রবিউল তুমি অন্ধ না, অন্ধ আমরা: আসিফ নজরুলের স্ট্যাটাস
ডাকসুর পুনর্নির্বাচনের দাবিতে অনশনে অংশ নেওয়ার ‘অপরাধে’ মারধরের শিকার হয়েছেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম। অন্ধ হওয়াতে রবিউল হামলাকারীকে চিনতে পারেনি। জানা যায়, গত ১২ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে অনশনে বসেন চার শিক্ষার্থী, যাদের তিনজন ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন। অনশনের দ্বিতীয় দিনে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন আরও দুই শিক্ষার্থী। পরে ১৪ মার্চ অনশনে যোগ দেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম। অনশনের চতুর্থ দিনের মাথায় নির্বাচনে অনিয়মের সুষ্ঠু তদন্তের প্রতিশ্রুতিতে অনশন ভাঙেন রবিউলসহ অন্যরা। যদিও অনশন ভাঙলেও দুবৃত্তের হাত থেকে রক্ষায় পায়নি রবিউল।
তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে লিখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পাঠকদের জন্য স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো-
স্যার, আমি রবিউল
বলো বাবা!
স্যার ডাকসু ইলেকশন করবো।
কি বলো তুমি! কেন?
করবো স্যার। আমাদের অধিকার আছে না।
আছে বাবা। কিন্তু করলে বাম সংগঠন থেকে করো। না হলে কোটাদের সাথে।
দেখি স্যার। তারা না দিলে?
না দিলে করো না।একা একা কি করতে পারবে?
না স্যার করবো। আপনি দোয়া করেন।
রবিউল ইসলাম অন্ধ ছাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। জানিনা সে ডাকসু নির্বাচন করছিল কিনা।এতো ভীড়ে কি রবিউল আর খবর হয় কোথাও! নির্বাচনে কারচুপি হলো নানারকম। পুনরায় নির্বাচনের দাবীতে অনশন করলো কিছু ছাত্র। সেখানে থেকেও কি খবর হয়েছিল রবিউল? জানিনা।
রবিউল অবশ্য খবর হয়েছে অবশেষে। শুধুমাত্র অনশন করার শাস্তি হিসেবে তাকে কিলঘুষি মেরেছে এক নরাধম। চোখে আলো নেই, অন্ধ রবিউল চিনতেও পারেনি কে মেরেছে তাকে। কাপুরুষটার সাহস হয়নি অন্য কাউকে মারতে, মেরেছে শুধু অন্ধ রবিউলকে।
আমার খুব ইচ্ছে হয় চোখ বেধে বসি অপরাজেয় বাংলায়। চিৎকার করে বলি: কেমন দেশ এটা? কেমন জাতির বিবেক আমার এই বিশ্ববিদ্যালয়। বসি না। হতাশা আর অক্ষমতার ক্লান্তি অবশ করে রাখে আমাকে, আমাদেরকে।
রবিউল ক্ষমা করো পারলে। অন্ধ তোমার বিবেক আছে, আছে সাহস। আমাদের কিছু নাই। তোমার প্রভোষ্ট-এর বিবেক নাই, তোমার ভিসির বিবেক নাই, তোমার ডাকসুরও কারো বিবেক নাই । আমারও নাই, আমাদের প্রায় কারো নাই।
আমরা অন্ধ, তুমি না।যে অমানুষ তোমাকে মেরেছে, যারা এই আদেশ দিয়েছে তারা জানে তা।
কিন্তু রবিউল এদেশটা এমন ছিল না। এমন থাকবেও না হয়তো একদিন।
আমরা সবাই যেন ধ্বংস হয়ে যাই। কিন্তু সেদিনের জন্য বেচে থাকো বাবা। শুধু তুমি আর তোমার মতো অনন্ত নক্ষত্রের আলোরা।
পড়ুন:অনশন করায় মারধর, হামলাকারীকে চিনলো না অন্ধ রবিউল