ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের টয়লেটে টেকা দায়
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের টয়লেট ব্যবস্থায় চরম অব্যবস্থাপনা বিরাজ করছে। বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ভবনের টয়লেটগুলোতে ময়লা জমে থাকলেও নেই নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। টয়লেট থেকে বের হওয়া দুর্গন্ধে হাঁসফাঁস করছেন রোগী, স্বজন ও স্টাফরা।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, হাসপাতালের টয়লেটে পর্যাপ্ত সংখ্যক পরিচ্ছন্নতাকর্মী না থাকা ও কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে দিনদিন এই অবস্থার আরও খারাপ হচ্ছে। বর্তমানে নতুন ভবনে ১৮৮টি টয়লেট ও ১৬০টি বাথরুম এবং পুরাতন ভবনে প্রায় ১০০টি টয়লেট ও ৭০টির মতো বাথরুম রয়েছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে ঢামেক হাসপাতালে পরিদর্শনে গেলে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের প্রতিবেদক টয়লেটের এমন বিরূপ চিত্র দেখতে পায়।
আরও পড়ুন: কুর্মিটোলা হাসপাতালে শয্যা-সংকট, বিড়ম্বনায় নতুন রোগীরা
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘হাসপাতালে টয়লেটের অবস্থা এতটাই নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত যে ভেতরে প্রবেশ করাটাই একপ্রকার অসম্ভব হয়ে পড়ে। গন্ধে যেন দম বন্ধ হয়ে আসে। বাধ্য হয়ে নাক চেপে ধরে থাকতে হয়।’
‘‘একজন রোগী কিংবা তার স্বজনের জন্য এমন পরিবেশ খুবই বিব্রতকর ও অস্বাস্থ্যকর। এতো বড় সরকারি হাসপাতাল, প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এখানে আসে—তবুও বাথরুমগুলোর এই করুণ দশা দুঃখজনক। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় কর্তৃপক্ষের কোনো নজর আছে বলে মনে হয় না।’’
নোয়াখালী থেকে আসা রোগীর স্বজন সাবিনা বেগম (৪০) হাসপাতালের টয়লেট ব্যবস্থার সমালোচনা করে বলেন, ‘টয়লেটের অবস্থা এমনই ভয়াবহ যে আসলে ভাষায় বোঝানো কঠিন। ভেতরে এতটা দুর্গন্ধ যে ঠিকভাবে বসে থাকাও যায় না। এখানে গেলে রোগী সুস্থ থাকলেও অসুস্থ হয়ে পড়বে। স্লাবের ওপরে এক ধরনের ময়লা জমে গেছে, যেন আস্ত একটা স্তর তৈরি হয়ে আছে। পরিষ্কার করার কোনো ব্যবস্থাই নেই মনে হয়। প্রশাসন কি এসব দেখে না? এভাবে চলতে থাকলে রোগীদের ভোগান্তি তো শুধু বাড়বেই।’
এদিকে ঢামেকের নারী, শিশু ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের টয়লেট। মোছাম্মদ জরিনা এখানকার দায়িত্বে কাজ করছেন। এ সময় একজন টয়লেটের কাজে এসে বলেন, ‘আমি বাপ্পির লোক।’ তিনি ৫ টাকা দিলেন। অথচ তিনি কোনও প্রতিবন্ধী নন। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত জরিনা তার কাছ থেকে ১০ টাকা দাবি করলে লোকটি নাখোশ হন। লোকটি বললেন, আমি পরিচিত লোক তারপরও ১০ টাকা চাইলেন? সব মেডিকেলে কিন্তু পলিটিক্স চলে এ বলে তিনি ১০ টাকা দিয়েই টয়লেটে প্রবেশ করলেন। নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্ধারিত এ টয়লেটের পরিষেবা মূল্য নির্ধারণ করা আছে—প্রস্রাব ৫ টাকা, পায়খানা ৫ টাকা।
আরও পড়ুন: জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান: আয়োডিনযুক্ত লবণ পরীক্ষা ও পুষ্টির উন্নয়নে ভূমিকা
জরিনা আরও বলেন, ‘আমি এখানে ধোয়া-মুছার কাজ করি। নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের সেবা দিয়ে থাকি। পাশাপাশি, এখানকার বাথরুমগুলো নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখি।’ এ সময় একজন লোক ৫ টাকা দিয়ে ঢুকার চেষ্টা করলে জরিনা ১০ টাকা দাবি করেন। লোকটি লিফলেটে লেখা ৫ টাকা দেখিয়ে দিয়ে বলেন আপনি কেন ১০ টাকা নিচ্ছেন? এসময় জরিনা বলেন, এখানকার আয়-ব্যয়ের টাকা কোম্পানির কাছে জমা দিতে হয়। যেহেতু এটি রোটারি ক্লাবের উদ্যোগে পরিচালিত, তাই এখানকার কিছু অর্থ তাদেরকেও প্রদান করতে হয়।’
এ বিষয় নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘হাসপাতালের টয়লেট ও বাথরুমের পরিবেশ খারাপ হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো অতিরিক্ত ভিজিটর। তিনি জানান, একজন রোগীর সঙ্গে গড়ে ৪-৫ জন লোক আসায় টয়লেট ও বাথরুমে প্রচণ্ড চাপ পড়ে যার ফলে দ্রুত অপরিচ্ছন্ন হয়ে পড়ে সেগুলো। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা সাধারণত দিনে তিনবার টয়লেট পরিষ্কার করলেও অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে তা যথেষ্ট হয়ে ওঠে না। এ ছাড়া জনবল সংকটও একটি বড় সমস্যা বলে তিনি উল্লেখ করেন।’
তার মতে, পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সংখ্যা বাড়ানো গেলে টয়লেটের পরিবেশ কিছুটা ভালো রাখা সম্ভব হতো।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, টয়লেট ব্যবস্থাপনায় বড় একটি সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তা হলো পর্যাপ্ত পরিচ্ছন্নতাকর্মীর অভাব। বর্তমানে যে অল্পসংখ্যক কর্মী রয়েছে, তারা প্রতিদিন নির্ধারিত দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেন। তবে বাস্তব পরিস্থিতি সামাল দেওয়া একটু কঠিন। দেশের বৃহত্তম সরকারি হাসপাতাল হিসেবে ঢাকা মেডিকেলে প্রতিদিন হাজার হাজার রোগী ভর্তি থাকেন।
এর বাইরে থাকে বহির্বিভাগের রোগী ও তাদের স্বজনদের ভিড়। এত বিপুল সংখ্যক মানুষের ব্যবহারযোগ্য টয়লেট নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা কঠিন। ফলে দিনভর টয়লেটগুলোতে জমে থাকে ময়লা, দুর্গন্ধ ছড়ায় আশপাশে আর রোগী-স্বজনদের পড়তে হয় চরম দুর্ভোগে।
এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আসাদুজ্জামানের বক্তব্য নিতে তার অফিসে যাওয়া হলেও তার সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি। এর আগে তার বক্তব্য নিতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সরাসরি অফিসে সাক্ষাৎ করতে বলেন।