০২ নভেম্বর ২০২৫, ১৪:৪০

ডায়াবেটিস রোগীরা কি খাবেন, সুস্থ থাকার জন্য মেনে চলুন এই নিয়মগুলো

বেশ কিছু ফল ও সবজি ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে  © সংগৃহীত

ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ। এর ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। এটি দুই ধরনের হয়, টাইপ-১ এবং টাইপ-২। টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীরা দেহে ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না। আর টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধযোগ্য। কিছু নিয়ম মেনে চলার মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি সুষম খাদ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। সঙ্গে জীবনধারাতেও আনতে হবে কিছু পরিবর্তন।

পুষ্টিবিদরা বলছেন, স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ, ব্যায়াম, ডায়বেটিসের ঔষধ বা ইনসুলিন গ্রহণ এবং নিজের ব্লাড গ্লুকোজ পরীক্ষা এগুলো মেনে চললে রোগীর স্বাভাবিক জীবন যাপন সম্ভব। ডায়বেটিসের দীর্ঘমেয়াদি জটিলতাগুলোর মধ্যে পায়ের ক্ষত অন্যতম। পায়ের যত্ন নিশ্চিত করতে নরম জুতো ও মোজা ব্যবহার করা উচিত। 

ডায়বেটিস রোগীদের খাবারের ধরণ অনুযায়ী তাদের দিনে তিন বেলা প্রধান খাবারের পাশাপাশি ২-৩ বার অল্প পরিমাণে স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। পরিমিত পরিমাণে ভাত, রুটি, চিড়া, মুড়ি, খই, ওটস, সবজি ইত্যাদি খেতে হবে। যে খাবারগুলো রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে এমন খাবার এড়িয়ে চলতে হবে যেমন চিনি, গুড়, মধু, মিষ্টি, কনডেন্সড মিল্ক, কোমল পানীয়, জুস, চকলেট, চিনি বা গুড়ের তৈরী খাবার।

মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলার পাশাপাশি ভিটামিন সি যুক্ত ফল খেতে হবে। যেমন কাঁচা আম, কাঁচা পেয়ারা, কচি ডাবের পানি, জামরুল, বরই, তেঁতুল, পানি ফল, কালো জাম, জাম্বুরা, আমড়া, আমলকী। তবে কিছু ফল পরিমিত পরিমাণে খাওয়াই উত্তম। যেমন আপেল, নাশপাতি, পাকা পেঁপে, আম, পেয়ারা, সফেদা, কলা, কাঁঠাল, তরমুজ, আনারস, আঙ্গুর, খেজুর, কিসমিস প্রভৃতি। 

পর্যাপ্ত পরিমাণে সবুজ শাক সবজি খেতে হবে। ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকলি, মূলা, ওলকপি, ক্যাপসিকাম, কাঁচা টমেটো, কাঁচা পেঁপে, শসা, করলা, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, পটল, লাউ, চাল কুমড়া-এ ধরণের সবজিতে কোনো বাঁধা নেই। তবে আলু, মিষ্টি আলু, কচু, খোড়, মোচা, কাঁচা কলা, বিট, বরবটি, সিম, পাকা টমেটো, গাজর, শালগম, কাঁকরোল, কাঁঠালের বিচি, মটরশুটি- এ খাবারগুলো খাবার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে। 

আরও পড়ুন : রক্তে শর্করার পরিমাণ কমাবে যেসব ফল

ঘুমানোর আগে এক কাপ লো ফ্যাট বা ননী ছাড়া দুধ বা টক দই খাওয়া যেতে পারে। ডায়েবেটিস রোগীদের জন্য টকদই বেশ উপকারী। ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়মিত ব্লাড সুগার মাপা উচিত। ব্লাডে সুগার লেভেল বেড়ে যাওয়া যেমন খারাপ তেমন কমে যাওয়াও খারাপ।

রক্তের গ্লুকোজের লেভেল ৩ বা এর নীচে নেমে আসলে এক গ্লাস পানিতে ৩ চা চামচ চিনি বা গ্লুকোজ মিশিয়ে রোগীকে খাওয়া হবে। আবার ডায়াবেটিসের মাত্রা বেড়ে ঘেলেও দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। রোজা রেখেও ব্লাড সুগার পরীক্ষা করা বা ইনসুলিন গ্রহণ করা যাবে।

রোগীদের শরীর চর্চার দিকেও বিশেষ নজর দিতে হবে। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা অথবা হাল্কা ব্যায়াম করার অভ্যাস গরে তুলতে হবে। তবে খাল পেটে বেশিক্ষণ হাঁটা যাবে না। ডায়বেটিস রোগীদের জন্য লাল চালের ভাত বা লাল আটার রুটি অত্যন্ত উপকারী। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। উচ্চ আঁশ বা ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশ উপকারি।

এ ধরনের খাবার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনের পাশাপাশি হজমেও বেশ সহায়তা করে। আদর্শ জীবধারা মেনে চলার মাধ্যমেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তবে এ রোগ শনাক্ত হলে বা উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আর কি খাওয়া উচিৎ বা উচিৎ নয়, সে জন্য পুষ্টিবিদের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।