২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০:০০

ঢাকা কলেজের জীর্ণশীর্ণ হল থেকে মুক্তি চান শিক্ষার্থীরা

ঢাকা কলেজের বেশির ভাগ হলের বেহাল অবস্থা  © সম্পাদিত

দীর্ঘদিন পর ঢাকা কলেজের ছাত্রাবাস খুললেও বেশির ভাগ হল বেহাল অবস্থায় রয়েছে। কোনো কক্ষের দরজা-জানালা ভাঙা, আবার কোনো কোনো কক্ষে নেই বৈদ্যুতিক সংযোগ। আছে খাট ও টেবিলের অপ্রতুলতা। ফ্যান, লাইটবিহীন অবস্থায় রয়েছে বেশ কিছু সংখ্যক কক্ষ। এতে ছাত্রাবাসে সিট পেলেও হলে থাকতে পারছেন না অনেক শিক্ষার্থী।

শিক্ষার্থীরা ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর হলের পরিবেশ যেমন প্রত্যাশা করেছেন, তেমন পরিবেশ পাননি বলে অভিযোগ করেছেন তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, কলেজের দক্ষিণ ছাত্রাবাসের ১০৩ ও ১০৪ নম্বর কক্ষ পুরোপুরি আসবাবপত্র ও বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছে। দক্ষিণ ও উত্তর ছাত্রাবাসের নিচতলায় বেশির ভাগ দরজা-জানালার অবস্থা জরাজীর্ণ। ২০১৬ সালে সিটি করপোশনের থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ছাত্রাবাসের দোতলা ভবনের অবস্থা ভয়াবহ ও আশঙ্কাজনক। যেকোনো সময় ছাদের পলেস্তারা বা ছাদ ভেঙে পড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সিট বরাদ্দ পাওয়া শিক্ষার্থীরা।

আরও পড়ুন: নিয়োগ পরীক্ষার ফি থেকে কত টাকা পায় পিএসসি?

ফরহাদ ছাত্রাবাসের ২০৫ নং কক্ষে বৃষ্টি হলেই পানি চুইয়ে রুমের ভেতরে প্রবেশ করে। এ ছাড়া আটটি ছাত্রাবাসের সাতটি হলের সামনে ময়লার স্তূপ জমে আছে। পানি জমে আছে ছাত্রাবাসগুলোর সামনের ড্রেনগুলোতে। হলের এমন বেহাল দশায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।

কবরে আছেন বলে নিজের কাছে মনে হচ্ছে দক্ষিণ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী হিমেলের। ভোগান্তির বিষয়টাকে এভাবে তুলনা করে তিনি বলেন, এখানে কোনো বিদ্যুতের সংযোগ নেই। আমাদের রুমে বিদ্যুতের তারগুলো ঝুলে আছে, যা আমাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। আমাদের রুমে যে চৌকি আছে, তাতে একজন থাকতে পারবে। চৌকি দিয়েছে সিঙ্গেল, আমরা এখান দুজন কীভাবে ঘুমাবো? এত সমস্যা নিয়ে কীভাবে আমরা থাকবো? আমাদের দাবি, কলেজ প্রশাসন খুব দ্রুত আমাদের সমস্যাগুলো সমাধান করে দেবে।

আরও পড়ুন: ‘মব জাস্টিসের’ বিরুদ্ধে ইবিতে মবের মুল্লুক অনুষ্ঠিত

দ্রুত হল সংস্কার চেয়ে দক্ষিণ ছাত্রাবাসে সিট বরাদ্দ পাওয়া আরেক শিক্ষার্থী আমানুল্লাহ আমান বলেন, কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম মোটামুটি সুষ্ঠুভাবে চললেও হলগুলো জীর্ণশীর্ণ হয়ে আছে। হলে বেশির ভাগ রুমে নেই কোনো লাইট, নেই ফ্যান; ওয়াশরুমগুলো অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব চললেও হলের পাশে ময়লা জমে আছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধেও হল কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এ কারণে হলে সিট পেলেও আমরা হলে অবস্থান করতে পারছি না।

একাদশ শ্রেণির ২৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. সিহাব উদ্দীন খান ঢাকা কলেজ উত্তর ছাত্রাবাসের তৃতীয় তলায় থাকেন। নানা অভিযোগ করে তিনি বলেন, হলে আমাদের তিন তলায় কোনো সিলিং ফ্যান নেই। কিছু রুমে লাইটের আলোয় ভালো করে দেখা যায় না। দুই সপ্তাহ পর একবার বাথরুম পরিষ্কার করে, না করলে দুর্গন্ধ বের হয়। বাথরুমে পানি আটকে থাকে। পুরনো খাট, তাও আবার ভাঙা, পড়ার চেয়ার-টেবিলের সংকট তো রয়েছেই। শুনেছি হলের ট্যাংকির ঢাকনা খোলা। সেটাও ঠিক করার কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।

আরও পড়ুন: ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের কড়া প্রতিবাদ বাংলাদেশের

এ বিষয়ে দক্ষিণ হলের প্রভোস্ট আনোয়ার মাহমুদ বলেন, আমরা ছাত্রদের কল্যাণে কাজ করছি। আমাদের আরও সময় দিতে হবে। প্রতিটি রুমে একটি করে ফ্যান দেওয়া হয়েছে আজ। বিদ্যুতের কাজগুলো আমরা করে দেবো কিন্তু সেটা রুমের দরজা পর্যন্ত। রুমের ভেতরের কাজগুলো ছাত্রদের করে নিতে হবে। রুমের জানালা ভাঙা, দরজা ভাঙা, এসব অভিযোগ ঠিক আছে। আমরা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে এগুলো করে দেবো। ছাত্রদের ধৈর্য ধরার অনুরোধ করছি।

হল সংস্কারের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস বলেন, আমাদের কলেজের যেসব সম্পদ বা সক্ষমতা আছে, সেগুলো আমি জমা রাখতে চাই না। ঢাকা কলেজ শিক্ষক ও ছত্ররা বৈষম্যের শিকার। শিক্ষার্থীদের জন্য হল সংস্কারের বিষয়ে আমাদের সর্বোচ্চ ফোরামে কথা বলবো যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কার কাজ করা যায়।