১৭ মাসেই হচ্ছে এইচএসসি, বৈষম্য বলছেন শিক্ষার্থীরা
এইচএসসি, মাদ্রাসা ও কারিগরি পরীক্ষা পেছাতে বিগত কয়েক মাস থেকে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন, মানববন্ধন, অনশন এবং সর্বশেষ গতকাল (২৫ জুন) প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন। অপরদিকে পূর্বঘোষিত তারিখ থেকে পরীক্ষা শুরু করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বোর্ডগুলো অনড় মনোভাবে প্রকাশ করে আসছে। যদিও শিক্ষার্থীরা এইচএসসি পরীক্ষা অন্তত দুই মাস পিছিয়ে দেয়ার দাবি করছেন।
শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা পেছানোর পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করে জানান, শিক্ষাব্যবস্থায় উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা দুই বছর মেয়াদি হলেও ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষা হবে স্বাভাবিক সময়ের সাত মাস আগে, অর্থাৎ ১৭ মাস শেষে। ইতোমধ্যে দেশব্যাপী পরীক্ষা পেছাতে বিভিন্ন মানববন্ধনে একই সিলেবাসে ব্যাচ বৈষম্য এবং দ্বিতীয় বর্ষের সিলেবাস অসম্পূর্ণ রেখে নির্বাচনী পরীক্ষা আয়োজনের প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারা।
শিক্ষার্থীরা আরও জানান, এইচএসসি-২৪ ব্যাচের ক্লাস শুরু হয় ২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে। শ্রেণি কার্যক্রম হয় এক বছর। যেখানে একই সিলেবাসে ২২ ও ২৩ ব্যাচ সময় পায় যথাক্রমে ২৪ ও ১৮ মাস। ২৪ ব্যাচ এই সময়টুকু পায়নি। এছাড়াও তীব্র দাবদাহ, লোডশেডিং, ঘূর্ণিঝড়ের মতো কারণে দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। ফলে সময় কম পাওয়ার বিষয়টিকে সুস্পষ্ট বৈষম্য হিসেবে দেখছেন তারা।
নাইমুল ইসলাম নামে ঢাকা বোর্ডের একজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা হলে তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, আমরা সর্বমোট ১৬ থেকে ১৭ মাসের প্রস্ততি নিতে পেরেছি। এত বড় সিলেবাসে পরীক্ষা দিতে হলে এই স্বল্প প্রস্তুতি অপর্যাপ্ত। এর মাঝে বিভিন্ন উৎসব এবং পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। তাই এমন পরিস্থিতিতে পরীক্ষা পেছানো না হলে আমাদের ফলাফলে এর প্রভাব পড়বে। বাকি জীবন আমাদেরই এটা নিয়ে সাফার করতে হবে।
যদিও শিক্ষা বোর্ড সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের সময় কম পাওয়ার যে অভিযোগ সেটি বিবেচনায় নিয়ে সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। কাজেই নতুন করে পরীক্ষা পেছানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। এছাড়াও ৩০ জুন থেকে পরীক্ষা শুরু হওয়ার বিষয়টি অনেক আগেই জানানো হয়েছে।
সিলেবাস সংক্ষিপ্তের বিষয়টি যথাযথ নয় দাবী করে মাহফুজ শান্ত নামে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের একজন শিক্ষার্থী জানান, সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করা হলেও মূলত এটাকে ফুল সিলেবাস বলা চলে। কারণ দুই-একটা সহজ অধ্যায় হয়ত বাদ দিয়েছে। এগুলো শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিকভাবেই বাদ দিয়ে পড়তেন। কাজেই প্রস্ততি একই নিতে হয়েছে। আরেকটি দিক হল ফুল সিলেবাস থাকলে সবগুলো অধ্যায় ভালো করে পড়লে হয়ত পরীক্ষায় উত্তর করা যায়, কিন্তু নামে যখন শর্ট সিলেবাস প্রকাশ করা হয় তখন প্রতিটা অধ্যায়ের খুঁটিনাটি ভালো করে পড়তে হয়, কোন কিছু বাদ দেয়ার সুযোগ নেই। কাজেই সিলেবাস কমিয়ে প্রকৃত কোনো সমাধান হয়নি।
জানা যায়, এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় শর্ট সিলেবাসের আওতায় আইসিটি বিষয়ে ৬টি অধ্যায় থেকে ১টি অধ্যায়, পদার্থ বিজ্ঞান ১ম পত্রে ১০টি অধ্যায় থেকে ২ টি, উচ্চতর গণিত ১ম পত্রে ১০টি অধ্যায় থেকে ৪টি, জীববিজ্ঞান ১ম পত্রে ১২টি অধ্যায় থেকে ৫টি, রসায়নে ৫টি অধ্যায় থেকে ১টি সহ এইচএসসির সম্পূর্ণ সিলেবাস থেকে প্রায় ৩০ শতাংশ কমিয়ে আনা হয়।
শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে পরীক্ষা পেছানোর বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, সিলেট বিভাগের পরীক্ষা ৯ জুলাই থেকে শুরু হবে। বাকি সারাদেশে শুরু হবে ৩০ জুন থেকে। কী হবে না হবে সেটা আমরা পরে দেখব। শিক্ষার্থীদের এমন দাবি ভিত্তিহীন, এটা মানার মত কোন যৌক্তিকতা নাই। বোর্ড এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ৩০ জুন থেকে পরীক্ষা শুরু করতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
এদিকে বন্যা পরিস্থিতিকে বিবেচনায় নিয়ে সিলেট বিভাগের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি), মাদ্রাসা ও কারিগরি পরীক্ষা আগামী ৮ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করা হয় গত ২০ জুন। ফলে এতেও সিলেট বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানান, এ সিদ্ধান্তের ফলে এইচএসসি পরবর্তী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতিতে অন্যদের চেয়ে তারা পিছিয়ে যাবেন।
অমিত মোহন রায় নামে সিলেট বিভাগের একজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমাদের ঘরে পানি না উঠলেও এখনও বাড়ির সামনে হাঁটু পরিমাণ পানি আছে। বন্যার পানি খুব ধীরে নামছে। পরীক্ষা নিয়ে আমার প্রস্ততি ভালোই ছিল। কিন্তু সিলেট বোর্ডের পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়ায় আমরা অন্যদের চেয়ে দেরিতে পরীক্ষা শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রস্ততি শুরু করতে হবে। বোর্ড কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের অনুরোধ হল যদি ২ মাস পরীক্ষা পেছানো সম্ভব না হয় তবুও অন্তত সব বোর্ডে পরীক্ষা যেন একই রুটিনে শুরু এবং শেষ হয়।