অনলাইন ভর্তি পরীক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের সামনে যত চ্যালেঞ্জ
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে চলতি বছর পরীক্ষার মাধ্যমেই শিক্ষার্থী ভর্তি করবে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তবে পরীক্ষা অনলাইনে না সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমে হবে সে বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি। উপাচার্যদের মতে, করোনা পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে অনলাইনেই ভর্তি পরীক্ষা নিতে হবে। তবে ভর্তি পরীক্ষা অনলাইনে হলে বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে।
চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল ১৩ লাখ ৬৫ হাজারের বেশি। তাদের এই পরীক্ষা না হওয়ায় সবাই এবার উত্তীর্ণ হচ্ছেন। বর্তমানে দেশে ৪৬টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স প্রথম বর্ষে আসন সংখ্যা ৬০ হাজারের মতো। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা এক লাখ। সরকারী কলেজগুলোতে আসন সংখ্যা ১২ লাখের মতো। এবার সব শিক্ষার্থীই উচ্চশিক্ষায় ভর্তির সুযোগ পাবেন।
তাদের ভর্তির বিষয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, ‘পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। এখন এ পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে আরো আলোচনা হবে। এখন তো স্বাভাবিক সময় নয়, তাই চ্যালেঞ্জ তো থাকবেই। এর মধ্য দিয়ে কাজ করতে হবে।’
কবে ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানতে চাইলে রফিকুল আলম বলেন, ‘এটি নির্ভর করছে এইচএসসির ফল কবে প্রকাশ করা হবে তার ওপর। এ বিষয়ে আগামী মাসে আরেকটি সভা করা হবে।’ ডয়েচে ভেলেকে এসব কথা বলেছেন তিনি। গণমাধ্যমটি অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করেছে।
এদিকে অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা কীভাবে হতে পারে সে বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুনাজ আহমেদ নূর বলেন, ‘আমরা একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছি। ইতোমধ্যে এর পরীক্ষা-নিরীক্ষাও হয়েছে। উপাচার্যরাও সফটওয়্যার দেখে ইতিবাচক মত দিয়েছেন।’
তিনি বলছেন, ‘সফটওয়্যারটি ব্যবহার করতে হলে পরীক্ষার্থীকে সার্বক্ষণিক অনলাইনে থাকতে হবে না। শুধুমাত্র শুরুর ১০ মিনিট ও শেষের ১০ মিনিট অনলাইনে থাকলেই হবে। এমনকি বিদ্যুৎ না থাকলেও কোন সমস্যা হবে না। সফটওয়্যারটি যখন চালু হবে তখন ডিভাইসের অন্য সবকিছু সয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। অফলাইনে থাকলেও নির্দিষ্ট সময় পর পর ছবি উঠতে থাকবে। অডিও রেকর্ড হতে থাকবে, যা ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সার্ভারে চলে আসবে। তখন পরীক্ষকরা এগুলো দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন।’
এ বিষয়ে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাটের বাসিন্দা জাকারিরা হোসেন বলেন, ‘আমার ছেলে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। কিন্তু পরীক্ষাটা তো হলো না। এখন শুনছি অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা হবে। এটা আমাদের জন্য খুবই কঠিন। এখানে মোবাইল ফোনেই ঠিকমতো কথা বলা যায় না। তাহলে ইন্টারনেট পাবো কোথায়? এই পরিস্থিতিতে আমার ছেলেটা ভালো কোথাও কীভাবে চান্স পাবে তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা চাই, সরাসরি ভর্তি পরীক্ষা হোক৷ কষ্ট করে হলেও আমরা যাব। ছেলে চান্স পাক আর না পাক, আমাদের মানসিক সান্ত্বনা থাকবে।’
রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা সাহেরা বেগম বলেন, ‘আমার দুই মেয়ে এবার বিএন কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। তারা খুব কষ্ট করে দারুণ প্রস্তুতি নিয়েছিল। এটা তো স্বাভাবিক সময় নয়৷ ফলে যারা এটা করছেন তারা নিশ্চয় ভালো বুঝেই করছেন। কিন্তু পরীক্ষাটা ঠিকমতো হলেই ভালো। তবে আমি মনে করি এভাবে পরীক্ষা না নিয়ে সরাসরি ভাইভার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করার কথা তারা চিন্তা করতে পারেন। সবকিছু মিলিয়ে মেয়েদের ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’
অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা হলে গ্রামের শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়বে কীনা জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘যে সফটওয়্যারের কথা বলা হচ্ছে, সেটা যদি ঠিকঠাক থাকে তাহলে তো পিছিয়ে পড়ার কারণ নেই। একজন শিক্ষার্থীর কত জায়গায় গিয়ে পরীক্ষা দিতে হতো? অভিভাবকদের সেই খরচটা কিন্তু বেঁচে যাচ্ছে। তাহলে তারা একটু কষ্ট করে যেখানে ইন্টারনেট আছে, তেমন জায়গায় গেলেই তো পারেন। আসলে এই পরিস্থিতিতে বিষয়টিকে নেতিবাচকভাবে না দেখে ইতিবাচকভাবেই দেখা উচিত।’
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শিরিন আখতার বলেন, ‘কোন কিছুই চূড়ান্ত নয়। আর আমরা তো স্বাধীনভাবে কোন সিদ্ধান্ত নেই না। ঢাকা, রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত নেবে আমরাও তাই নেব। আমরা তো এখন পুরোমাত্রায় অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছি। কিন্তু পরীক্ষা নিতে পারছি না। ধরুন লিখিত পরীক্ষা অনলাইনে নিলাম, ব্যবহারিক পরীক্ষা কীভাবে নেব? ফলে এখন চূড়ান্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠকের পর আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারব।’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন অর রশিদ বলেন, কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়কে গুচ্ছে ভাগ করে ভর্তি পরীক্ষা হবে। তবে সবকিছু চূড়ান্ত হবে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে। ভর্তি পরীক্ষাটি হবে এমসিকিউ প্রশ্নের ভিত্তিতে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কোন পরীক্ষা নেবে না। এসএসসি ও এইচএসসির ফলাফলের উপর ভিত্তি করেই কলেজগুলোতে ভর্তি করবো।