হাবিপ্রবিতে প্রশাসনিক অস্থিরতা: ব্যানার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে মুখোমুখি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) চলমান প্রশাসনিক অস্থিরতা নতুন মাত্রা পেয়েছে ব্যানার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মুখোমুখি অবস্থানের ঘটনায়। পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, শারীরিক লাঞ্ছনা ও ক্ষোভ প্রকাশের মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
গত ৯ জুলাই থেকে হাবিপ্রবির কর্মকর্তারা রেজিস্ট্রারসহ প্রশাসনিক পদে শিক্ষকের পরিবর্তে সিনিয়র কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে নিয়োগের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছেন। তাদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী এসব পদে কর্মকর্তাদের নিয়োগ হওয়া উচিত। তারা অভিযোগ করেন, অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকরা প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ত থাকায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস, পরীক্ষা ও গবেষণায় বিঘ্ন ঘটছে।
১০ আগস্ট বেলা দুইটা থেকে তিনটার মধ্যে অফিসার্স ফোরামের কর্মসূচির সময় প্রশাসনিক ভবনের সিঁড়িতে ব্যানার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ ওঠে মো. সাইফুল ইসলামের (মালি, রেজিস্ট্রার কার্যালয়) বিরুদ্ধে। সিনিয়র নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো. মজিবর রহমানের উপস্থিতিতে তাকে চিহ্নিত করা হয় এবং কর্মকর্তারা তাকে প্রশাসনের কাছে নিয়ে যেতে চাইলে মো. জিল্লুর রহমান (অফিস সহায়ক) নেতৃত্বে কয়েকজন কর্মচারী বাধা দেন ও অশালীন ভাষা ব্যবহার করেন। অফিসার্স ফোরামের অভিযোগ, মো. একরামুল হকসহ কয়েকজন কর্মকর্তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয় এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
একই ঘটনার পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় শনিবার (১২ আগস্ট) জাতীয়তাবাদী কর্মচারী পরিষদের কর্মচারীরা ১১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মো. জিল্লুর রহমান ও মো. সাইফুল ইসলামকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ এনে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। তাদের দাবি, ৭ কার্যদিবসের মধ্যে সুষ্ঠু তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
আরও পড়ুন: এক ভাইভা নিয়ে এনটিআরসিএর ২০ কর্মকর্তার আয় দেড় কোটি টাকা
এদিকে ব্যানার সরিয়ে ফেলার কথা স্বীকার করে রেজিস্ট্রার অফিসের মালি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যানার থাকলেও কর্মকর্তারা সেখানে আন্দোলন করছিলেন না। সবাই নিজ নিজ অফিসে ছিলেন। তাদের কর্মবিরতির ফলে আমাদের অনেক অফিসিয়াল কাজ পোস্টিং সব আটকে আছে। এদিকে তারা তাদের প্রয়োজনমতো কর্মবিরতি পালন করছেন, আবার কাজ করছেন। এ ক্ষোভ থেকেই আমি ব্যানার সরিয়েছি। এর জন্য আমি দুঃখিত, কিন্তু তারা আমার গায়ে হাত দিয়েছে, আমাকে টানাহেঁচড়া করেছেন। আমি যদি কোনো অন্যায় করি প্রশাসনিকভাবে আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ ও আমাকে হেনস্তা কেন করবেন। আমার গায়ে হাত তোলা ও আমাকে হেনস্তা করার বিচার চাই।’
জাতীয়তাবাদী কর্মচারী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আবদুল হাকিম লেবু বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম না। পরবর্তী সময়ে জানতে পারি আমাদের একজন কর্মচারী সাইফুল ইসলাম একটি ব্যানার সরিয়ে ফেলেছেন। এ জন্য কর্মকর্তারা তাকে টেনেহিঁচড়ে উপাচার্য মহোদয়ের অফিসে নিয়ে যাচ্ছিলেন এবং মারধরের কথাও শুনেছি। আমাদের আরেক কর্মচারী জিল্লু তাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেছে, তাকেও অবজ্ঞা করা হয়েছে। কর্মকর্তারা শিক্ষিত মানুষ, তাদের কাছ থেকে এমন আচরণ আমরা প্রত্যাশা করি না। আমরা কম শিক্ষিত, ভুলভ্রান্তি হতেই পারে। সাইফুলকে শাস্তি দেওয়ার আগে প্রশাসনের সিদ্ধান্ত দেখার সুযোগ ছিল। কিন্তু তা না করে আমাদের কর্মচারীকে মারধর করা হয়েছে। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং প্রশাসনের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করছি।’
আরও পড়ুন: ২০১৯-এ ছাত্রলীগের প্যানেলের নির্বাচিত হল জিএস এবার ডাকসুর ভিপি পদপ্রার্থী
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. শামছুজ্জোহা বলেন, ‘কর্মকর্তারা শান্তিপূর্ণভাবেই তাদের দাবি আদায়ের আন্দোলন করছে। আন্দোলনের মধ্যেও তারা প্রশাসনিক এবং একাডেমিক কাজের ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে না। কর্মচারীরা ব্যানার ছিঁড়ে কাজটি ঠিক করেনি। কর্মকর্তারা তো তাদের বস, তাদের সঙ্গে কর্মচারীদের খারাপ ব্যবহার মোটেও কাম্য নয়। আমি কোনো কর্মচারীকে মারতে দেখিনি, উল্টো কর্মচারীরাই কর্মকর্তাদের ধাক্কাধাক্কি করেছে।’