চীনে আটকেপড়া শিক্ষার্থীদের দেশে না ফেরার অনুরোধ (ভিডিও)
এই মুহূর্তে দেশে ফিরে দেশকে বিপদে না ফেলার জন্য চীনে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সে দেশে অধ্যয়নরত সিলেটের শিক্ষার্থী শবনম জেবি। বুধবার ফেসবুক লাইভে এসে এ আহ্বান জানান। তিনি চীনের হোজোউ শহরের হোজোউ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। শবনম জেবি সিলেটের নাট্যসংগঠন ‘একদল ফিনিক্সের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে আতঙ্কে রয়েছেন চীনে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা। এদের অনেকেই দেশে ফিরতে চাচ্ছেন।
এ অবস্থায় বুধবার ফেসবুক লাইভে এসে শবনম জেবি বলেন, আমি জেনেছি চায়নায় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের অনেকে দেশে ফেরার চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ টিকিটও কিনে ফেলেছেন। তবে সবার প্রতি অনুরোধ, এই মুহূর্তে দেশে ফিরবেন না। এখানেই থাকুন। এখানে ভালো চিকিৎসা পাবেন।আপাতত দেশে গিয়ে দেশকে ও নিজের পরিবারকে বিপদে ফেলবেন না। যারা দেশে যেতে চাচ্ছেন তাদের দ্বিতীয়বার ভাবার অনুরোধ জানান জেবি।
লাইভের শুরুতে শবনম বলেন, চায়নার বর্তমান পরিস্থিতি কি সবাই জানেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের সুরক্ষিত রাথার সবধরনের চেষ্টা চালাচ্ছে। হোজোউ সিটির সাথে অন্য শহরগুলোর যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকসহ সব ফটক বন্ধ। গত তিনদিন ধরে আমরা ডরমিটরিতে প্রায় বন্দি অবস্থায় আছি। কেউ ডরমিটরির বাইরে না যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাবাসিক শিক্ষার্থীদেরও ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই আমাদের খাবার দিচ্ছে। অন্যান্য চাহিদাও তারা মেটাচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশি যারা চায়নাতে আছেন, যারা বাংলাদেশে যেতে চাচ্ছেন, তাদের উদ্দেশ্যেই কথাগুলো বলা, তবে কারো সিদ্ধান্তকে পরিবর্তন করা আমার উদ্দেশ্য হয়।
চীনে মহামারি আকার ধারণ করা এই ভাইরাস সম্পর্কে শবনম বলেন, এই ভাইরাসটি মানুষের হাঁচি থেকে ছড়াচ্ছে। কেউ আক্রান্ত একজনের পাশে গেলেও আক্রান্ত হয়ে যেতে পারে। আর এর লক্ষণগুলো সাধারণ ফ্লুর মতো। এই লক্ষণগুলো ধরা পড়তে ৭ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত সময় লাগে। ফলে আমার শরীরে লক্ষণগুলো প্রকাশ পাওয়ার আগেই আমি অন্যদের আক্রান্ত করে ফেলতে পারি।
বাংলাদেশের অবস্থা উল্লেখ করে এই তরুণী বলেন, ২০১৯ সালে বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে অনেকে আক্রান্ত হয়। সরকারি হিসেবেই এতে কয়েকশ মানুষ মারা গেছে। এই সংখ্যা আরও বেশিও হতে পারে। ডেঙ্গু যদি আমাদের এতোটা আক্রান্ত করতে পারে, আর এই ভাইরাসটা অতি সম্প্রতি ধরা পড়েছে, যা সামাল দিতে চায়নার মতো দেশ হিমশিম খাচ্ছে, যেখানে এক সপ্তাহের মধ্যে এক হাজার আসনের একটি হাসপাতাল বানিয়ে নিচ্ছে এই রোগীদের সামাল দেওয়ার জন্য, তখন আমাদের দেশে এই ভাইরাস ছড়ালে কী ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি হবে তা সহজেই অনুমেয়। আর আমাদের বাংলাদেশ এই ভাইরাস মোকাবেলার জন্য এখনও তৈরি নয়। এরমধ্যে আমি যেটা জানি বাংলাদেশেরর মাত্র দুইটা হাসপাতাল এটার জন্য তৈরি রাখা হয়েছে। তাও শুধু ঢাকাতে। কিন্তু চায়নাতে যে বাংলাদেশিরা আছেন, তারা কিন্তু শুধু ঢাকার নন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের। তারা যখন দেশে ফিরবেন, তখন তারা তাদের পরিবারের কাছে যাবেন। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, আমাদের নিরাপত্তার জন্য চায়না সরকার সবসময় মাস্ক ও গ্লাভস ব্যবহার করতে বলছে, জনবহুল জায়গা এড়িয়ে চলতে বলছে। দেশে গেলে আমরা হয়ত তা মানবো না। তখন অন্যরা আক্রান্ত হওয়া ঝুঁকি থেকে যায়।
শবনম বলেন, অনেকেই দেখছি দেশে যেতে চাচ্ছেন। অনেকে দেখলাম টিকিটও কিনে ফেলছেন। আমরা কিন্তু না বুঝে নিজের দেশকে, নিজের পরিবার, আত্মীয় স্বজনদের বিপদে ফেলছি। কারণ হচ্ছে- আমি জানি আমি এই মুহূর্তে সুস্থ আছি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রতিদিন আমাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছে। কিন্তু যাওয়ার সময় বাসে বা বিমানেও যদি একজন আক্রান্ত মানুষ থাকেন, তার মাধ্যমেও আমি আক্রান্ত হতে পারি। আবার আক্রান্ত হওয়ার পর আমি কিন্তু সাথে সাথে তা বুঝতে পারছি না। …আজকে আমি গেলাম আবার পরিবারে, তখন পরিবারের সবাই কিন্তু আমাকে আন্তরিকভাবে অভ্যর্থনা জানাবে। কোলাকুলি করবে। এতে এই ভাইরাস আমি আমার পরিবারে ছড়িয়ে দিতে পারি।
তিনি বলেন, আমরা যদি ১০০জন মানুষ দেশে যাই, এরমধ্যে যদি ৩/৪জন মানুষও আক্রান্ত হন, তাহলেই কিন্তু দেশে অনেক বড় বিপর্যয় নিয়ে আসবো। আমাদের দেশের জন্য, পরিবারের জন্য বিপদ নিয়ে আসবো।
এই শিক্ষার্থী বলেন, আমারও কিন্তু ভয় হচ্ছে। আমারও প্রতিদিন মনে হচ্ছে বাংলাদেশে চলে যাই। পরিবারের সাথে থাকি। কিন্তু ভাবতে হবে, আমরা যে মানুষগুলোকে ভালোবাসি, আমাদের পরিবার বাবা-মা বন্ধুবান্ধব, নিজের অজান্তেই কিন্তু নিজের পরিবার, বন্ধুবান্ধব, সর্বোপরি নিজের দেশকে হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারি। চীন চেষ্টা করছে এই ভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরি করতে। আক্রান্ত হলে এখানে উন্নত চিকিৎসা পাবো। কিন্তু বাংলাদেশে যাওয়ার সময় যদি আক্রান্ত হই। তবে দেশের মানুষকে আক্রান্ত করবো। তারা উন্নত চিকিৎসাও পাবো না।
শবনম বলেন, আমি নিজেও খুব ভয় পাচ্ছি। তবু সাহস নিয়ে থাকার চেষ্টা করছি। আজকে এখানে আমি বিপদে আছি। সেটা বাংলাদেশে থাকাকালীন সময়েও আসতে পারতো। তাই সবার প্রতি অনুরোধ, সাহস নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিন। যে ভালোবাসার মানুষের জন্য দেশে যেতে চাচ্ছেন তাদের বিপদে ফেলে দেবেন না। দেশকে বিপদে ফেলবেন না।
প্রসঙ্গত, চীনে মরণঘাতী করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত ১৩২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ছয় হাজার।
বুধবার দেশটির ন্যাশনাল হেলথ কমিশন এ তথ্য জানিয়েছে।
চীনের গণমাধ্যম সিনহুয়ায় এক বিশেষজ্ঞের বরাতে বলা হয়েছে, আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা সর্বোচ্চ আকার ধারণ করতে পারে। চীন ছাড়াও ১৭টি দেশের ৭১ জন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে গবেষণাগারে করোনা ভাইরাস তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। একে করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারের পথে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন তারা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন এ ভাইরাসের নাম দিয়েছে ২০১৯ নভেল করোনা ভাইরাস। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে চীনে সফর করেছেন এমন লোকজনের মাধ্যমেই এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। সে কারণে অনেক দেশই এ ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে চীন সফরে নাগরিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা এনেছে।