১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩:৪০

ফ্যাটি লিভারের চেয়েও বিপদ বেশি সিরোসিসে, রোগটি কী?

প্রতীকী ছবি  © সংগৃহীত

ফ্যাটি লিভারকে অনেকেই সাধারণ সমস্যা হিসেবে দেখলেও চিকিৎসকদের মতে, এটি এমন একটি রোগ যার চিকিৎসায় অবহেলা করলে ধীরে ধীরে তা ভয়াবহ লিভার সিরোসিসে রূপ নিতে পারে। সিরোসিস এমন একটি জটিল ও দীর্ঘমেয়াদি লিভার রোগ, যেখানে লিভারের স্বাভাবিক কোষ নষ্ট হয়ে স্থায়ী ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এতে লিভারের কার্যক্ষমতা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয় এবং সময়মতো চিকিৎসা না হলে রোগীর জীবনঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

লিভারের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত থেকে এই অসুখ জন্ম নেয়। লিভারের কার্যক্ষমতা পুরোপুরি নষ্ট হয় এই অসুখের প্রভাবে। অনেকেরই ধারণা, কেবল অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে এই অসুখ হানা দেয়। তবে চিকিৎসকেরা বলছেন, মদ্যপান ছাড়াও প্রতি দিনের বেশ কিছু ভুল অভ্যাসের জেরেও এই অসুখ আক্রমণ করতে পারে।

যেসব কারণে সিরোসিস হয়: স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞদের তথ্যমতে, সিরোসিসের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে দীর্ঘদিন অতিরিক্ত মদ্যপান, হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস সংক্রমণ, নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার, ডায়াবেটিস, স্থূলতা এবং দীর্ঘমেয়াদি অনিয়ন্ত্রিত ওষুধ সেবন।

যেসব লক্ষণ দেখে বুঝবেন: সিরোসিসের লক্ষণগুলি ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হতে পারে এবং অবস্থার পর্যায়ে এবং তীব্রতার উপর নির্ভর করে।

ক্লান্তি এবং দুর্বলতা, ক্ষুধামান্দ্য এবং অনিচ্ছাকৃত ওজন কমে যাওয়া, পেটে ব্যথা বা অস্বস্তি, পা বা পেট ফুলে যাওয়া (এডিমা), জন্ডিস (ত্বক এবং চোখের হলুদ হওয়া), ক্ষত এবং সহজেই রক্তপাত, মানসিক বিভ্রান্তি বা আচরণে পরিবর্তন (হেপাটিক এনসেফালোপ্যাথি), বমি বমি গাঢ় রঙের প্রস্রাব এবং হালকা রঙের মলত্যাগ আপনার ত্বক বা চোখের পাতায় চর্বি জমার ছোট হলুদ নোডুলস ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। 

সিরোসিসের পর্যায়: লিভারের ক্ষতির মাত্রা অনুযায়ী রোগটি কয়েকটি পর্যায়ে বিভক্ত। প্রাথমিক পর্যায়ে লিভারের দাগ পড়া শুরু হলেও তা এখনও মোটামুটি স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে এবং সাধারণত তেমন কোনো উপসর্গ দেখা যায় না।

ক্ষতিপূরণযুক্ত পর্যায়ে লিভার ক্ষতি সত্ত্বেও নিজে থেকেই তা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে, তবে কার্যক্ষমতা কমতে থাকে এবং ঝুঁকি বাড়ে। ডিকম্পেনসেটেড পর্যায়ে লিভার ক্ষতি পূরণে অক্ষম হয়ে পড়ে; পেটে পানি জমা, খাদ্যনালী বা পাকস্থলীর শিরায় রক্তক্ষরণ এবং মানসিক বিভ্রান্তির মতো জটিলতা দেখা দেয়। শেষ পর্যায়ে লিভার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ে; অনেক ক্ষেত্রে লিভার প্রতিস্থাপনই একমাত্র চিকিৎসা পথ।

সিরোসিস প্রতিরোধ: অতিরিক্ত অ্যালকোহল এড়িয়ে চলা, সুষম খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত শরীরচর্চা, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্য পরিস্থিতি পরিচালনা, ক্ষতিকারক রাসায়নিক, শিল্প দূষণকারী এবং কিছু ওষুধের সংস্পর্শ কমানো, টিকা নেওয়া কারণ হেপাটাইটিস বি-এর বিরুদ্ধে টিকা এই ভাইরাল সংক্রমণের কারণে সিরোসিসের বিকাশ রোধ করতে সাহায্য করতে পারে। এছাড়া নিয়মিত লিভার ফাংশন পরীক্ষা এবং পর্যবেক্ষণ লিভার রোগের প্রাথমিক লক্ষণ সনাক্ত করতে সাহায্য করতে পারে। [সূত্র:কেয়ার ইন্সটিটিউট]