ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেলে শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ, পরীক্ষা স্থগিত
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে অবস্থিত স্বনামধন্য বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এরই জেরে মাত্র ১৭ ঘণ্টা আগে এই নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা ‘অনিবার্য কারণবশত’ দেখিয়ে স্থগিত করা হয়েছে। আগামীকাল শুক্রবার (৭ জুন) সকাল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত কলেজের ক্যাম্পাসে এ লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
তবে এর আগে আজ বৃহস্পতিবার (৬ জুন) বিকেল ৪টার দিকে এই পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। অল্প সময়ের মধ্যে পরীক্ষা স্থগিতের খবরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিয়োগ প্রার্থীরা।
এই নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক অনুবিভাগ-২) মো. রবিউল ইসলাম আর সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী শামীম ফরহাদ।
আরও পড়ুন: লটারি ছাড়াও শিক্ষার্থী ভর্তি ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেলে
জানা যায়, ২০২৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর ১৪ বিষয়ের মোট ১৭ জন প্রভাষক এবং একজন কর্মকর্তা নেওয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি স্বাক্ষর করেছিলেন অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী শামীম ফরহাদ।
অভিযোগ রয়েছে, ২৮ ডিসেম্বরের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি হলেও নিজের পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে আবেদনকারীদের বয়স (অনূর্ধ্ব ৩০) ওই বছরের ১ জুলাই থেকে হিসেব করছেন কলেজ অধ্যক্ষ। ফলে বয়স ৬ মাস বাড়িয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ করা হয়েছে। তবে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত সার্ভিস রুলসে সরকারি চাকরির বয়সসীমা ৩০ বছর দেয়া রয়েছে বলে জানা গেছে। তাছাড়া এই নিয়োগ আর্থিক লেনদেন ও পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়নে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী শামীম ফরহাদের বিরুদ্ধে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের অধ্যক্ষ ও নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী শামীম ফরহাদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের কাছে দুর্নীতি অনিয়মের বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেছেন, এগুলো বাহিরের মানুষের রটনা।
পরীক্ষা কেন স্থগিত হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা অনিবার্য কারণবশত হয়েছে। কোনো কারণ নেই। আর এটা স্থগিত করেছে কমিটির আহ্বায়ক তাই তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না।
কলেজের সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, এর আগে কলেজে এ ধরনের নিয়োগে পরীক্ষার দিন সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অথবা সহযোগী অধ্যাপক সশরীরে কলেজে এসে প্রশ্নপত্র করতেন। তারপর পরীক্ষা নিয়ে ডিকোডকৃত খাতাগুলো নিয়ে যেতেন এবং খাতা দেখার পরে তার নেতৃত্বে এক্সটার্নাল হিসেবে তিনি সবকিছু কন্ট্রোল করতেন। কিন্তু এবারের নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ১৭ দিন আগে গত ২২ মে করা হয়েছে। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষককে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে। অনিয়মের আশ্রয় নেওয়ার জন্য অধ্যক্ষের উদ্যোগে এ কাজ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাছাড়া তার বিরুদ্ধে এই নিয়োগে আর্থিক লেনদেন করারও অভিযোগ উঠেছে।
এসব অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের খবরে আগ মুহূর্তে এসে পরীক্ষা স্থগিত করেছেন নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রবিউল ইসলাম। তবে এ বিষয়ে জানতে তার মুঠোফোনে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে, অল্প সময়ের মধ্যে পরীক্ষা স্থগিতের খবরে ক্ষোভ প্রকাশ করে রায়হান খান নামে এক নিয়োগ প্রার্থী ফেসবুকে লিখেছেন, নোটিশ (পরীক্ষা স্থগিতের) দেওয়ার আগে সবকিছু চিন্তা-ভাবনা করে দিতে হয়। ঢাকায় আসতে ৫৫০ টাকার টিকেট কেটেছি, এই টাকা কিভাবে ম্যানেজ করতে হয়েছে সেটা আমার মতো পরিস্থিতিতে যারা আছে তারাই বুঝবে।
আজাদ হোসেন নামে আরেকজন লিখেছেন, আগামীকাল সকাল ৯টায় পরীক্ষা আর স্থগিত হওয়ার মেসেজে দিল আজ বিকেল ৬টায়। আলরেডি ঢাকায় চলে এসেছি, আবার গ্রামে ফিরে যাচ্ছি। বেকারদের সাথে তামাশা চলতে থাকুক।