নামের মিল থাকায় কলেজছাত্র কারাগারে, প্রকৃত আসামি বাইরে
ধর্ষণ মামলার আসামির বাবার নামের সঙ্গে মিল থাকায় কারাভোগ করছেন আল-আমিন নামের এক কলেজছাত্র। ভুক্তভোগী আল-আমিনের পরিবার কর্তৃক হাইকোর্টের নজরে আনলে ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। হাইকোর্ট রুল জারি করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
বুধবার (৭ জুন) বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন। ধর্ষণের ঘটনায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আলমগীর হোসেনের পরিবর্তে আল-আমিনের গ্রেফতার কেন বেআইনি ও আইনগত কর্তৃত্ব-বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে হাইকোর্ট।
স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), রংপুরের ডেপুটি কমিশনার, পুলিশ সুপার (এসপি), গঙ্গাচড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও রংপুরের জ্যেষ্ঠ জেল সুপারকে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আইনজীবী মুহাম্মদ শিশির মনির আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ২০১৫ সালে রংপুরে গঙ্গাচড়া উপজেলায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণে এক কিশোরীর মৃত্যুর ঘটনায় ২০২২ সালের ২৪ নভেম্বর রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের বিচারক মো. রোকনুজ্জামান পাঁচ আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দেন।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলো- গঙ্গাচড়া উপজেলার নরসিংহ মর্ণেয়া গ্রামের আবুজার রহমান (২৮), আলমগীর হোসেন (২৭), নাজির হোসেন (৩২), আবদুল করিম (২৯) ও আমিনুর রহমান (২৯)। তাদের মধ্যে আলমগীর পলাতক।
গত ১৮ মার্চ রাতে রংপুরের সিও বাজার মসজিদ ছাত্রাবাস থেকে আল আমিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তিনি গঙ্গাচড়া উপজেলার হাজির পাড়া গ্রামের মো. আব্দুল হান্নানের ছেলে। সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি আলমগীর একই উপজেলার নরসিংহ মর্নেয়া গ্রামের মো. হান্নানের ছেলে।
ঘটনার সময় ২০১৫ সালে আল-আমিন স্কুলে পড়তেন। জন্ম সনদ অনুযায়ী তার জন্ম ২০০০ সালের ২০ জানুয়ারি। তিনি ২০১১ সালে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা (পিএসসি), ২০১৫ সালে জেএসসি, ২০১৮ সালে এসএসসি, ২০০০ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হন আদিতমারী সরকারি কলেজে। বর্তমানে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আল-আমিন।
গত ৩০ মার্চ আল-আমিনকে কারাগারে পাঠানোর পর তার ভাই আলী হোসাইন ন্যায়বিচারের জন্য রংপুর পুলিশ সুপার বরাবর একটি আবেদন করেন। এতে কোনো সাড়া না পেয়ে গত ২৮ মে আল আমিনের পক্ষে হাইকোর্টে আবেদন করেন আলী হোসাইন। আবেদনের শুনানি শেষে আদালত পিবিআইকে ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ঘটনার দিন ২০১৫ সালের ১৪ মে লালমনিরহাটে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যান ভুক্তভোগী কিশোরীর বাবা ও মা। এসময় ওই কিশোরী ও তার ভাগনে বাড়িতে একা ছিল। এ সুযোগে আবুজার সহযোগীদের নিয়ে সন্ধ্যায় ওই কিশোরীর বাড়িতে যান এবং তাকে কৌশলে ডেকে নিয়ে পাশের একটি খেতে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। পরে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে তাকে হত্যা করে পালিয়ে যান আসামিরা।
রাতে কিশোরীর বাবা-মা বাড়িতে ফিরে মেয়েকে না পেয়ে সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে। পরের দিন সকালে বাড়ির অদূরে একটি ধানক্ষেত থেকে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে। পরে কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে গঙ্গাচড়া থানায় হত্যা মামলা করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গঙ্গাচড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তৌহিদুল ইসলাম তদন্ত শেষে আবুজারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেন। প্রায় সাত বছর আদালতে বিচারকাজ চলার পর ১০ জনের সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে ২০২২ সালের ২৪ নভেম্বর পাঁচ আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড ও ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করে রায় দেন রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মো. রোকনুজ্জামান।