২৯ মে ২০২৫, ২২:০৫

দেশে নারীদের ভয়-আতঙ্কের কারণ স্তন ক্যান্সার, যে পরামর্শ দিলেন বিশেষজ্ঞরা

প্রতীকী ছবি  © সংগৃহীত

বাংলাদেশে নারীদের সবচেয়ে বেশি হওয়া ক্যান্সারগুলোর একটি ব্রেস্ট ক্যান্সার বা স্তন ক্যান্সার। এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে প্রতি বছর গড়ে ২২ দশমিক ৫ জন এই রোগে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে ১৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সী নারীদের মধ্যেই আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি। ক্যান্সার রোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে বেশি জরুরি সচেতনতা। পাশাপাশি নারীদের স্তনে কোনো চাকা অনুভব হলে বা কোনো পরিবর্তন চোখে পড়লে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সময়মতো চিকিৎসা পেলে স্তন ক্যান্সার ভালো হওয়া সম্ভব।

জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. মোসা. শাহনাজ পারভীন বলেন, বর্তমানে বিশ্বে প্রতি ৮ জন নারীর মধ্যে ১ জন স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। একসময় এই রোগীরা প্রায়ই গভীর বা জটিল (হার্ড) স্টেজে হাসপাতালে আসতেন। তবে এখন দৃশ্যপট অনেকটাই বদলেছে — এটি একটি ইতিবাচক পরিবর্তন। কিন্তু এখন নারীরা অনেক বেশি সচেতন ও আত্মবিশ্বাসী। তারা নিজেরাই আগেভাগে হাসপাতাল বা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন। আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো, এখন তারা বুঝতে পারছেন যে —সময়মতো চিকিৎসা করালে স্তন ক্যান্সার পুরোপুরি ভালো হয়ে যেতে পারে। দ্রুত মাসিক শুরু হওয়া স্তন ক্যান্সারের অন্যতম কারণ।

তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসা শেষ হওয়ার পরও নিয়মিত ফলোআপ বা চেকআপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত ৩ মাস, ৬ মাস বা ১ বছর পরপর চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চেকআপ করাতে হয়। যেকোনো ক্যান্সার রোগীর ক্ষেত্রেই এটি জরুরি। কারণ অনেক সময় চিকিৎসার পর ক্ষতস্থান থেকে আবার ক্যান্সার ফিরে আসতে পারে বা শরীরের অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই রোগ মুক্তির পরও নিয়মিত পর্যবেক্ষণে থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন।

আরও পড়ুন: নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন, না হলে আমরাই দিয়ে দেব: দুদু

জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, স্তন ক্যানসার প্রথমদিকে বুঝতে পারা কিছুটা কঠিন হতে পারে। তবে মাঝেমধ্যে নারীরা নিজেরাই নিজেদের স্তন পরীক্ষা করে প্রাথমিক লক্ষণগুলো ধরতে পারেন। প্রথম দিকে স্তনের ভেতরে শক্ত চাকার মতো কিছু একটা অনুভব হতে পারে। রোগটি যখন আরও জটিল বা অ্যাডভান্স পর্যায়ে পৌঁছায় তখন স্তনে আলসার বা ঘা দেখা দেয়। অনেক সময় সেই স্থানে ঘা ছমছম করে। স্তনের চামড়া মোটা হয়ে যায় এবং রক্ত ঝরতে পারে। একপর্যায়ে এই ক্যানসার দেহের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। তখন ক্ষতস্থান থেকে অনেক রস বের হয়।

বিভিন্ন কারণে স্তন ক্যান্সার বৃদ্ধি পাচ্ছে যেমন হরমোনের পরিবর্তন, জীবনযাত্রার ধরন, পরিবেশগত দূষণ এবং শরীরের প্রতি অবহেলা। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, স্থূলতা, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা, কিছু ভাইরাসজনিত সংক্রমণ, জাঙ্ক ফুড ও ভেজাল খাবারের আধিক্য ক্যান্সার, বিশেষ করে স্তন ক্যান্সারের হার বৃদ্ধির পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। 

সূত্র আরও জানায়,  রোগী যখন হাসপাতালে আসেন তখন চিকিৎসকরা প্রথমে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হন তিনি ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত কিনা। রোগ নির্ণয় নিশ্চিত হওয়ার পর চিকিৎসা শুরু হয়। ক্যান্সারের ধরণ এবং এটি শরীরের কোথায়, কতটুকু ছড়িয়ে পড়েছে—এসব বিবেচনায় রেখে চিকিৎসার পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়। স্তন ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য সাধারণত কয়েকটি পরীক্ষা করা হয়, যেমন—ক্লিনিক্যাল ব্রেস্ট এক্সাম, ম্যামোগ্রাম, আল্ট্রাসোনোগ্রাম, ব্রেস্ট এমআরআই এবং বায়োপসি। রোগটি যদি অগ্রসর বা হার্ড স্টেজে পৌঁছায়, তখন সার্জারি, কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়।