সহকারী লাইব্রেরীয়ান নেন উচ্চমাধ্যমিকের আইসিটি ক্লাস
সাভারের তেঁতুলঝোড়া কলেজের সহকারী লাইব্রেরীয়ানকে দিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের ক্লাস নেওয়া হচ্ছে দীর্ঘ প্রায় এক যুগ ধরে। এতে শিক্ষার্থীরা আইসিটি বিষয়ে সঠিক জ্ঞান অর্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, ২০১৩ সালে তেঁতুলঝোড়া কলেজের অর্থনীতি ও বাণিজ্যিক ভূগোল বিষয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান আতোয়ার রহমান। ২০১৩ সাল থেকে কলেজের আইসিটি ক্লাস নেওয়া শুরু করেন। প্রতিষ্ঠানটিতে ২০১৮ সালে সহকারী গ্রন্থাগারিক পদে কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ পেয়ে এমপিওভুক্ত হন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মো. আতোয়ার রহমান মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি এবং এইচএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হতে অর্থনীতিতে অনার্স এবং মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। আইসিটি বিষয়ে কোন রকম একাডেমিক ডিগ্রি ছাড়াই উক্ত কলেজে আইসিটি বিষয়ে পাঠদান করছেন তিনি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি বিধি এবং এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী সহকারী গ্রন্থাগারিকদের উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে ক্লাস নেওয়ার সুযোগ নেই। উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যসূচিতে গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান বিষয়টি না থাকলেও আইসিটির মতো বিষয়ে দীর্ঘ প্রায় এক যুগ ধরে ক্লাস নিচ্ছেন আতোয়ার রহমান।
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) নিয়োগ বিধিতে আইসিটি বিষয়ের প্রভাষক হতে হলে শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএসসি ইন কম্পিউটার সায়েন্স ডিগ্রি থাকতে হবে। কোন ধরনের ডিপ্লোমাধারী এ বিষয়ের প্রভাষক হওয়ার জন্য অযোগ্য। এই নিয়মের ফলে ডিপ্লোমাধারীরা আবেদন করতে না পারলেও দিব্যি ক্লাস নিচ্ছেন তেতুলঝোড়া কলেজের আতোয়ার। এর ফলে একদিকে যেমন শিক্ষার্থীরা সঠিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অন্যদিকে চাকরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সিএসই নিয়ে পড়ালেখা করা গ্র্যাজুয়েটরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আইসিটির প্রোগ্রামের অধ্যায়গুলো না পড়িয়ে তত্ত্বীয় সহজ অধ্যায়গুলো রিডিং পড়িয়ে কিংবা গল্প করে বেশিরভাগ সময় পার করেন আতোয়ার রহমান। নিয়মিত ক্লাসেও পাওয়া যায় না তাকে। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ব্যক্তিগত কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তেঁতুলঝোড়া কলেজের এক শিক্ষার্থী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আইসিটি বিষয়টি ব্যবহারিক হলেও তারা মুখস্ত করে আইসিটি পরীক্ষা দিচ্ছেন। আর ব্যবহারিক পরীক্ষার নম্বর নির্ভর করে আতোয়ার স্যারের মর্জির ওপর।
কলেজের একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক দিক থাকায় আইসিটি বিষয়টি তুলনামূলক বেশ কঠিন। আইসিটি বিষয়টি মূলত সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ডের ডিগ্রীধারীরা পাঠদান করে থাকেন। তবে তেঁতুলঝোড়া কলেজে আইসিটি বিষয়ে সনদ বিহীন সহকারী গ্রন্থাগারিক ক্লাস নিচ্ছেন। তাদের অভিযোগ, অধ্যক্ষের সাথে আতাত করে সহকারী লাইব্রেরীয়ান আইসিটি বিষয়ের পাঠদান করছেন। অধ্যক্ষকে ম্যানেজ করে এনটিআরসিএতে শূন্য পদের চাহিদা জমা দেওয়া থেকেও বিরত রাখার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তেঁতুলঝোড়া কলেজের এক সিনিয়র শিক্ষক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, এনটিআরসিএ থেকে আইসিটি বিষয়ের প্রভাষক পদে চূড়ান্ত সুপারিশ না পাওয়া পর্যন্ত সিএসই বিষয়ের ডিগ্রিধারীদের খণ্ডকালীন হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যেত। স্কুলের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন। তবে কলেজে বিষয় ভিত্তিক প্রভাষক থাকার পরও কেন সহকারী লাইব্রেরীয়ানকে দিয়ে ক্লাস নিতে হবে সেটি আমাদের কারো বোধগম্য নয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আতোয়ার রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ক্লাসে ফাঁকি দেওয়ার বিষয়টি ভিত্তিহীন। আমি আইসিটি বিষয়ে ৬ মাসের কোর্স করেছি। শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে পাঠদান দিচ্ছি। কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।
তিনি আরো জানান, কলেজের অধ্যক্ষ আমাকে আইসিটি বিষয়ের ক্লাস নিতে বলেছেন। সেজন্য ক্লাস নিচ্ছি। আমাকে ক্লাস নিতে নিষেধ করলে আমি আর ক্লাস নেব না।
জানতে চাইলে তেতুলঝোড়া কলেজের অধ্যক্ষ ইউনুছ আল মামুন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা আইসিটি শিক্ষক পাচ্ছি না। এনটিআরসিএতে চাহিদা দেওয়া হয়েছে। তবে অজানা কারণে শিক্ষক পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি থেকে সিএসই বিষয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক দেওয়ার চেষ্টা করছি৷ তবে কেউ আসতে চাচ্ছে না।
সহকারী গ্রন্থাগারিককে দিয়ে কলেজের আইসিটি বিষয়ের ক্লাস নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার নিয়োগের আগে থেকেই আতোয়ার রহমান আইসিটির ক্লাস নিচ্ছে। এনটিআরসিএর মাধ্যমে শিক্ষক পেলে এই সমস্যার সমাধান হবে।
এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী আইসিটির প্রভাষক হবেন সিএসই অথবা আইসিটি বিষয়ের সনদধারীরা জানিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এ ধরনের কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।