১৬ আগস্ট ২০২৫, ১৪:১৫

যে ভিটামিনের অভাবে হতে পারে বন্ধ্যত্বসহ জটিল রোগ

স্বামী ও স্ত্রী  © সংগৃহীত

শরীরে ভিটামিন ‘এ’-এর অভাব একাধিক শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি বন্ধ্যত্বের মতো গুরুতর সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে এমন সতর্কতা দিচ্ছেন পুষ্টিবিদরা। এই গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস শোষণে সহায়তা করে, যা হাড় ও দাঁতের গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। তবে এর ঘাটতি দেখা দিলে হাড় দুর্বল হওয়া, পেশি নিস্তেজ হয়ে পড়া এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাসসহ দেখা দিতে পারে রিকেটস ও অস্টিওম্যালাসিয়া রোগের মতো জটিলতা।

পুরুষ ও নারী উভয়ের প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য ভিটামিন ‘এ’ অপরিহার্য। এর অভাব সরাসরি প্রজনন হরমোন উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটায় এবং শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর স্বাভাবিক কার্যকারিতায় ব্যাঘাত ঘটায়, যা বন্ধ্যত্বের কারণ হতে পারে। নারীদের ক্ষেত্রে এই ঘাটতির প্রভাবে মাসিক চক্রে অনিয়ম দেখা দিতে পারে কিংবা গর্ভধারণে জটিলতা তৈরি হতে পারে। অন্যদিকে, পুরুষদের ক্ষেত্রে এটি শুক্রাণুর সংখ্যা এবং গতি কমিয়ে দিতে পারে। এমনকি গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের সঠিক বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই ভিটামিন। এর অভাব জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আমাদের শরীরের সামগ্রিক সুস্থতা রক্ষায় যে কয়েকটি ভিটামিন ও খনিজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ভিটামিন ‘এ’। এটি চোখের সুস্থতা বজায় রাখতে, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং কোষ বৃদ্ধিতে অনস্বীকার্য ভূমিকা রাখে।

বিশেষ করে চোখের একটি সাধারণ কিন্তু জটিল রোগ রাতকানার পেছনেও রয়েছে এই ভিটামিনের ঘাটতির ভূমিকা। ভিটামিন ‘এ’ রোডোপসিন নামক একধরনের রঞ্জক তৈরিতে সহায়তা করে, যা রেটিনার আলো শোষণের জন্য অপরিহার্য। এই পদার্থ চোখকে ম্লান আলো বা অন্ধকারে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করে। যথেষ্ট ভিটামিন ‘এ’ না থাকলে সন্ধ্যা বা কম আলোয় চলাফেরা করতে সমস্যা হয়। এটাই রাতকানার প্রাথমিক লক্ষণ। সময়মতো চিকিৎসা না হলে পরিণতিতে দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণ হারানোর আশঙ্কাও তৈরি হতে পারে।

চুল ও নখের স্বাস্থ্যেও রয়েছে ভিটামিন ‘এ’-এর সরাসরি প্রভাব। ভিটামিন ‘এ’ কোষের বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে এবং সিবাম নামের প্রাকৃতিক তেল উৎপাদনে সহায়তা করে, যা চুল ও ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সহায়ক। ঘাটতি দেখা দিলে চুল শুষ্ক ও ভঙ্গুর হয়ে পড়তে পারে, একইসঙ্গে নখ দুর্বল হয়ে ফেটে যেতে পারে বা সহজেই ভেঙে যেতে পারে।

চোখে শুষ্কতা কিংবা চুলকানির কারণ হিসেবেও উঠে আসে এই ভিটামিনের নাম। চোখে পানি উৎপাদনের জন্য ভিটামিন ‘এ’ সহায়ক। এর অভাব চোখের কর্নিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, বাড়িয়ে দিতে পারে চোখে সংক্রমণের ঝুঁকি এবং শেষ পর্যন্ত দৃষ্টিশক্তি হ্রাসের কারণ হতে পারে।

ভিটামিন ‘এ’ হাড়ের গঠন ও দৃঢ়তা রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি এই ভিটামিন হাড়ের গঠন ও পুনর্গঠনে সহায়ক। গবেষণায় দেখা গেছে, এর ঘাটতি হাড়ের পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে, ফলে হাড়ের ঘনত্ব হ্রাস পায় এবং ভাঙার ঝুঁকি বাড়ে। শিশুদের ক্ষেত্রে ভিটামিন ‘এ’-এর অভাব হাড়ের বৃদ্ধি ব্যাহত করে এবং উচ্চতা বৃদ্ধির প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি সুস্থ জীবনধারার জন্য খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ খাবার থাকা জরুরি। গাজর, কুমড়া, কলিজা, ডিমের কুসুম, দুধ ও শাকসবজিতে রয়েছে এই ভিটামিনের প্রাকৃতিক উৎস, যা সঠিকভাবে গ্রহণের মাধ্যমে শরীরকে রাখতে পারে বহু জটিলতা থেকে মুক্ত।