শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস আজ
"আজ এই ঘোর রক্ত গোধূলিতে দাঁড়িয়ে/ আমি অভিশাপ দিচ্ছি তাদের/ যারা আমার কলিজায় সেঁটে দিয়েছে/ একখানা ভয়ানক কৃষ্ণপক্ষ"- গভীর বেদনায় কবি শামসুর রাহমান তার কবিতায় এ ভাষাতেই অভিশাপ দিয়েছিলেন একাত্তরের হত্যাকারীদের। যারা বিজয়ের ঠিক আগে কেড়ে নিয়েছিল এ দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। বছর ঘুরে আজ সেই ট্রাজিক ১৪ ডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস।
বাঙালির মেধা-মনন-মনীষাশক্তি হারানোর দিন আজ। সূর্য সন্তানদের হারানোর বেদনা বিধুর দিন। ৪৭ বছর আগে ১৯৭১ সালের এই দিনে রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটির সদস্যরা মেতে উঠেছিল বুদ্ধিজীবীদের হত্যাযজ্ঞে। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিসংগ্রামের শেষলগ্নে জাতি যখন চূড়ান্ত বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে, ঠিক তখনই ১৪ ডিসেম্বরের সেই কালরাতে বাঙালি মেধাবী সন্তানদের এই নিধনযজ্ঞ চলে।
কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশের ৪৭ বছরে আজও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রকৃত সংখ্যা নিরূপণ করা যায়নি। তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ছিলেন ৯৯১ শিক্ষাবিদ, ১৩ সাংবাদিক, ৪৯ চিকিৎসক, ৪২ আইনজীবী এবং ১৬ জন শিল্পী-সাহিত্যিক-প্রকৌশলী।
১৪ ডিসেম্বরকে বুদ্ধিজীবী নিধনযজ্ঞের দিন হিসেবে স্মরণ করা হলেও মূলত ১০ ডিসেম্বর থেকেই শুরু হয় ধিক্কারজনক এই কর্মকাণ্ড। সপ্তাহজুড়ে এদের তালিকায় একে একে উঠে আসে অসংখ্য বুদ্ধিদীপ্ত সাহসী মানুষের নাম। পরে কৃতী এসব সন্তানের তালিকা তুলে দেওয়া হয়েছিল তৎকালীন জামায়াতে ইসলামীর দোসর কুখ্যাত আলবদর ও আলশামস বাহিনীর হাতে। নেপথ্যে ছিল পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা রাও ফরমান আলী। রাতের আঁধারে তালিকাভুক্ত বুদ্ধিজীবীদের বাসা থেকে চোখ বেঁধে রায়েরবাজার ও মিরপুর বধ্যভূমিতে নিয়ে গুলি ও খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। চূড়ান্ত নীলনকশার বাস্তবায়ন ঘটে ১৪ ডিসেম্বর।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ বিভিন্ন দলের নেতারা পৃথক বাণী-বিবৃতি দিয়েছেন। এসব বাণীতে শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি তাদের আত্মার শান্তি কামনা করেছেন তারা।
রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, রায়েরবাজার বধ্যভূমি শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পার্ঘ্য অর্পন করছে জনতার ঢল। দেশের সর্বত্র জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত। বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, আলোচনা সভা, গান, আবৃত্তি, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী, স্বেচ্ছায় রক্তদান ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাসহ নানা আয়োজন করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) দিনব্যাপী কর্মসূচিতে রয়েছে- সকাল সোয়া ৬টায় উপাচার্য ভবনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ভবনগুলোতে কালো পতাকা উত্তোলন, ৬টা ৩৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণের কবরস্থান, জগন্নাথ হল প্রাঙ্গণের স্মৃতিসৌধ ও বিভিন্ন আবাসিক এলাকার স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং বাদ জুমা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদসহ বিভিন্ন হল মসজিদ ও উপাসনালয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত।