করা। এসব মতামত নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এটা শিক্ষাবিজ্ঞানেরই অংশ এবং সারা পৃথিবীতেই এটা করা হয়। সাহিত্যপাঠ বইটির ট্রাই আউট করেছি আমরা ২০১৮ সালে। তার আলোকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের দু’জন অধ্যাপককে দিয়ে আমরা পুরো বইটি পরিমার্জন করিয়েছি। তখনই কিছু লেখা বাদ গেছে, কিছু যুক্ত হয়েছে।
হৈমন্তী গল্প না থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথের রচনা সম্ভার বিপুল। ‘হৈমন্তী’ গল্পের শিক্ষণীয় বিষয় ছিল শিক্ষার্থীদের মধ্যে যৌতুকবিরোধী চেতনা জাগ্রত করা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা ‘অপরিচিতা’য় বিষয়টি আরও ভালোভাবে পরিস্ম্ফুটিত হয়েছে। তাই সেটি রাখা হয়েছে।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের রচনা বাদ দেওয়া প্রসঙ্গে এনসিটিবির এই সদস্য বলেন, আমরা লেখকের ম্যাপিং করি না। প্রতিটি সিলেবাসের সুনির্দিষ্ট লার্নিং আউট কাম থাকে। সেই দিকটি মাথায় রেখে পাঠ্য নির্বাচন করা হয়।