৩০ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৩০

পাওয়ার ন্যাপ কি সত্যিই কার্যকর?

প্রতিকী ছবি  © সংগৃহীত

অনেকেই দিনের বেলায় ক্লান্তবোধ করায় শরীরকে একটু বিশ্রাম দিতে অল্প ঘুমিয়ে নেন। এ অল্প সময়ের ঘুমকেই পাওয়ার ন্যাপ বলে থাকি। এ ঘুম সাধারণত ১০ থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এত অল্প সময় ঘুমালেও, এটি সতর্কতা ও মনোযোগ বাড়াতে বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে। স্বল্প এ সময়ের ঘুম বা পাওয়ার ন্যাপ এখন অনেকের মধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। 

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পাওয়ার ন্যাপ শরীর ও মস্তিষ্ককে দ্রুত পুনরুজ্জীবিত করতে সহায়তা করে, কারণ এ সময়ে ঘুমের গভীর স্তরে প্রবেশ ঘটে না। সাধারণত ঘুমিয়ে পড়ার প্রায় ৩০ মিনিট পর মানুষ গভীর ঘুমে প্রবেশ করে, এবং এ অবস্থায় হঠাৎ জেগে উঠলে দেখা দিতে পারে ‘স্লিপ ইনর্শিয়া’— যা জেগে ওঠার পর সাময়িক বিভ্রান্তি, ক্লান্তি ও ধীর প্রতিক্রিয়ার জন্য দায়ী।

গবেষণায় দেখা গেছে, স্লিপ ইনর্শিয়া থেকে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে ৩০ থেকে ৬০ মিনিট পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এ কারণেই বিশেষজ্ঞরা জানান, অল্প সময়ের পাওয়ার ন্যাপ গভীর ঘুমে প্রবেশের আগেই শরীরকে সতেজ করে তুলতে পারে, যা কর্মদক্ষতা ও মনোযোগ বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

স্বল্প সময়ের ঘুম বা ন্যাপ আপনার সামগ্রিক জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা দিতে পারে। পাওয়ার ন্যাপ মুড উন্নত করতে, ক্লান্তি কমাতে এবং সতর্কতা বাড়াতে সহায়তা করে। আরও এক গবেষণায় জানা গেছে যে, পাওয়ার ন্যাপ রক্তচাপ কমাতে এবং হৃদ্‌স্বাস্থ্যের উন্নতি করতেও ভূমিকা রাখতে পারে— বিশেষ করে দুপুরের শুরুর দিকে নেওয়া হলে।

এ ছাড়াও পাওয়ার ন্যাপ কাজের দক্ষতাও বাড়াতে পারে। নাসার গবেষকরা দেখেছেন, ২০ থেকে ৩০ মিনিট ঘুমানো পাইলটরা ন্যাপ না নেওয়া পাইলটদের তুলনায় ৫০ শতাংশের বেশি সতর্ক এবং ৩০ শতাংশের বেশি দক্ষতার সাথে কাজ সম্পাদন করতে পারেন।

পাওয়ার ন্যাপ কতক্ষণ হওয়া উচিত?
স্লিপ ইনর্শিয়া এড়াতে পাওয়ার ন্যাপ ৩০ মিনিট বা তার কম রাখা উচিত। স্বল্প সময়ের ন্যাপ দীর্ঘ ন্যাপের সঙ্গে যুক্ত কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকিও এড়াতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, অবেসিটি জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ৩০ মিনিটের বেশি সময় ন্যাপ নেন, তারা ন্যাপ না নেওয়া মানুষের তুলনায় উচ্চ রক্তচাপ ও রক্তে সুগারের মাত্রা বৃদ্ধি এ ঝুঁকিগুলোর মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে স্বল্প সময়ের ন্যাপ নেওয়া ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই বাড়তি ঝুঁকি দেখা যায়নি। 

পাওয়ার ন্যাপের জন্য টিপস
দুপুরের শুরুতে, সাধারণত দুপুর ১টা থেকে ৩টার মধ্যে, যখন শরীর স্বাভাবিকভাবে শক্তি হ্রাসের মধ্যে থাকে, তখন ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে। দিনের শেষের দিকে ঘুমানো রাতের ঘুমকে ব্যাহত করতে পারে। তবে, আদর্শ সময় ব্যক্তি অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে।

পাওয়ার ন্যাপ যেন ৩০ মিনিটের বেশি না হয়, সে জন্য একটি অ্যালার্ম সেট করে নেওয়াই ভালো। স্বল্প ঘুম শরীর ও মনকে সতেজ রাখবে।

শরীরের প্রয়োজনীয়তাকে প্রাধান্য দতে হবে। প্রায়ই যদি ঘুমের প্রয়োজন অনুভব করেন, তবে এটি রাতের পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবের সংকেত হতে পারে। সংক্ষিপ্ত ঘুম সাময়িকভাবে শক্তি বাড়াতে সাহায্য করলেও, রাতের ভালো ঘুমকে অগ্রাধিকার দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। প্রায়শই দিনের বেলা ঘুমা ভাব হওয়াও স্লিপ অ্যাপনিয়ার সংকেত হতে পারে, যা একটি সাধারণ সমস্যা। এটি মানুষ ঘুমের সময় স্বল্প সময়ের জন্য শ্বাস বন্ধ করে দেয়। 

ঘুম সব সময় সবার জন্য নয়। কেউ কেউ স্বল্প ঘুমের পরও সতেজ বোধ নাও করতে পারে। সেই ক্ষেত্রে, ঘুম এড়িয়ে রাতের ভালো ঘুমে মনোনিবেশ করাই শ্রেয়।

সূত্র : হার্ভার্ড হেলথ