অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা চান না শিক্ষার্থীরা

লোগো
লোগো  © ফাইল ফটো

দেশে চলমান করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপাচার্যদের সংগঠন ‘বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ’। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদন পেলে এই পদ্ধতিতেই পরীক্ষা নিতে চান উপাচার্যরা। তবে ভাইস চ্যান্সেলরদের এমন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে অনলাইনে যেখানে ক্লাসই ঠিক মতো নেয়া হয় না, সেখানে ভর্তি নেয়াটা দিবালোকের স্বপ্নের মতো। ভার্চুয়াল মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষার সাথে আমরা কেউই পরিচিত না। এছাড়া অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হলে প্রশ্ন ফাঁসের একটা সম্ভাবনাও থেকে যায়। এ অবস্থায় অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া উচিত হবে না।

এ বিষয়ে শিশির ওয়াহিদ নামে এক শিক্ষার্থী জানান, অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত ঠিক হয়নি। যেখানে সামান্য একটা অনলাইন কুইজে অংশগ্রহণ করতে গেলে ওয়েবসাইটের সার্ভার ডাউন হয়ে যায়, সেখানে সফটওয়্যার দিয়ে কেমনে সুষ্ঠু ভাবে পরীক্ষা নেবে? তাও আবার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা!

ওবাইদ আহমেদ নামে আরেক শিক্ষার্থী জানান, অনলাইন ক্লাসেই আমরা নেটওয়ার্ক দুর্বলতায় ক্লান্ত। বিরক্তির চরম পর্যায়ে ক্লাসই বাদ দিতে হয়। সেখানে পরীক্ষার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যতকে আস্তাকুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলা হবে।

হাফিজ আল আসাদ বলেন, অধিকাংশ শিক্ষার্থীর অনলাইনে পরীক্ষা দেয়ার মত ডিভাইস নেই তাদের কি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার অধিকার নেই! আর যারা অনলাইনে পরীক্ষা দিবে তারা কি নিজেরা পরীক্ষা দিবে?

এদিকে অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা না নেয়ার দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ইতোমধ্যেই একটি গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে। এই গ্রুপে প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী যুক্ত হয়েছেন। গ্রুপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা না নেয়ার দাবিতে ঐক্যমত তৈরি করছেন।

ওই গ্রুপের একজন এডমিন নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ভর্তি পরীক্ষা অনলাইনে নেয়ার যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তা মোটেও সুখকর সংবাদ নয়। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা, যেখানে শিক্ষার্থীরা সর্বোচ্চ মেধা যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে স্বচ্ছতার সাথে তাদের স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায়, সেখানে অনলাইনে এই পরীক্ষা নেয়া হলে পরীক্ষায় স্বচ্ছতার প্রশ্ন সবসময়ই থাকবে, যা মেনে নেয়া যায় না। এছাড়া এভাবে এত গুরুত্বপূর্ণ একটা পরীক্ষা নেয়া হলে, অনেক শিক্ষার্থী তাদের ভাগ্যের কাছে হেরে যাবে বলে আমরা মনে করি। তাই অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে যে, প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে তা পুনর্বিবেচনা করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নির্দিষ্ট সময়ে সশরীরে পরীক্ষা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।

এর আগে শনিবার সন্ধ্যায় সফটওয়্যার ব্যবহার করে অনলাইনের মাধ্যমে চলতি বছর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় উপাচার্যরা। বৈঠকে বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুনাজ নূরের উদ্ভাবিত ‘‘প্রোটেক্টেড রিমোট এক্সামিনেশন’’ নামক সফটওয়্যার ব্যবহার করে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। প্রাথমিক প্রদর্শনীতে সফটওয়্যার নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ভিসিরা।

বৈঠকে অংশ নেওয়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বৈঠকে অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুনাজ নূরের উদ্ভাবিত সফটওয়্যার ব্যবহারের প্রস্তাব এসেছে। এ প্রস্তাবে সবাই প্রশংসা করেছেন। এখন এই প্রস্তাবটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হবে। সেখানে তারা যাচাই-বাচাই করবে।

তিনি বলেন, আমরা আশা করছি, সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে এ বছরের স্নাতক ভর্তি পরীক্ষা অনলাইনে নেওয়া সম্ভব হবে। আর সেটি হবে সমন্বিতভাবে, অর্থাৎ সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ