রাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দাবি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের প্রক্রিয়া চলছে। এদিকে ডাকসু নির্বাচন ঘিরে আশার সঞ্চার হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) সচলেরও। ডাকসুর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে দীর্ঘ ২৯ বছর ধরে বন্ধ অচল থাকা রাকসুও সচল হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতারা। চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার প্রচারণাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম। অতিদ্রুত তফসিল ঘোষণার ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতারা।
এ প্রসঙ্গে ছাত্র ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন মোড়ল বলছেন, শিক্ষার্থী, প্রশাসন, ছাত্রনেতারা সবাই রাকসু সচল হোক চাই। আমরাও চাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অতিদ্রুত তফসিল ঘোষণা করুক।
ছাত্র সংগঠনগুলোও বিভিন্নভাবে রাকসু সচলের দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছে। কেউ গঠনতন্ত্র তুলে ধরে শিক্ষার্থীদেরকে তথ্য জানান দিচ্ছেন। কেউবা নির্বাচিত প্রথম ভিপি ও জিএস এর ছবিসহ তথ্য উপস্থাপন করছেন। রাকসুর কাজও তুলে ধরছেন কেউ কেউ।
সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার তিন বছর পর প্রথম ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় ১৯৫৬-৫৭ মেয়াদে। তখন এ সংসদের নাম ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্ট ইউনিয়ন (রাসু)। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের দায়িত্বশীল নাগরিক ও নেতৃত্বের গুনাবলি সম্পন্ন তৈরি করার লক্ষ্যে ১৯৬২ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নামে যাত্রা শুরু হয়। রাকসু প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৮৯-৯০ পর্যন্ত ১৪ বার নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৭০ থেকে ১৯৭২ সালে কোন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। পরে সামরিক শাসনামলে ১৯৭৫ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত এবং ১৯৮১ থেকে ১৯৮৮সাল পর্যন্ত বন্ধ ছিল এ সংসদের নির্বাচন। ১৯৮৯ সালের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে দেশে নানা অস্থিরতার অজুহাত তুলে বন্ধ করে দেওয়া হয় রাকসু নির্বাচন।
এর পর বিভিন্ন সময় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে সরব হয়ে ওঠে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। বিশেষ করে বাম ছাত্র সংগঠনগুলো রাকসু নির্বাচনের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। আন্দোলনের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন মঞ্চের ব্যানারে ২০১৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর শহীদ মিনারে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন, ১৫ ডিসেম্বর থেকে চার দিনব্যাপী গণস্বাক্ষর, ১৯ ডিসেম্বর উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি, ২৩ ডিসেম্বর বিতর্ক ও মুক্ত আলোচনা, ৩১ ডিসেম্বর বিক্ষোভ সংহতি সমাবেশ কর্মসূচী পালন করে।
গত বছর ফেব্রুয়ারিতে রাকসু নির্বাচন নামে একটি বুলেটিন প্রকাশ করে রাকসু আন্দোলন মঞ্চ। এর পর কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, নির্বাচনসহ বিভিন্ন কারণে আন্দোলনটি স্থবির হয়ে পড়ে। সম্প্রতি ডাকসু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পরপরই রাকসু নির্বাচনের দাবিতে আবারও সোচ্চার হচ্ছে ছাত্র সংগঠনগুলো।
এ বিষয়ে রাকসু আন্দোলন মঞ্চের নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি শাকিল হোসেন বলেন, রাকসু নির্বাচন নিয়ে দ্রুতই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসব। পুরনো গঠনতন্ত্রটি সংশোধন ও পরিমার্জিত করে আগামী ছয় মাসের মধ্যে রাকসু নির্বাচনের দাবি করেন তিনি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন টালবাহানা করলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে কঠোর আন্দোলনে নামার কথাও জানান তিনি।
রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, চব্বিশ দফার দাবির মধ্যে প্রথমটিই ছিল রাকসু নির্বাচন। সুতরাং সংসদ নির্বাচন দীর্ঘদিনের দাবি। এ দাবি বাস্তবায়নে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দ্রুতই নির্বাচনের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আমরা আলোচনায় বসব।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান বলেন, নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রস্তুত থাকলে আমরাও অংশ নিতে প্রস্তুত আছি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সকল সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করার দায়িত্ব নিতে হবে। তাছাড়া নির্বাচন সম্ভব নয়। এ বিষয়ে প্রশাসনের তেমন উদ্যোগ দেখছিনা। রাকসু নির্বাচনের প্রস্তুতির আগে ছাত্র সংগঠনগুলোর সহাবস্থান জরুরি বলে মনে করি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আব্দুস সোবহান বলেন, ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে বসা হবে। তারা যদি চায় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে। উল্লেখ্য, সর্বশেষ রাকসুর ১৯৮৯-৯০ সালের নির্বাচনে ভিপি রিজভী আহম্মদ ও রুহুল কুদ্দুস বাবু জিএস ছিলেন।