জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিংয়ে ঢাকা বিভাগের শীর্ষ ১০ কলেজ
স্বাধীনতার ৫২ বছরে এসে দেশে শিক্ষাব্যবস্থায় নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার মান বাড়ছে। উচ্চশিক্ষার মান বৃদ্ধিতে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছে। একইভাবে সারাদেশের কলেজগুলো কৃতিত্বের সঙ্গে নিজেদের অর্জনের জানান দিচ্ছে। প্রতিবছর ধারাবাহিকভাবে সাফল্য পাওয়া অধিভুক্ত এমন কলেজগুলোর র্যাংকিং প্রকাশ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
২০২২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ ২ হাজার ২৫৭টি এফিলিয়েটেড কলেজের র্যাংকিং প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান এই তালিকা ঘোষণা করেন। র্যাংকিং অনুযায়ী ঢাকা বিভাগে শীর্ষে থাকা ১০টি কলেজের মধ্যে রয়েছে- ঢাকা কমার্স কলেজ, তেজগাঁও কলেজ, লালমাটিয়া মহিলা কলেজ, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ, সিদ্ধেশ্বরী কলেজ, সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ, সরকারি সা’দত কলেজ, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ, সরকারি তোলারাম কলেজ।
১. ঢাকা কমার্স কলেজ
প্রথম অবস্থানে থাকা ঢাকা কমার্স কলেজ রাজধানী ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত একটি উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতকোত্তর কলেজ। ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এটি ঢাকা মহানগরীর প্রথম কলেজ, যা বাণিজ্য বিশেষায়িত। অধ্যাপক কাজী নুরুল ইসলাম ফারুকী এই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা। প্রশাসনিক কার্যক্রম চালানোর জন্য কলেজটিতে ১১ ও ১২ তলা বিশিষ্ট ২টি সুবৃহৎ ভবন রয়েছে। এর মধ্যে ৫০ কক্ষ বিশিষ্ট একটি ১১তলা ভবন এবং ৭০ কক্ষ বিশিষ্ট ১২তলা ভবন রয়েছে। ১১ অনুষদের অধীনে এই কলেজে বর্তমান প্রায় ৬৬০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। এছাড়া রয়েছে ১১২ জন শিক্ষক এখানে পাঠদান করছেন। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. আবু মাসুদ ও চেয়ারম্যান প্রফেসর শফিক আহমেদ সিদ্দিকী।
২. তেজগাঁও কলেজ
ঢাকার ফার্মগেটে অবস্থিত তেজগাঁও কলেজ রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। কলেজটির স্থাপনকাল ১৯৬১ সাল। এই কলেজটি নিজস্ব একটি আটতলা ভবন (বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান প্রফেশনাল ভবন), তিনটি সাততলা, একটি ছয়তলা ও দুটি চারতলা বিশিষ্ট ভবনে তার শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, কলা এবং ব্যবসায় শিক্ষা ও প্রফেশনাল কোর্সের ২৯টি আলাদা আলাদা বিষয়ে উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষা পরিচালনা করে আসছে তেজগাঁও কলেজ। কলেজটির বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. হারুন-অর-রশিদ। বেশ সাফল্যের সাথে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করছে এই কলেজের ৪৫০ জন শিক্ষক।
৩. লালমাটিয়া মহিলা কলেজ
১৯৬৬ সালে মাত্র ২৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ১২ বিঘা জমির ওপর যাত্রা শুরু করে লালমাটিয়া মহিলা কলেজ; যা সর্বশেষ প্রকাশিত র্যাঙ্কিংয়ে ঢাকা বিভাগে তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছে। কলেজের এক স্মরণিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, এই কলেজ লালমাটিয়া কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়। সোসাইটির টাকা, নিজেদের ব্যক্তিগত সংগ্রহ এবং বিত্তবান ব্যক্তিদের সহায়তায় কলেজটি দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে ১১টি অনুষদের অধীনে এই কলেজে প্রায় সাত হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন ১৩১ জন।
৪. আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ
ঢাকা সেনানিবাস এলাকায় অবস্থিত স্বনামধন্য উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ রয়েছে এই তালিকার চতুর্থ অবস্থানে। প্রায় ১০ একর জায়গার উপর স্থাপিত এই কলেজ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত। ইংল্যান্ডের আদি পাবলিক স্কুল 'ইটন' ও 'হ্যারো' এর আদর্শে এটি ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। মূলত সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সন্তানদের জন্য হলেও বেসামরিক ব্যক্তিবর্গের সন্তানরাও এতে পড়াশোনা করতে পারে।
আরও পড়ুন: এইচএসসিতে ঝরে পড়েছে ৫ লাখের বেশি শিক্ষার্থী
এই কলেজে একটি প্রশাসনিক ভবন, একটি বিজ্ঞান ভবন, একটি গ্রন্থাগার ভবন, একটি বিবিএ ভবন, একটি মাস্টার্স ভবন, একটি খেলার মাঠ, একটি মসজিদ, একটি বাগান, একটি ক্যাফেটেরিয়া, একটি শহীদ মিনার ও একটি মঞ্চ (শহীদ রুমী মঞ্চ) রয়েছে। ৬৫০০ শিক্ষার্থীর এই কলেজে প্রশাসনিক দায়িত্বে ১০৪ জনসহ রয়েছে ১০০ জন স্থায়ী ও ১৬ জন অস্থায়ী শিক্ষক। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে।
৫. হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ
পঞ্চম অবস্থানে থাকা হাবীবুল্লাহ্ বাহার কলেজ ঢাকার শান্তিনগরে অবস্থিত। সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রী মরহুম হাবিবুল্লাহ্ বাহারের স্ত্রী আনোয়ারা বাহার চৌধুরী ১৯৬৯ সালে এই কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে এই কলেজে উচ্চ-মাধ্যমিক (বিজ্ঞান, মানবিক, ও ব্যবসায় শিক্ষা), স্নাতক (পাস) কোর্স, ২৩ টি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান), ৯টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর কোর্স এবং কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশলসহ মোট ৪টি বিষয়ে প্রফেশনাল সম্মান কোর্স চালু আছে। কলেজটি এক একর ভূমির উপর অবস্থিত। বর্তমানে ৫টি ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে এই কলেজ। এতে বর্তমান অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রফেসর রাকিবুল হাসান।
৬. সিদ্ধেশ্বরী কলেজ
ঐতিহ্যবাহী সিদ্ধেশ্বরী কলেজ রয়েছে এই তালিকার ৬ষ্ঠ অবস্থানে। ঢাকা মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র রমনা থানার অধীনে শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়কে অবস্থিত এই প্রতিষ্ঠান ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৭০ সালে এই কলেজ ঢাকা শিক্ষাবোর্ড ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়ে দিবা শাখাতে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজটিতে বর্তমানে ১৭টি বিষয়ে অনার্স কোর্স, ২ টি বিষয়ে প্রফেশনাল কোর্স, ১টি বিষয়ে ডিপ্লোমা কোর্স, ১১টি বিষয়ে মাস্টার্স শেষ পর্ব এবং ৭টি বিষয়ে প্রিলিমিনারি টু মাস্টার্স কোর্স চালু রয়েছে। এতে ডিগ্রি (পাস) কোর্সে বিএ, বিএসএস ও বিবিএস শ্রেণিতে পাঠদান করা হয়। ঢাকা বোর্ডের অধীনে মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় আসন সংখ্যা ৭০০টি ।
৭. সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ
১৯৬৬ সালে ২.৬০ একর জমির উপর স্থাপিত হয় এই কলেজ ঢাকা বিভাগের র্যাঙ্কিংয়ে সপ্তম অবস্থানে রয়েছে। বর্তমানে এই গার্লস কলেজে মোট ১৬টি অনুষদের অধীনে ৬১৮৫ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে প্রায় ১২১জন শিক্ষক।
৮. সরকারি সা’দত কলেজ
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করটিয়ায় অবস্থিত সরকারি সা’দত কলেজ ঢাকা বিভাগের অষ্টম অবস্থানে রয়েছে। ১৯২৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান অবিভক্ত বাংলায় মুসলমানদের প্রতিষ্ঠিত প্রথম কলেজ। এই কলেজে ১৮টি বিষয়ে অনার্স ও ১২টি বিষয়ে মাষ্টার্স কোর্স চালু আছে। বর্তমানে এই কলেজে প্রায় ১২০ জন শিক্ষক ও ৩০,০০০ জন শিক্ষার্থী অনার্স (সম্মান) এবং পাস কোর্স সহ মাষ্টার্সে অধ্যয়নরত রয়েছে। ৩৮ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এই কলেজ জন্ম লগ্ন থেকেই বাংলাদেশের শিক্ষা উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক অনন্য অবদান রেখে চলেছে।
৯. সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ
দক্ষিণ বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ ১৯১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়; যা ঢাকা বিভাগের কলেজ সমূহের মধ্যে নবম স্থানে অবস্থান করছে। ফরিদপুর জেলায় অবস্থিত এই কলেজের মূল ক্যাম্পাস শাখা পদ্মা নদীর পশ্চিম প্রান্তে মোট প্রায় ৫৪.০১ একর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে।
এছাড়া ফরিদপুর স্টেডিয়াম এর পাশে অবস্থিত আরেকটি ক্যাম্পাস অবস্থিত। ২টি ক্যাম্পাসে বিভক্ত এ কলেজের একটিকে ডিগ্রী শাখা বা শহর শাখা এবং অন্যটিকে অনার্স শাখা বা বায়তুল-আমান শাখা বলা হয়ে থাকে। ১৯৭১-১৯৭২ সালে কলেজটি প্রথম ৬ টি বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স চালু করে। বর্তমানে ১৯ টি বিষয় অনার্স ও মাস্টার্স চালু রয়েছে এই কলেজে। কলেজটির বর্তমান অধ্যক্ষ প্ৰফেসর শ্রী অসীম কুমার সাহা।
১০. সরকারি তোলারাম কলেজ
১৯৩৭ সালে নারায়ণগঞ্জে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি তোলারাম কলেজ ঢাকা বিভাগের শীর্ষ ১০ এর একটি কলেজ। বর্তমানে এতে ১৪টি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু আছে। কলেজটিতে রয়েছে প্রায় দু'শতাধিক শিক্ষক এবং শতাধিক প্রশাসনিক লোকবল। নারায়ণগঞ্জের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ খগেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী এই কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ছিলেন। প্রতিষ্ঠালগ্নে তিনি মাত্র পাঁচ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ক্লাস শুরু করেছিলেন। বর্তমানে এই কলেজের শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। কলেজটির বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর অধ্যাপক বেলা রানী সিংহ।
প্রতিবছর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় করা র্যাঙ্কিংয়ে কলেজ সমূহের অগ্রগতি রয়েছে উল্লেখ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, অধীনস্থ কলেজসমূহ নিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২৫৭টি এফিলিয়েটেড কলেজের অবস্থান অনুযায়ী তালিকা করা হয়। কলেজসমূহের তথ্য সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট কিছু ছক ধরে এই র্যাঙ্কিং নির্ধারণ করা হয়। বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের করা র্যাঙ্কিংই শুধু র্যাঙ্কিংয়ে নয়, আমাদের কলেজসমূহের পজিশনও কিছু ক্রাইটেরিয়া পূরণ করে হয়।
কলেজ র্যাঙ্কিং ছাড়াও মডেল কলেজ নামের আরেকটি প্রোগ্রাম রয়েছে বলে জানিয়েছেন ড. মশিউর রহমান। তিনি জানান, নির্দিষ্ট কয়েকটি ক্রাইটেরিয়া ধরে আমরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মডেল কলেজ তালিকা তৈরি করি। শুরুতে আমরা কলেজসমূহের অগ্রগতি দেখে ফ্রি মডেল কলেজ তালিকা তৈরি করি এবং মডেল কলেজ রূপ পেতে ওইসব কলেজের যেসব ঘাটতি রয়েছে তা দেখিয়ে দেই। এতে কিছু কলেজ নিয়মিতই ভালো করছে।