২১ অক্টোবর ২০২৫, ১৮:৩৫

কার্গো ভিলেজে পুড়ে ছাই ২০০ কোটি টাকার কাঁচামাল, ওষুধ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা

ওষুধ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাপির সংবাদ সম্মেলন  © সংগৃহীত

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শীর্ষ ৪৫টি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির প্রায় ২০০ কোটি টাকার কাঁচামাল পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ (বাপি)। সংগঠনটি জানিয়েছে, পুড়ে যাওয়া পণ্যের মধ্যে ছিল অ্যান্টিবায়োটিক, ভ্যাকসিন, হরমোন, ডায়াবেটিস ও ক্যান্সারসহ জীবন রক্ষাকারী বহু ওষুধ উৎপাদনের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল। এতে অতি প্রয়োজনীয় এসব ওষুধ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এ ছাড়া এই ঘটনার অর্থনৈতিক প্রভাব প্রায় চার হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাতে পারে বলেও মনে করছে সংগঠনটি। আজ মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাপির মহাসচিব ডা. মো. জাকির হোসেন।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত ১৮ অক্টোবর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে দেশের ওষুধ শিল্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল ভস্মিভূত হয়েছে। এই আকস্মিক ক্ষতি পুরো খাতকে বহুবিধ ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলেছে।

ডা. জাকির বলেন, দেশে বর্তমানে ৩০৭টি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে, এর মধ্যে সক্রিয়ভাবে উৎপাদনে আছে প্রায় ২৫০টি কোম্পানি। বাপির প্রাথমিক জরিপ অনুযায়ী, শুধু শীর্ষ ৪৫টি কোম্পানিরই প্রায় ২০০ কোটি টাকার কাঁচামাল পুড়ে গেছে। অন্য কোম্পানিগুলোর ক্ষতির হিসাব যুক্ত হলে মোট ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি হবে।

তিনি আরও বলেন, অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া কাঁচামালের মধ্যে ছিল অ্যান্টিবায়োটিক, ভ্যাকসিন, হরমোন, ডায়াবেটিক ও ক্যান্সার জাতীয় ওষুধ তৈরির উপকরণ। শুধু তাই নয়, কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্পেয়ার পার্টস ও মেশিনারিজও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা পুনরায় আমদানি করা সময়সাপেক্ষ। ফলে উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি রপ্তানি সময়সূচিও প্রভাবিত হবে।

ওষুধ শিল্প দেশের অর্থনীতি ও জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে জানিয়ে ডেল্টা ফার্মার ম্যানেজিং ডিরেক্টর বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের তৈরি মানসম্পন্ন ওষুধ ১৬০টিরও বেশি দেশে রপ্তানি হয়, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত দেশও রয়েছে। কিন্তু এই অগ্নিকাণ্ডের ফলে উৎপাদন চেইনে বড় ধরনের ধাক্কা লাগবে।

তিনি বলেন, দেশের ওষুধ শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামালের প্রায় ৯০ শতাংশই আসে চীন, ভারত ও ইউরোপ থেকে। এসব কাঁচামালের একটি বড় অংশ জীবনরক্ষাকারী ওষুধ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়, যা সাধারণত আকাশপথে আমদানি করা হয়। কার্গো ভিলেজে আগুন লাগায় এসব দামি কাঁচামাল ধ্বংস হয়ে গেছে। অন্যদিকে, বিকল্প হিসেবে অন্য এয়ারপোর্টে নামানো পণ্যগুলোকেও নিয়ে উদ্বেগ আছে, কারণ সেগুলোকেও নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রাখতে হয়। 

আরও জটিলতা দেখা দিয়েছে নারকোটিকস বিভাগের অনুমোদন নেওয়া পণ্যগুলো নিয়ে। ডা. জাকির হোসেন বলেন, এই পণ্যগুলো পুনরায় আনা অত্যন্ত জটিল ও সময়সাপেক্ষ, কারণ এতে ধাপে ধাপে একাধিক অনুমোদন নিতে হয়। ফলে এই দিক থেকেও বড় অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন, একটি র-ম্যাটেরিয়াল হারালে সেই উপকরণে নির্ভরশীল প্রতিটি ফিনিশড প্রোডাক্টের উৎপাদনই অনিশ্চয়তায় পড়ে। ফলে সামগ্রিকভাবে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার অর্থনৈতিক প্রভাব পড়বে বলে আমরা অনুমান করছি। একই সাথে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রতি দ্রুত তদন্ত, ক্ষতিপূরণের কার্যকর ব্যবস্থা এবং বিকল্প কার্গো ব্যবস্থাপনা জোরদার করার আহ্বান জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য দেন ইউনিমেড ইউনিহেলথের চেয়ারম্যান বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এম মোসাদ্দেক হোসেন । 

এ ছাড়া বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং রেনেটা লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও সৈয়দ কায়সার কবীর, হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সিইও এবং বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির কোষাধ্যক্ষ মুহাম্মদ হালিমুজ্জামান, বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির সদস্য ও নিপ্রো-জেএমআই ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের এমডি আব্দুর রাজ্জাক, বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতি সদস্য ও একমি ল্যাবরোটারিজ লিমিটেডের পরিচালক ফাহিম সিনহা, ওয়ান ফার্মার ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির সদস্য ও স্কোয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের নির্বাহি পরিচালক মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির সিইও মে. জে. (অব.) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।