ঢাবিতে গেস্টরুম, চাপাতি ও ডালের নামে পানি উৎসব!
‘গেস্টরুম নির্যাতন’, ‘নারী নিপীড়ন’, ‘হেলমেট বাহিনী’, ‘ম্যানার শেখানো’, ‘শিক্ষককে হেনস্তা’, ‘ক্যাম্পাসে টিয়ারশেল’, ‘ডালের নামে পানি’, ‘রড-চাপাতি-হাতুড়ি’, ‘ভাইদের প্রটোকল’। নামগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে বেশ পরিচিত শব্দ। এর অধিকাংশই ব্যবহার হয় ছাত্র রাজনীতিসহ বিভিন্ন পর্যায়ে। তবে এবার এটি ব্যবহার হচ্ছে একটু ভিন্নভাবে। প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) চত্বরে চলছে অভিনব এক উৎসব। এর নামকরণ করা হয়েছে ‘ময়লা উৎসব’। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ময়লা পরিষ্কার করে কয়েকটি ডাস্টবিনে ফেলা হচ্ছে। রাতের বেলা তা পুড়িয়ে ফেলা হয়। তবে ময়লা যেসব ডাস্টবিনে জমা করা হচ্ছে সেগুলোর নাম বেশ অভিনব। ওপরের শব্দগুলোই ডাস্টবিনের নাম হিসেবে দেওয়া হয়েছে। এগুলো অধিকাংশই ঢাবি শিক্ষার্থীদের জন্য বেশ কষ্টকর অভিজ্ঞতার কারণ। ফলে এগুলো ডাস্টবিনের নামকরণ করায় তা প্রতিবাদের ভাষা বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব ডাস্টবিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনিয়মের নামে নামকরণ করেছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়মগুলো ডাস্টবিনে ভস্মীভূত করাই তাদের উদ্দেশ্য। যা গত বৃহস্পতিবার থেকে টিএসসি চত্বরে শুরু হয়ে চলবে ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। অনিয়মের মধ্যে ছাত্রাবাসের অতিথিকক্ষে নির্যাতন আর ক্যান্টিনের নিম্নমানের খাবারের সঙ্গে থাকা নিতান্ত অনিচ্ছায় বড়ভাইদের কথার বাধ্যবাধকতা। এ পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন চান শিক্ষার্থীরা।
অভিনব এই প্রতীকী প্রতিবাদ নিয়ে হাজির হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী। ইতিমধ্যে এ উদ্যোগে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিচ্ছেন অনেক শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আদনান আজিজ, মার্কেটিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের নাজমুল ইসলাম ও পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র মাঈনউদ্দিন আহমেদ অভিনব এ প্রতিবাদের মূল উদ্যোক্তা। তাঁদের নানাভাবে সহযোগিতা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের ছাত্র মেঘমল্লার বসু, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের মীম আরাফাত এবং চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী জাহিদ জামিল ও সাইনুর রহমান।
আদনান আজিজ বলেন, শুরুটা টিএসসিতে হলেও এ উৎসব দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া তাদের লক্ষ্য। আর কোথাও কোনো শিক্ষককে কোনো রাজনৈতিক প্রভাব যেন হেনস্তা করতে না পারে, কোনো ছাত্র যেন গেস্টরুমে নির্যাতনের শিকার না হয়। এ প্রতিবাদকে স্বাগত জানিয়ে, সমস্যা সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃষ্টি দেওয়া উচিৎ বলে মনে করেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।