বাড়ন্ত শিশুর খাদ্য তালিতায় যে ১০ খাবার অবশ্যই রাখবেন
জন্মের ৬ মাস পর থেকেই সন্তানের খাদ্যতালিকায় কী কী খাবার রাখা জরুরি তা নিয়ে চিন্তায় থাকেন অনেক বাবা-মা। জন্মের পর প্রথম আট বছর পর্যন্ত তার বেড়ে ওঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময়কাল। এ সময়টি পরিবর্তনের এবং সে পরিবর্তন শারীরিক ও মানসিক উভয় ধরনের। এ সময় শিশুর স্বাভাবিক বিকাশের জন্য সুষম খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
খাদ্যতালিকা এমন হতে হবে যা শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ যথাযথে ঘটায়। সকলেই চান তার সন্তান যেন স্বাস্থ্যে, দেহের বৃদ্ধিতে হয় সকলের সেরা। বিশেষজ্ঞদের মতে এমন দশ পুষ্টিকর খাবার শিশুর জন্য অবশ্যই প্রস্তুত করতে হবে।
আয়রন সমৃদ্ধ খাবার
বাড়ন্ত বয়সে শিশুকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার দেওয়া উচিত। চাল, গম, বার্লি এবং ওটমিলের মত যেকোনও আয়রন সমৃদ্ধ দানা শস্যই আয়রণের ঘাটতি পূরণ করতে পারে। তাই শিশুকে প্রতিদিন এ ধরনের আয়রন সমৃদ্ধ দানাদার খাবার খাওয়াবেন।
ডাল
শিশুকে নানারকমের ডাল খেতে অভ্যস্ত করে তুলুন। একেকদিন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একেকরকম ডাল রান্না করে খেতে দিন। কেননা ডাল পুষ্টিগুণে ভরপুর। এগুলো প্রোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, লৌহ, ফাইবার এবং পটাসিয়াম সমৃদ্ধ। শিশুকে ডাল দিয়ে খিচুড়ি রান্না করেও খাওয়াতে পারেন। মুগডাল খুব সহজলভ্য এবং শিশুদের জন্য একটি ভালো বিকল্প। তাই পুষ্টিকর এবং ফাইবার-পূর্ণ খাবারের জন্য চালের সঙ্গে অথবা সবজি দিয়ে ডাল রান্না করুন।
বাড়িতে তৈরি খাবার
বাচ্চারা সাধারণত দোকান বা বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার বেশি পছন্দ করে। প্রথমত, তাদেরকে বাইরের খাবারে অভ্যস্ত হতে দেওয়া যাবে না। বাইরের খাবার, প্যাকেটজাত নরম পানীয় অথবা প্রক্রিয়াজাত খাবার একেবারেই চলবে না। তাঁদেরকে ঘরে তৈরি বিভিন্ন ধরনের খাবারে অভ্যস্ত করতে হবে। তবে, বেশি নুন বা মিষ্টি দেওয়া খাবার দেওয়া যাবে না।
ডিম
ডিমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন ডি, আয়রন, এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের একটি উৎকৃষ্ট উৎস। শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ এবং শারীরিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য এই খাবারটি তাঁর খাদ্যতালিকায় থাকা জরুরি।
মাছ
শিশুকে ছোট মাছ বা জিওল মাছ খাওয়ালে খুব ভাল। শিঙি, মাগুরের মতো জিওল মাছ খাওয়াতে পারেন শিশুকে। মাছ থেকে ভরপুর ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পাবে শিশু। ডিমের পাশাপাশি মাছ খাওয়ানো যায়। তবে, একদিনে ডিম, মাছ না রেখে একেকদিন একেকটা রাখা ভালো।
দই
দই প্রোবায়োটিক উপাদানসমৃদ্ধ, যা শিশুর পাচনতন্ত্রকে সুস্থ রাখে। এটি ক্যালসিয়াম ও প্রোটিনের ভাল উৎস এবং হাড়ের গঠনেও সহায়তা করে। দইয়ে থাকা ল্যাকটিক অ্যাসিড শিশুর হজম প্রক্রিয়াকে সাহায্য করে। তবে দুধ, দইয়ে অনেক শিশুর অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।
ফলমূল
আপেল, কলা, পেঁপে, কমলা এসব ফলমূল শিশুর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন এবং খনিজের উৎস। বিশেষ করে ভিটামিন সি এবং আঁশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। শিশুকে দিনের কোনো একটা সময় এগুলো খাওয়াতে পারেন।
সবুজ শাকসবজি
শসা, পালং শাক ইত্যাদি শাকসবজিতে আয়রনের পাশাপাশি ভিটামিন-কে রয়েছে। এগুলো শিশুর হাড়ের স্বাস্থ্য এবং রক্তের সঞ্চালনের জন্য উপকারী। শাকসবজি সবার জন্যই উপকারী। বিশেষ করে শিশুদের শারীরিক শক্তি এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এটি।
মুরগির মাংস
মুরগির মাংসে প্রোটিনের মাত্রা অনেক বেশি। এটি খেলে শরীরের টিস্যু ও পেশির গঠন খুব ভালোভাবে হয়। তাই আপনার শিশুকে চেষ্টা করবেন যাতে তাকে নিয়মিত মুরগির মাংস খেতে দিতে।
বাদাম ও সূর্যমুখী বীজ
সব ধরনের বাদাম বিশেষ করে আখরোট এবং সূর্যমুখী বীজ শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে। এতে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিড শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তাই শিশুকে সব ধরনের বাদাম খাওয়াতে পারেন।
মায়েরা যা মনে রাখবেন
কখনোই শিশুকে জোর করে খাওয়াবেন না। খিদে পেলে সে আবার খেতে চাইবে। একবারে অনেকটা ভাত মেখে খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন না। এতে শিশুর শুরু থেকেই খাবারে অরুচি আসবে। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খাওয়াতে হবে। শিশুর ভাল খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে গেলে মাকে ধৈর্য রাখতেই হবে।
উপরে যে ১০টি খাবারের কথা বলা হয়েছে এর বাইরে আরও অনেক ধরনের খাবার রয়েছে যা আপনার শিশুকে খাওয়াতে পারেন। তবে, অনেক শিশুরই বিভিন্ন রকম খাবারে অ্যালার্জি থাকে, দুধ সহ্য না ও হতে পারে। তাই আপনার শিশুকে কী কী খাওয়াবেন আর কী নয়, তা সন্তানের খাওয়া দাওয়ার উপর লক্ষ রেখে এবং চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদের থেকে আলোচনার মাধ্যমেই জেনে নেওয়াই ভাল।