কোন গ্রুপের রক্তে কমবয়সীদের ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি, কেন?
রক্তের গ্রুপের সঙ্গে ব্রেন স্ট্রোকের সম্পর্ক আছে, এমনটাই জানিয়েছেন আমেরিকার গবেষকেরা। সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড স্কুল অব মেডিসিনের এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, যাঁদের রক্তের গ্রুপ ‘এ’, বিশেষ করে উপগোষ্ঠী ‘এ১’, তাদের কম বয়সেই ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে যাদের রক্তের গ্রুপ ‘ও’, তাদের এ ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে অনেকটাই কম।
১৮ থেকে ৫৯ বছর বয়সি প্রায় ১৭ হাজার মানুষের উপর এ গবেষণা চালানো হয়। তাতে দেখা যায়, ‘এ১’ গ্রুপের রক্তধারীদের দেহে এমন কিছু প্রোটিন তৈরি হয়, যা রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা বাড়ায়। এই জমাট বাঁধা রক্ত মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে, ফলে ইস্কিমিক স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। একই সঙ্গে আরও ছয় লক্ষ মানুষের উপর চালানো বৃহত্তর এক গবেষণাতেও দেখা গেছে, ‘এ’ গ্রুপধারীদের অল্প বয়সে স্ট্রোকের ঝুঁকি ১৮ শতাংশ বেশি, যেখানে ‘ও’ গ্রুপধারীদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি ১২ শতাংশ কম।
আরও পড়ুন: ‘মদপানে মৃত্যু’ ঢাকা মেডিকেল ছাত্রী নন্দিনীর, আসলে কী হয়েছিল?
স্ট্রোক মূলত দুই ধরনের হতে পারে; ইস্কিমিক ও হেমারেজিক। ইস্কিমিক স্ট্রোকে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং রক্ত জমাট বাঁধে। অন্যদিকে হেমারেজিক স্ট্রোকে রক্তনালিগুলো ফেটে গিয়ে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়। গবেষণায় মূলত ইস্কিমিক স্ট্রোকের ঝুঁকির দিকেই আলোকপাত করা হয়েছে, যা ‘এ’ গ্রুপের রক্তধারীদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা গিয়েছে।
স্ট্রোক হওয়ার আগেই কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে বিপদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। হাত-পা হঠাৎ করে দুর্বল হয়ে যাওয়া, কথা জড়িয়ে যাওয়া, মুখ বেঁকে যাওয়া বা শরীরের এক দিক অসাড় হয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এই ধরনের অল্প সময়ের উপসর্গকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে বলা হয় ‘ট্রানজিয়েন্ট ইসকেমিক অ্যাটাক’ বা ‘টিআইএ’। অনেক সময় এটিকে ‘মিনি স্ট্রোক’ও বলা হয়। এ সময় সতর্ক হলে বড় ধরনের স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
স্ট্রোকের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হলো প্রথম সাড়ে চার ঘণ্টা, যাকে চিকিৎসকেরা ‘গোল্ডেন আওয়ার’ বলেন। এই সময়ের মধ্যে হাসপাতালে পৌঁছে সঠিক চিকিৎসা শুরু করা গেলে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ জীবনেও ফিরে যেতে পারেন। চিকিৎসার মধ্যে ইন্টারভেনশন পদ্ধতির মাধ্যমে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করে দেওয়া হয়।
সূত্র: নিউরোলজি জার্নাল।