শিক্ষার্থী সংকটে পড়বে অনেক কলেজ, খালি থাকবে ৮ লাখ আসন
সদ্য এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি আবেদন শুরু হলো আজ রোববার (২৬ মে)। আবেদন চলবে আগামী ১১ জুন পর্যন্ত। এ প্রক্রিয়া শেষেও দেশের কলেজগুলোয় অন্তত ৮ লাখ আসন খালি থাকবে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষার্থী পাবে না অনেক কলেজ। সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে এমন তথ্য জানা গেছে।
এবার একাদশে ভর্তি শেষে ক্লাস শুরু হবে আগামী ৩০ জুলাই। ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির নীতিমালা প্রকাশ করেছে। চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস করা ১৬ লাখ ৭২ হাজার ১৫৩ জন একাদশে ভর্তি হবে।
প্রকাশিত ফলাফল অনুযায়ী, এক লাখ ৮২ হাজার ১৩২ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। পাস করা শিক্ষার্থীদের ভর্তির জন্য দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় একাদশ শ্রেণিতে আসন রয়েছে প্রায় ২৫ লাখ। এসএসসিতে পাস করা সবাই একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হলেও আট লাখ ২৭ হাজারের বেশি আসন ফাঁকা থাকবে। তবে জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করা শিক্ষার্থীদের ভালো কলেজগুলোয় ভর্তির প্রতিযোগিতা থাকবে।
বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্যও বলছে, সারাদেশে একাদশ শ্রেণিতে আসন রয়েছে ২৫ লাখ। এর মধ্যে রাজধানীতেই রয়েছে ৫ লাখের বেশি আসন। এবার মাধ্যমিকে ১১টি বোর্ড মিলে পাস করেছে ১৬ লাখ ৭২ হাজার ১৫৩ জন। সে হিসাবেও অন্তত আট লাখের বেশি আসন খালি থেকে যাবে।
এক লাখ ৮২ হাজার ১৩২ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। পাস করা শিক্ষার্থীদের ভর্তির জন্য দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় একাদশ শ্রেণিতে আসন রয়েছে প্রায় ২৫ লাখ। এসএসসিতে পাস করা সবাই একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হলেও আট লাখ ২৭ হাজারের বেশি আসন ফাঁকা থাকবে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, এবার প্রথম ধাপে ভর্তির জন্য নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হবে ২৩ জুন। ভর্তি নিশ্চায়ন করতে হবে ২৯ জুনের মধ্যে। দ্বিতীয় ধাপে ভর্তি আবেদন শুরু হবে ৩০ জুন থেকে, চলবে ২ জুলাই পর্যন্ত। এ ধাপে আবেদন করা শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ হবে ৪ জুলাই। একইদিন পছন্দক্রম অনুযায়ী প্রথম দফায় নির্বাচিতদের মাইগ্রেশনের ফলও প্রকাশ করা হবে। দ্বিতীয় ধাপে ভর্তির জন্য নির্বাচিত শিক্ষার্থী ভর্তি নিশ্চয়ন শুরু হবে ৫ জুলাই থেকে, চলবে ৮ জুলাই পর্যন্ত।
একাদশ শ্রেণিতে তৃতীয় ধাপে ভর্তি আবেদন শুরু হবে ৯ জুলাই, চলবে ১০ জুলাই পর্যন্ত। দ্বিতীয় ধাপের মাইগ্রেশন এবং তৃতীয় ধাপের ফল ১২ জুলাই প্রকাশিত হবে। তৃতীয় ধাপের ভর্তি নিশ্চায়ন করতে হবে ১৩ থেকে ১৪ জুলাইয়ের মধ্যে। সব ধাপে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ভর্তি শুরু হবে ১৫ জুলাই থেকে। এ কার্যক্রম চলবে ১০ দিন। ২৫ জুলাই একাদশ শ্রেণির ভর্তি শেষ হবে। আর একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হবে আগামী ৩০ জুলাই।
একাদশে ভর্তির বিষয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেছিলেন, এবার ২৫ লাখ আসন থাকলেও পাস করেছে ১৬ লাখ ৭২ হাজার। সে হিসেবে ৮ লাখের বেশি আসন খালি থাকবে। ভালো কলেজগুলোয় ভর্তির প্রতিযোগিতা হবে।
জানা গেছে, দেশে মানসম্পন্ন ও ভালো কলেজ হিসেবে বিবেচিত প্রতিষ্ঠান আছে সংখ্যা দু’শতাধিক। এতে আসন আছে লাখের কাছাকাছি। এসব কলেজেই শিক্ষার্থীদের ভর্তির আগ্রহ বেশি থাকবে। তবে মেধাবী শিক্ষার্থীদের বড় অংশের আগ্রহ থাকে রাজধানীর দিকে। ঢাকায় মানসম্পন্ন কলেজের সংখ্যা ২৫ থেকে ৩০টি। এগুলো ভর্তিতে তীব্র প্রতিযোগিতা হয়।
এসব কলেজের যাদের স্কুল সংযুক্ত রয়েছে, তারা তাদের নিজস্ব শিক্ষার্থী আগে ভর্তি নেবে। এরপর বাকি আসনে বাইরের শিক্ষার্থী ভর্তি করবে। ফলে রাজধানীর ভালো কলেজে ৩০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর ভর্তির সুযোগ নেই। অথচ জিপিএ-৫ পাওয়া এক লাখ ৮২ হাজার শিক্ষার্থীর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতেই থাকবে রাজধানীর নামী কলেজ।
আরো পড়ুন: আজ থেকে শুরু একাদশে ভর্তি আবেদন
এবার ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৮৩ দশমিক ৯২ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৪৯ হাজার ১৯০ জন। বোর্ডের অধীন এবার পরীক্ষার্থী ছিল, চার লাখ সাত হাজার ৯৬১ জন। এর মধ্যে তিন লাখ ৪২ হাজার ৩৭৯ জন পাস করেছে। তারাও সবাই ঢাকার ভালো কলেজে ভর্তির চেষ্টা করবেন।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার শীর্ষ কলেজগুলোর মধ্যে নটর ডেম কলেজে আসন আছে তিন হাজার ২৭০টি। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে দু’হাজার ৩৭৬ ও হলি ক্রস কলেজে এক হাজার ৩৩০টি আসন রয়েছে। রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে এক হাজার ৭০৪, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজে দু’হাজার ২০০, ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে এক হাজার ১৪, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে এক হাজার ১৬৫ ও বিএএফ শাহীন কলেজে এক হাজার ২২০টি আসন আছে।
এ ছাড়া ঢাকা কলেজে এক হাজার ২০০, বাংলাদেশ নেভি কলেজে ৯৫০, ঢাকা সিটি কলেজে তিন হাজার ৭৬২, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ পাবলিক কলেজে এক হাজার ৯৮০, শহীদ বীর উত্তম লে. আনোয়ার গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে এক হাজার ১২০, ঢাকা কমার্স কলেজে চার হাজার ৭০০ ও শহীদ পুলিশ স্মৃতি কলেজে ৮৮০টি আসন রয়েছে। এর বাইরে ঢাকার বেশ কয়েকটি মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির তীব্র প্রতিযোগিতা হয়।