প্রশ্নপত্রে সাম্প্রদায়িক উসকানি: প্রশ্ন প্রণেতা ও যাচাইকারীরা চিহ্নিত
চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বাংলা প্রথম পত্রের যে প্রশ্নে সাম্প্রদায়িক উসকানির অভিযোগ উঠেছে সেটি করেছেন ঝিনাইদহের ডা: সাইফুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক প্রশান্ত কুমার পাল। তিনি কলেজটির বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। যশোর শিক্ষা বোর্ড থেকে এই প্রশ্নটি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড।
আরও পড়ুন: ‘কুমিল্লা বোর্ডের প্রশ্নপত্রে’ সাম্প্রদায়িক উসকানি ছিল না
তাছাড়া ওই প্রশ্নপত্র পরিশোধনে (যাচাইকারী) ছিলেন যশোর শিক্ষা বোর্ডের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৪ জন শিক্ষক। তারা হলেন- নড়াইলের ভিক্টোরিয়া কলেজের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ তাজউদ্দিন শাউন, সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মো. শফিকুর রহমান, নড়াইলের মির্জাটুর ইউনাইটেড কলেজের সহকারী অধ্যাপক শ্যামল কুমার ঘোষ এবং কুষ্টিয়া ভেড়ামারা আদর্শ কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম।
এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকারবলেন, প্রশ্নপত্র প্রণয়নকারী ও যাচাইকারীদের চিহ্নিত করা গেছে। তারা যশোর শিক্ষা বোর্ডের অধীন কলেজ শিক্ষক।
চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা গত রবিবার (৬ নভেম্বর) থেকে শুরু হয়েছে। এ বছর পরীক্ষায় ২ হাজার ৬৪৯টি কেন্দ্রে ৯ হাজার ১৮১ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ১২ লাখ ৩ হাজার ৪০৭ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে ৬ লাখ ২২ হাজার ৭৯৬ জন ছাত্র এবং ৫ লাখ ৮০ হাজার ৬১১ জন ছাত্রী।
মোট ১১টি শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এদিন বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই পত্রের ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ‘সাম্প্রদায়িক উসকানি’ দেওয়া নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই এ ঘটনার নিয়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।
এই প্রশ্নপত্রের সৃজনশীয় অংশের ১১ নম্বর প্রশ্নে নাটক সিরাজউদ্দৌলা অংশে অনুচ্ছেদে ধর্মকে সামনাসামনি করে উদ্দীপকে বলা হয়, ‘নেপাল ও গোপাল দুই ভাই। জমি নিয়ে বিরোধ তাদের দীর্ঘদিন। অনেক সালিশ-বিচার করেও কেউ তাদের বিরোধ মেটাতে পারেনি। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। এখন জমির ভাগ বণ্টন নিয়ে মামলা চলছে আদালতে। ছোট ভাই নেপাল বড় ভাইকে শায়েস্তা করতে আব্দুল নামে এক মুসলমানের কাছে ভিটের জমির এক অংশ বিক্রি করে। আব্দুল সেখানে বাড়ি বানিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। কোরবানির ঈদে সে নেপালের বাড়ির সামনে গরু কোরবানি দেয়। এই ঘটনায় নেপালের মন ভেঙ্গে যায়। কিছুদিন পর কাউকে কিছু না বলে জমি-জায়গা ফেলে সপরিবারে ভারতে চলে যায় সে।’
এরপর প্রশ্ন করা হয়েছে-“(ক) মিরজাফর কোন দেশ হতে ভারত আসেন। (খ) ঘরের লোক অবিশ্বাসী হলে বাইরের লোকের পক্ষে সবই সম্ভব।-ব্যাখ্যা কর। (গ) উদ্দীপকের ‘নেপাল’ চরিত্রের সঙ্গে ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকের ‘মিরজাফর’ চরিত্রের তুলনা কর। (ঘ) ‘খাল কেটে কুমির আনা’-প্রবাদটি উদ্দীপক ও ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটক উভয় ক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রযোজ্য।-উক্তিটির সার্থকতা নিরূপণ কর।” সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তরের জন্য উদ্দীপকে অনেক প্রাসঙ্গিক উদাহরণ টানা যেত। কিন্তু এখানে সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে প্রশ্ন প্রণয়ন করা হয়েছে।