বিদায়ী অধ্যক্ষের যোগসাজসে কলেজে হামলা-লুটপাট, ক্ষতি কোটি টাকা
রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা নর্দান সিটি কলেজ। গত ১২ জানুয়ারি সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কলেজে হামলা ও লুটপাট চালিয়েছে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের সনদ ও নগদ টাকা লুটপাটসহ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাংচুর করা হয়েছে। এতে ক্ষতি হয়েছে এক কোটি টাকার মতো।
দুর্নীতির দায়ে কলেজের বিদায়ী অধ্যক্ষ ফেরদৌসী নাজনীন ও বাড়ির মালিক ডা. শারমিনের যোগসাজসে এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কলেজের শিক্ষকরা। তাই কলেজটিকে বাঁচাতে শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা। রবিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলন ওই ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, কলেজের বিদায়ী অধ্যক্ষ ফেরদৌসী নাজনীন দীর্ঘদিন ধরে কলেজ পরিচালনা করতে অপারগতা প্রকাশ করে আসছিলেন। পরে কলেজ শিক্ষকরা শিক্ষা বোর্ডের অনুমতি নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ঢাকা বোর্ড থেকে কলেজের সিনিয়র প্রভাষক ইসফাত জাহানকে কলেজ পরিচালনার দায়িত্ব দেয় সম্প্রতি। কিন্তু গত ১২ জানুয়ারি কলেজ বন্ধের দিন জুমার নামাজের সময় প্রায় তিন’শ লোক কলেজে ভাংচুর চালিয়ে ভবনের ছাদ ও দেয়াল ভেঙে ফেলে।
এসময় তারা কলেজের আসবাবপত্র ভেঙ্গে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে ও শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেটসহ মূল্যবান কাগজপত্র লুটপাট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনার পর শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কলেজে এসে কার্পেটের নিচ থেকে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ছেঁড়া অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় শিক্ষকরা মামলা করতে চাইলে উত্তরা থানা পুলিশ মামলা না নিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে বলেও অভিযোগ করেন শিক্ষকরা।
শিক্ষকরা আরও জানান, ২০০২ সালে কলেজটি এমপিওভুক্ত হয়। বর্তমানে কলেজটিতে ১২ জন এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মরত আছেন। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবৎ বাড়ির মালিক ডা. শারমিন এমপিওভুক্ত এ কলেজটি উচ্ছেদ করে ভবনটি একটি ডেভলপার কোম্পানির কাছে হস্তান্তর করতে চাইছিলেন। পরে আদালত থেকে উচ্ছেদের একটি স্থগিতাদেশ নিয়ে কলেজটি পরিচালনা করছেন শিক্ষকরা। কলেজের ভবন ভাড়াসহ যাবতীয় খরচও তারাই পরিশোধ করেন। বাড়ির মালিকের সাথে সখ্যতা থাকায় অধ্যক্ষ ফেরদৌসী নাজনীন কলেজটি বন্ধ করে দিতে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড আবেদন করেন।
শিক্ষকরা আরও অভিযোগ করেন, বোর্ড থেকে জ্যেষ্ঠ শিক্ষক ইসফাত জাহান কলেজ পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়। বোর্ড অ্যাডহক কমিটি গঠনের অনুমতি নিয়ে ইসফাত জাহান কলেজ পরিচালনা শুরু করায় ক্ষিপ্ত হন অধ্যক্ষ। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে গত ১২ জানুয়ারি বাড়ির মালিক ডা. শারমিনের সাথে গোপন সমঝোতায় উচ্ছেদের কোনো নোটিশ না দিয়ে কলেজে ভাংচুর চালানো হয়।
শিক্ষকরা জানান, কলেজ অধ্যক্ষ ফেরদৌসী নাজনীন কলেজে আসেন না। তিনি প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাৎ, প্রতিমাসে শিক্ষকদের এমপিওর বেতন থেকে ভবন ভাড়া বাবদ আড়াই হাজার টাকা করে কেটে রাখা, গত ডিসেম্বর মাসের ভাড়া পরিশোধ না করা এবং শিক্ষকদের ডিসেম্বর মাসের বেতন উত্তোলন করে তাদের বুঝিয়ে না দেয়াসহ বেশ কিছু অভিযোগও করেন শিক্ষকরা।
শিক্ষকরা বলেন, বিদায়ী অধ্যক্ষ ফেরদৌসী নাজনীনসহ কয়েকজনের ষড়যন্ত্রে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির যোগ্য হলেও কারো নাম মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয় না। সংবাদ সম্মেলনে কলেজটিকে বাঁচাতে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন শিক্ষকরা। সংবাদ সম্মেলনে কলেজের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রভাষক ইসফাত জাহানসহ ১২ জন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।