ক্যান্সার প্রতিরোধে সেরা ৩ খাবার
গত কয়েক দশকে ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যাপক উন্নতি সাধন সত্ত্বেও, ক্যান্সার এখনও সবচেয়ে প্রাণঘাতী রোগগুলোর মধ্যে একটি। যা প্রায়শই মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ক্যান্সারে শরীরের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন মাত্রার জটিলতা দেখা দেয়। যদিও ক্যান্সার বংশাণুগতও হতে পারে, তবে বেশিরভাগ ক্যান্সারেরই উৎপত্তি জীবনযাপন পদ্ধতিজনিত সমস্যা যেমন স্থূলতা, ডায়াবেটিস, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি থেকে।
স্ট্যানফোর্ড ও হার্ভার্ড-প্রশিক্ষিত গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট ডাক্তার সৌরভ সেঠির মতে, কিছু নির্দিষ্ট খাবার রয়েছে যা ক্যান্সারকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। আপনার দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় এই ৩টি খাবার নিয়মিত অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি অন্যান্য জীবনযাপন সংক্রান্ত পরিবর্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। আসুন দেখে নেওয়া যাক খাবারগুলো-
১. ব্রোকলি: ব্রোকলি, ফুলকপি, বাঁধাকপি এবং কেলের মতো ক্রুসিফেরাস পরিবারের একটি সদস্য। এর ফুলে রয়েছে সালফোরাফেন নামক একটি প্রাকৃতিক অণু, যা গাছপালায় পাওয়া সবচেয়ে শক্তিশালী ক্যান্সার-বিরোধী এজেন্টগুলোর মধ্যে একটি। সালফোরাফেন শরীরকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে, প্রদাহ কমাতে উদ্দীপিত করে এবং নতুন গবেষণা অনুযায়ী, এটি ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকেও দমিয়ে রাখতে পারে। অনেক গবেষণায় ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে নিয়মিত ব্রোকলি খাওয়া স্তন, প্রোস্টেট এবং কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে। এছাড়াও, ব্রোকলিতে রয়েছে ইন্ডোল-৩-কারবিনল নামক আরেকটি জৈব-সক্রিয় যৌগ, যা হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং লিভারের ডিটক্সিফিকেসি করার ক্ষমতাকে সমর্থন করে।
সপ্তাহে তিনবার ব্রোকলি বা অন্য কোনো ক্রুসিফেরাস শাকসবজি খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করলে শরীরের নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী করা যায়।
২. রসুন: রসুনকে একটি শক্তিশালী খাবার হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। ডক্টর সেঠি বলেছেন, আজ বিজ্ঞান এটিকে ক্যান্সার-বিরোধী খাবার হিসেবেও সমর্থন করে। যখন একটি রসুনের কোয়া কুঁচকানো বা পিষে ফেলা হয়, তখন এটি অ্যালিসিন নামক গন্ধক-সমৃদ্ধ যৌগ মুক্ত করে, যা নানা প্রক্রিয়া শুরু করে দেয়। এই অণুগুলি শরীরের ডিটক্সিফকেসি করার পথকে সক্রিয় করে, ডিএনএ মেরামত করতে সহায়তা করে এবং ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিতে বাধা দিতে পারে।
সর্বোচ্চ উপকার পেতে, একটি রসুনের কোয়া পিষে নিন এবং খাওয়ার আগে ১০ মিনিট রেখে দিন।
৩. গাজর: গাজর ক্যারোটিনয়েড-বিটা-ক্যারোটিনে পরিপূর্ণ, যা এদের স্বতন্ত্র কমলা রং দেয়। এই যৌগগুলি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং কোষকে ফ্রি র্যাডিকেল নামক অণুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে, যেগুলো ক্যান্সারের সূত্রপাত ঘটাতে পারে। গাজর সমৃদ্ধ খাদ্যকে ফুসফুস, পেট ও প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় বলে জানিয়েছে। গাজরে লুটেইন ও পলিঅ্যাসিটিলিনের মতো একগুচ্ছ ফাইটোকেমিক্যালও রয়েছে, যাদের প্রতিটিই প্রদাহ-বিরোধী এবং টিউমার-বিরোধী কার্যকলাপের জন্য পরিচিত। এগুলোর উপকার পেতে, কাঁচা গাজর সালাদে কুচি করে খাওয়া যেতে পারে; হালকা ভাপে সামান্য নরম করে সিদ্ধ করলে (অতিরিক্ত সিদ্ধ না করে) বিটা-ক্যারোটিনের শোষণ আরও বাড়ানো যায়।
ক্যান্সার প্রতিরোধী অন্যান্য খাবার
এই তিনটি খাবারের বাইরেও, আরও অনেক খাবারেই ক্যান্সার-বিরোধী গুণাবলী রয়েছে। ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি এবং রাস্পবেরির মতো বেরিগুলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি-তে ভরপুর, যা ডিএনএ রক্ষা করতে সাহায্য করে। টমেটো লাইকোপিন সরবরাহ করে, একটি রঞ্জক পদার্থ যা প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাসের সাথে যুক্ত। হলুদ মসলাটি কারকুমিন সরবরাহ করে, একটি যৌগ যা এর শক্তিশালী প্রদাহ-বিরোধী এবং টিউমার-বিরোধী ক্রিয়াকলাপের জন্য পরিচিত। গ্রিন টিও ক্যান্সার কোষের বিস্তার ধীর করতে পারে। আখরোট এবং বাদাম স্বাস্থ্যকর চর্বির একটি ভালো উৎস, যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। আস্ত শস্য দানা জাতীয় খাবার, অলিভ অয়েল এবং শিম জাতীয় খাবার অন্ত্রের অনুজীবগুলিকে পুষ্ট করে, যাদের গবেষণায় ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাসের সাথে যুক্ত পাওয়া গেছে।
খাবার ছাড়াও জীবনযাপনে পরিবর্তন
খাদ্যতালিকা ছাড়াও, জীবনযাত্রার পরিবর্তনও সমান গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ শরীর ঠিক রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া আপনি যদি ধূমপান করেন, এখনই ছেড়ে দিন এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন। আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং ক্যান্সারকে দূরে রাখতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত সূর্যের আলো গ্রহণ করুন। [সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া]