১৪ জুন ২০২০, ০৯:৫৩

আটকে গেছে একাদশে ভর্তিও, দুশ্চিন্তায় ভর্তিচ্ছুরা

  © ফাইল ফটো

এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশিত হওয়ার পর প্রায় অর্ধমাস হতে চললেও এখনো একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। দেশে করোনা প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় শিগগরিই শুরু হচ্ছে না ভর্তি কার্যক্রম। কবে নাগাদ শুরু হতে পারে তা বলতে পারছে না আন্তঃশিক্ষা বোর্ডও। ফলে করোনার মধ্যে একাদশে ভর্তি কার্যক্রম আটকে গেছে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা।

স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিবছর উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে এক ব্যাচ যখন এইচএসসি পরীক্ষা দেয় তখন নতুন ব্যাচ একাদশে ভর্তি হয়। কিন্তু এবারই প্রথম উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়েও জটের সৃষ্টি হলো। ফলে একদিকে এসএসসি উত্তীর্ণরা একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য অপেক্ষা করছে। অন্যদিকে স্থগিত এইচএসসি পরীক্ষা দেয়ার জন্য প্রতীক্ষায় রয়েছে আরেক দল শিক্ষার্থী।

আটকে থাকা ভর্তি কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়াউল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। এ অবস্থায় একাদশে ভর্তি কার্যক্রম শুরুর প্রশ্নই ওঠে না। সবার আগে আমরা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই। এ জন্য করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলেই একাদশে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা হবে।’

এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৫২৩ জন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। যারা একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন করতে পারবে। এর মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে এক লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ জন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ডে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরীক্ষার ফল প্রকাশের আগেই একাদশে ভর্তির ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। সেখানে ৭ জুন থেকে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করার প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানানো হয়। এর আগে গত ২৪ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে করোনার কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ নির্দেশনা অনুসরণপূর্বক সুবিধাজনক সময়ে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করতে অনুরোধ করা হয়।

কিন্তু দেশে করোনা সংক্রমন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং চলমান পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যেতে পারে। এই সময় শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টির উপর গুরুত্ব দিচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ফলে করোনা পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক হওয়ার আগ পর্যন্ত একাদশে ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা শিক্ষা বোর্ড।

৭ জুন থেকে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করার প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও হঠাৎ সিদ্ধান্ত পাল্টানোর বিষয়ে শিক্ষাবোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, অনলাইনে কলেজে ভর্তি আবেদন গ্রহণ করা হলেও শিক্ষার্থীরা কম্পিউটারের দোকানে যাবে, কলেজে যাবে। আবার মোবাইলে টাকা জমা দিতেও দোকানে যেতে হবে। কারণ সব শিক্ষার্থীর পক্ষে বাসায় বসে অনলাইনে আবেদন করা সম্ভব নয়। আবার নানা ভুলভ্রান্তির কারণে বোর্ডেও আসতে হয়। ফলে এই মুহূর্তে ভর্তিপ্রক্রিয়া শুরু হলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব নয়। এ জন্যই এই মুহূর্তে ভর্তিপ্রক্রিয়া থেকে সরে এসেছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড।

গত ২ জুন ঢাকা শিক্ষা বোর্ড এক নির্দেশে চার্চ পরিচালিত রাজধানীর চার কলেজকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থী ভর্তির নির্দেশ দেয়। কলেজগুলোও জিপিএর ভিত্তিতে ভর্তিপ্রক্রিয়া শুরু করে। কিন্তু ৩ জুন অন্য একটি নির্দেশে সেই চার কলেজের ভর্তিপ্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়।

গত ১ এপ্রিল থেকে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাস সংক্রমণজনিত কারণে তা স্থগিত করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার ১৫ দিন পর এই পরীক্ষা শুরু হবে।

এদিকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাধারণ ছুটির মেয়ার আরও বাড়ানো হচ্ছে। করোনা সংক্রমণের পরিস্থিতি উন্নত না হওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলমান ছুটি ১৫ জুন শেষ হচ্ছে। তবে এই ছুটির মেয়াদ আরও বাড়িয়ে আজ-কালকের মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করবে বলে জানা গেছে। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ছুটি বাড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হবে।