হয়রানির শিকার শতাব্দী, বললেন— মানুষ এত খারাপ কী করে হয়?
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২০, ০৭:৩৩ PM , আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২০, ০৭:৩৩ PM
এইচএসসি পরীক্ষায় গড় পাসের সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ পাঠানোর পর সামাজিক মাধ্যমে বিদ্রূপ আর হয়রানির মুখে পড়েছেন একজন ছাত্রী। শতাব্দী রায় নামের ওই শিক্ষার্থী বলছিলেন, ‘‘প্রথমদিন সারাদিন আমি কান্না করেছি। কোন কিছু খেতে পারিনি। মানুষ এতোটা খারাপ হয় কি করে?’’
শতাব্দীর মা বীথিকা রায় বলছেন, খুব নোংরা নোংরা ভাষায় আমার মেয়েকে আক্রমণ করা হয়েছে। ফেসবুকে, ইউটিউবে আজেবাজে কথা বলা হয়েছে। আমরা খুব কষ্ট পেয়েছি। ও ভীষণ কান্নাকাটি করেছে।
শতাব্দী রায় বলছিলেন, ‘‘ফেসবুকে, ইউটিউবে আমাকে নানানভাবে হয়রানি করা হয়েছে। অনেক বাজে বাজে মন্তব্য করা হয়েছে, খারাপ কথা বলেছে। আমার ফেসবুকে কোন আইডি নেই, তাই হয়তো আমার কোন ছবি নিয়ে ট্রল করতে পারেনি।’’
তিনি নিজেও ফেসবুক ব্যবহার করেন না। তবে তার বন্ধুরা যখন এসব বিষয়ে তাকে জানান, এরপর তিনি মায়ের ফেসবুক একাউন্টে সেসব খারাপ মন্তব্য দেখতে পান।
ফেসবুকে দেখা যায়, ব্যক্তি আইডির পাশাপাশি কয়েকটি গ্রুপ থেকে তাকে আক্রমণ করে নানা ব্যাঙ্গ-বিদ্রূপ করা হচ্ছে। এ সংক্রান্ত বেশ কিছু স্ক্রিনশট শেয়ার করেন অনেকে, যেখানে তাকে শারিরীক আক্রমণের কথাও বলা হয়েছে। তবে এসব স্ক্রিনশটের সত্যতা নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
শতাব্দী রায় বলছিলেন, ‘‘আমি সারাদিন কান্নাকাটি করেছি। কিছু খেতেও পারিনি, ঘুমাতে পারিনি। আমার শরীর এতো খারাপ হয়ে পড়েছিল যে, আমি দাঁড়াতেও পারছিলাম না।’’ ‘‘তারপরে আমার আত্মীয়স্বজন, বন্ধুরা আমাকে বোঝান যে, এটা নিয়ে মনখারাপ করার দরকার নেই। কারণ ওরা পড়াশোনা করেই নি, পরীক্ষা হলে তারা হয়তো ফেল করতো। তাই তারা এখন ট্রল করছে। তাদের পরীক্ষা দেয়ার ইচ্ছা থাকলে তো আর এটা করতো না।’’
‘‘যে যা বলার করবেই, আমি তো আর তাদের থামাতে পারবো না। সমস্যা তাদের, আমার তো না। আমার যা করার, সেটা আমি করে যাবো।’’ বলছেন এইচএসসির এই শিক্ষার্থী।
তিনি জানান, অনেকের কাছ থেকে তিনি সমর্থন পাচ্ছেন। অনেকেই ফোন করে তাকে সমর্থনের কথা জানিয়েছেন।
আইনি নোটিশ পাঠানোর ব্যাপারে শতাব্দী রায় বলছিলেন, ‘‘আমার এসএসসির ফলাফল ভালো হয়নি। তাই এবার আমি অনেক বেশি মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করেছি। এখন যদি আমার আগের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে এইচএসসির ফলাফল ঠিক করা হয়, তাহলে তো আমি পিছিয়ে পড়বো। বরং যারা পড়াশোনা করেনি, তাদের সুবিধা হবে।’’
‘‘আমরা তো দুইবছর পড়াশোনা করেছি, সেটার ভিত্তিতেই ফলাফল হোক। আগের ফলাফলের ভিত্তিতে হলে এই দুই বছরের পড়াশোনার তো কোন অর্থ হলো না।’’
গত ৮ অক্টোবর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী শতাব্দী রায়ের পক্ষে বাংলাদেশে সরকারকে একটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশের ব্যাপারে শিক্ষার্থী আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান জানিয়েছেন, আমরা নোটিশে বলেছি যে, জেএসসি ও এসএসসির ফলাফলে ভিত্তিতে গড় ফলাফলের যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, তা যুক্তি সঙ্গত নয়। কারণ অনেকে আগে খারাপ ফলাফল থাকলেও এখন তারা হয়তো ভালো প্রস্তুতি নিয়েছেন। আবার অনেকের আগে ভালো রেজাল্ট থাকলেও এবার হয়তো তাদের প্রস্তুতি ভালো নয়।
এ বছর প্রায় ১৪ লাখ শিক্ষার্থীর এইচএসসি পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল। তবে গত ৭ অক্টোবর শিক্ষামন্ত্রী ঘোষণা করেন যে, ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না, বরং জেএসসি এবং এসএসসি'র ফলাফলের ভিত্তিতে তাদের এইচএসসি'র ফলাফল নির্ধারণ করা হবে।
এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক সন্তুষ্টি জানিয়েছিলেন। ‘‘এই সিদ্ধান্তের পেছনে যথাযথ চিন্তাভাবনার অভাব আছে, বিশ্লেষণ কম হয়েছে, কিন্তু এর ফলে নোটিশদাতার মতো প্রতিভাবান, কঠোর পরিশ্রমী শিক্ষার্থীরা ক্ষতির মুখোমুখি হবে। ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় এই শিক্ষার্থীরা ক্ষতির মুখোমুখি হবে।’’ বলছেন ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান।
‘‘আমরা পরামর্শ দিয়ে বলেছি, করোনাভাইরাসের কারণে এইচএসসি পরীক্ষা নেয়া না গেলে অন্তত টেস্টের ফলাফলের ভিত্তিতে যেন মূল্যায়ন করা হয়।’’
শিক্ষা সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক ও নয়টি বোর্ডের চেয়ারম্যানকে নোটিশটি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এই নোটিশ পাঠানোর পর থেকেই সামাজিক মাধ্যমে বিদ্রূপ আর হয়রানির মুখে পড়েছেন ওই শিক্ষার্থী।
শতাব্দী রায়ের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান বলছেন, নোটিশ পাওয়ার তিনদিনের মধ্যে টেস্টের ফলাফলের ভিত্তিতে এইচএসসির ফলাফল নির্ধারণের সিদ্ধান্ত জানাতে হবে। তা করা না হলে হাইকোর্টে রিট করা হবে বলে তিনি জানান। বিবিসি