জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন চাই
মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও সম্মান শ্রেণির গণ্ডি পেরিয়ে গ্রাজুয়েশন শেষ করার পর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পায় সমাবর্তন। কিন্তু তা থেকে বঞ্চিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অথচ অন্যদিকে দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পায় সমাবর্তন। কিন্তু তা থেকে বঞ্চিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
একজন শিক্ষার্থীর সমাবর্তনের কথা মনে পড়লে পড়নে কালো গাউন এবং মাথায় কালো টুপি পড়ে এক ফালি হাসি দিয়ে ছবি তোলার দৃশ্যটি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের সময়ের এ দৃশ্য আজীবন স্মৃতির পাতায় থাকে। সকল শিক্ষার্থীদের লালিত একটাই স্বপ্ন থাকে গ্রাজুয়েশন শেষ কর সমাবর্তন পাওয়া। এই সমাবর্তনটি শুধুমাত্র গাউন আর টুপি পড়ে ছবি তুলা নয় এর সাথে অনেক সম্মান এবং গর্বও জড়িত। কিন্তু খুবই দুঃখজনক হলেও সত্যি, এ ধরনের সম্মান শুধু দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতেই দেখা যায়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এর থেকে বঞ্চিত।
এক সমীক্ষায় দেখা যায়- প্রতি বছর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন কলেজ থেকে প্রায় ৪ লাখ শিক্ষার্থী স্নাতক সম্পন্ন করে থাকেন। স্নাতক সম্পন্ন করার পর তাদের হাতে শুধু মাত্র একটি কাগজের সার্টিফিকেট ধরিয়ে দেওয়া হয়, কোন সমাবর্তনা দেওয়া হয় না। অথচ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতিবছর অথবা এক দুই বছর অন্তর অন্তর সমাবর্তনা দেওয়া হয়ে থাকে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে এটা এখন পর্যন্ত স্বপ্নই হয়ে আছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন থেকে বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা তাদের ন্যায্য অধিকার আদায় করার জন্য "জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ঐক্য পরিষদ" গঠন করা হয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় তারা ‘ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন চাই’ নামক ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে সমাবর্তনা পাওয়ার অধিকার সারা বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্রছাত্রীর মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছে। তাদের লক্ষ্য, সারা বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একতার মাধ্যমে তাদের ন্যায্য অধিকার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের কাছে পৌছানো। সমাবর্তন সহ আরো ৬ দফা দাবি বাস্তবায়ন চায় শিক্ষার্থীরা :-
১. প্রতিবছর নিয়মতান্ত্রিক ভাবে সমাবর্তন আয়োজন করতে হবে ৷
২. কলেজগুলোতে সরকার নির্ধারিত ফি এর বেশি আদায় করা যাবে না।
৩. সকল বিভাগে প্রতি বর্ষেই ১টি করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক কোর্স রাখতে হবে ।
৪. কলেজ গুলোতে গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা বাধ্যতামূলক করতে হবে ।
৫. নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরীক্ষার উত্তরপত্র যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে হবে ।
৬. কলেজ গুলোকে শুধু সনদ প্রাপ্তির কেন্দ্র না করে সংস্কারের মাধ্যমে কর্মমুখী শিক্ষা পদ্ধতি চালু করতে হবে।
দাবি নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা বর্তমানে ফেসবুকে এবং "জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন চাই" গ্রুপ পেইজের মাধ্যমে প্রচার চালিয়ে একতাবদ্ধ হওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। স্নাতক শেষ করে সমাবর্তন পাওয়া সকল ছাত্রছাত্রীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা উল্লেখযোগ্য বলে মনে করছেন বিভিন্ন শিক্ষাবিদরা।
যদিও এর আগে প্রতিষ্ঠার আড়াই দশক পর, ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম সমাবর্তন অনুষ্ঠান। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে হওয়া এ সমাবর্তনায় নানা ভোগান্তিও বিরাজমান ছিল। সমাবর্তনার দিন দেওয়া হয়নি কোন সার্টিফিকেট। ছিল না ভাল কোন ব্যবস্থাপনা। সমাবর্তন পাওয়া সকল স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার। অথচ লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে প্রথম সমাবর্তনাতে গুটি কয়েকজন শিক্ষার্থী পেয়েছিলেন সমাবর্তন।