৩০ নভেম্বর ২০২৫, ১৩:৪১

দ্বিতীয় দিনের মতো শহীদ মিনারে স্বাস্থ্য সহকারীদের অবস্থান, সারাদেশে বন্ধ টিকাদান

রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে স্বাস্থ্য সহকারীরা  © সংগৃহীত

নিয়োগবিধি সংশোধন, বেতন বৈষম্য নিরসন এবং টেকনিক্যাল পদমর্যাদা প্রদানের দাবিতে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা। তাদের এই কর্মসূচির কারণে সারাদেশে বন্ধ হয়ে গেছে টিকাদান সেবা।

আজ রবিবার (৩০ নভেম্বর) সকাল থেকে ব্যানার-ফেস্টুন হাতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজারো স্বাস্থ্য সহকারী শহীদ মিনারে জড়ো হচ্ছেন। অনির্দিষ্টকালের জন্য এ কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছেন নেতারা।

গতকাল শনিবার থেকে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দেশের ৬৪ জেলার ২৬ হাজার স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শকরা ‘বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন’-এর ব্যানারে এ কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন। স্বাস্থ্য সহকারীদের এই কর্মবিরতির ফলে সারাদেশের ১ লাখ ২০ হাজার আউটরিচ ইপিআই টিকাদান কেন্দ্রের মধ্যে ১৫ হাজার কেন্দ্রে টিকা প্রদান সেবা বন্ধ রয়েছে। ফলে টিকা গ্রহণসহ প্রয়োজনীয় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন মা ও শিশুরা।

অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া স্বাস্থ্য সহকারীরা বলেন, তাদের কাজের কারণেই দেশের গড় আয়ু বেড়েছে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত সুপরিচিতি লাভ করেছে। তারা উল্লেখ করেন, ২০০৯ সালে ইমিউনাইজেশন কর্মসূচির সাফল্যের জন্য গ্যাভির পুরস্কার, ২০১০ সালে এমডিজি-৪ অ্যাওয়ার্ড, ২০১১ সালে সাউথ–সাউথ পুরস্কার, ২০১২ সালে গ্যাভির টিকাদানকারী দেশের অ্যাওয়ার্ড, ২০১৪ সালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শ্রেষ্ঠ টিকাদানকারী দেশের পুরস্কার, ২০১৪ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পোলিও নির্মূল সনদ, ২০১৬ সালে জাইকার স্বীকৃতি, ২০১৬ সালে ধনুষ্টঙ্কার নির্মূলের সনদ এবং ২০১৯ সালে নিউইয়র্কে গ্যাভির দেওয়া ‘ভ্যাকসিন হিরো’ সম্মাননা এসব অর্জনের পেছনে স্বাস্থ্য সহকারীদের নিবেদিত শ্রমই মুখ্য। অথচ তারাই আজ অবহেলা ও বৈষম্যের শিকার।

স্বাস্থ্য সহকারীদের নেতারা জানান, তারা বহুবার কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনায় গিয়েছেন, কিন্তু ফল পাননি। এবার দাবি আদায়ের জিও (প্রজ্ঞাপন) না হওয়া পর্যন্ত শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচিতেই থাকবেন তারা। প্রয়োজনে তারা এখানে আত্মহুতি দিবেন। সকলে মনিপাতা দিয়ে দাফন হবেন। কিন্তু, দাবি আদায় না হওয়ার পর্যন্ত শহীদ মিনার ছাড়বেন না। প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাবে।

তারা আরও বলেন, আমরা প্রান্তিক এ জনগোষ্ঠীকে আমাদের স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্ছিত করে এই কর্মবিরতিতে যেতে চাইনি, কর্মকর্তারা আমাদের এ অবস্থান কর্মবিরতি দিতে বাধ্য করিয়েছেন। আমাদের নিয়োগবিধিসহ বিভিন্ন দাবিতে পর্যায়ক্রমে আবেদন করা সত্ত্বেও এক একবার এক এক অজুহাতে কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে থামিয়ে দিয়েছে। এ পর্যন্ত ৫ বার আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতি বিশ্বাস করে তাদের কথা রেখেছি। কিন্তু, কর্মকর্তারা তাদের কথা রাখেনি। তাই, আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, এ কর্মসূচি দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। আমাদের যৌক্তিক ৬ দফা দাবি জিও (প্রজ্ঞাপন) আকারে প্রকাশ না হওয়ার পর্যন্ত আমাদের অনির্দিষ্টকালের অবস্থান কর্মবিরতি চলবে।