কেটে দেয়া হল ৫০ হাজার ক্যাবল লাইন, অনলাইন ক্লাসে ভোগান্তি
সড়কের ওপর ঝুঁকিপূর্ণভাবে ঝুলে থাকা অবৈধ ইন্টারনেট ও ডিস ক্যাবল অপসারণ করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। পরিচ্ছন্ন নগরী গড়তে এ অভিযান চালানো হচ্ছে। তবে ক্যাবল ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কমপক্ষে ৫০ হাজার গ্রাহকের ইন্টারনেট ও ডিস সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এতে ওই এলাকার শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
এছাড়া অভিযানে অন্তত চার কোটি টাকার ক্যাবল নষ্ট হয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। তবে সিটি করপোরেশন বলছে, পরিচ্ছন্ন নগর গড়তেই এই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। গত ৩০ জুলাই এক সপ্তাহের মধ্যে নগরীর অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ ক্যাবল অপসারণ করার ঘোষণা দেন মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। এ ঘোষণার পর গত বুধবার থেকে ক্যাবলের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়।
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, ‘মাটির ওপরে ক্যাবল রাখতে চাই না আমরা। কিন্তু যারা কাজটি করছেন, তারা সঠিকভাবে করেনি। দেড় থেকে দুই কিলোমিটারের মধ্যে আন্ডারগ্রাইন্ড ডিস্ট্রিবিউশন পয়েন্ট রাখা হয়েছে। সেখান থেকে সংযোগ নিয়ে প্রতিটি বাড়িতে দেওয়া হলে আবারও তা মাটির ওপরে চলে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আন্ডারগ্রাউন্ড লাইনে বাসা-বাড়ির সামনে ডিস্ট্রিবিউশন পয়েন্ট রাখতে। তাহলে আর কোনও বৈদ্যুতির পোলে নির্ভর করতে হবে না। কিন্তু যারা দায়িত্বটি নিয়েছেন, তারা তা করতে পারছেন না। উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতে হলে ৫৬ শতাংশ মানুষের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশে আছে ৭-৮ শতাংশ। ইন্টারনেটের দাম কমিয়ে গ্রাহকের সংখ্যা বাড়াতে বলা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের সঙ্গে এমন আচরণ করা হলে আমরা সেটা কীভাবে করবো?’
ডিএসসিসির ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ধানমন্ডি, ফুলবাড়িয়া ও গুলিস্তান এলাকায় অন্ত চার কোটি টাকার ক্যাবল কাটা হয়। এতে ৫০ হাজারের মতো সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। হঠাৎ এমন অভিযানে দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয়রা। বিষয়টি জানিয়ে মেয়রের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন ইন্টারনেট ও ডিস ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, এভাবে ক্যাবল লাইন কেটে দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। অনেকে মোবাইল অপারেটরের ডাটা প্যাক কিনে এ ধরনের ক্লাস করছে।
এ নিয়ে নিজের ভোগান্তির কথা জানিয়ে শনচিতা সিতু নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এই ৫০ হাজার মানুষের ইন্টারনেট যে নাই, তাদের বাচ্চারা অনলাইনে ক্লাস করবে কীভাবে।? কি সিদ্ধান্ত? এইটাকে আসলে কি বলা উচিৎ? দ্বৈত আচরণ? নাকি সাধারণ মানুষের ভোগান্তিতেই আনন্দ?’
বাংলাদেশ ইন্টারনেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেন আনু বলেন, ‘অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। করোনাকালে যেখানে সবাই বাসায় বসে অফিস করছেন, শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেটে ক্লাস করছে, সেখানে বিনা নোটিশে এভাবে ক্যাবল কেটে দেওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন সবাই। বর্তমানে করোনার কারণে ক্যাবল সংকট। কিন্তু হঠাৎ এতো টাকার ক্যাবল ধ্বংস করে দেওয়ায় বাজারেও কোনও ক্যাবল পাওয়া যাচ্ছে না। আর ব্যবসায়ীরা এতো টাকা কোথায় পাবে?’
ক্যাবল অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) সভাপতি এস এম আনোয়ার পারভেজ বলেন, ‘মাটির নিচে ফাইবার অপটিক ক্যাবল স্থানান্তরে যে দুটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা পূর্ণ সাপোর্ট দিতে পারছে না। অনেক স্থানে সড়কের ওপর ইলেক্ট্রিক পোলের ওপর দিয়ে লাইন নিয়েছে। ফি কী হবে তাও নির্ধারণ করছে না। শুধু ডিস ব্যবসায়ীদের এক থেকে দেড় কোটি টাকার ক্যাবল নষ্ট হয়েছে। ৩০ হাজার গ্রাহক ডিস লাইন বিচ্ছিন্ন। করোনাকালে অনেক ব্যবসায়ীর নতুন করে ইনভেস্ট করা কঠিন।’
এ ব্যাপারে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. এমদাদুল হক বলেন, ‘মেয়রের নির্বাচনী ইশতেহার ছিল পরিচ্ছন্ন শহর।ক্যাবল তারগুলো শহরকে নোংরা করছে। সে কারণে পরিচ্ছন্ন শহর গড়তে এই উদ্যোগ নিয়েছি। তাছাড়া এতারগুলো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ঝুলে আছে। এর সঙ্গে বিদ্যুতের সংযোগও রয়েছে। যে কোনও মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ক্যাবল ব্যবসায়ীরা সড়ক ও পোল ব্যবহারের জন্য ফি দেয় না। সে কারণে মেয়র এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’