২৫ মে ২০২৫, ১৯:১৩

হরমোন ভারসাম্যহীনতা থেকে মাসিক অনিয়ম, সমাধান কী?

হরমোন ভারসাম্যহীনতা থেকে মাসিক অনিয়ম  © সংগৃহীত

বর্তমানে অল্প বয়সী অনেক নারী ও কিশোরীর মাসিক অনিয়মিত হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে পলিসিস্টিক ওভারি ডিজঅর্ডার (PCOD) বা পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (PCOS)। ১৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ তুলনামূলক বেশি।

এই জটিল হরমোনজনিত সমস্যায় আক্রান্ত নারীদের ডিম্বাশয়ে একসঙ্গে মালার মতো অনেকগুলো ছোট ছোট সিস্ট গঠিত হয়। ফলে ডিম্বাশয়ের স্বাভাবিক কাজ, যেমন ডিম্বাণু উৎপাদন ও হরমোন নিঃসরণে ব্যাঘাত ঘটে। মূলত, নারীর শরীরে পুরুষ হরমোন অ্যান্ড্রোজেন-এর মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলে এই সমস্যা দেখা দেয়।

হরমোন ভারসাম্য হারানোই মূল কারণ
যখন মেয়েলি হরমোনের তুলনায় অ্যান্ড্রোজেনের মাত্রা বেড়ে যায়, তখন ডিম্বাণুগুলো পরিপক্ব হতে পারে না। ফলে নির্দিষ্ট সময়ে তা মাসিকের মাধ্যমে বের না হয়ে সিস্টে পরিণত হয় এবং ধীরে ধীরে তা ডিম্বাশয়ে জমা হতে থাকে। এতে ডিম্বাশয় ফুলে ওঠে, মাসিক চক্র অনিয়মিত হয়ে পড়ে এবং জরায়ুর অভ্যন্তরীণ পর্দা অস্বাভাবিকভাবে পুরু হয়ে যায়।

এ রোগের পেছনে বংশগত কারণ, পারিবারিকভাবে ডায়াবেটিসের ইতিহাস, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এবং অতিরিক্ত ওজন অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করে। ইনসুলিন যথাযথভাবে কাজ না করলে রক্তে এর পরিমাণ বেড়ে গিয়ে ডিম্বাশয়ে পুরুষ হরমোনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়, যা সমস্যাকে আরও ঘনীভূত করে।

খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপন দায়ী
প্যাকেটজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত চিনি ও চর্বিযুক্ত খাবার, সফট ড্রিংকস, ফাস্ট ফুড, রাসায়নিক যুক্ত খাদ্যসামগ্রী, অনিয়মিত ঘুম, মানসিক চাপ ও শারীরিক পরিশ্রমের অভাব—সবকিছু মিলেই এই রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।

লক্ষণ দেখে সাবধান হোন
অল্প বয়সে হঠাৎ ওজন বেড়ে যাওয়া (বিশেষ করে পেট ও শরীরের ওপরের অংশে), অনিয়মিত মাসিক, দীর্ঘ সময় মাসিক না হওয়া (অলিগোমেনোরিয়া বা অ্যামেনোরিয়া), মুখে বা শরীরে অবাঞ্ছিত লোম গজানো, তৈলাক্ত ত্বক ও ব্রণ, মাথার চুল পড়া, টাক পড়া এবং ঘাড়ে বা শরীরের অন্যান্য অংশে কালো দাগ—এই উপসর্গগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

ভুল ধারণা বিপজ্জনক
দুর্ভাগ্যজনকভাবে অনেক সময় কিশোরী মেয়েদের মাসিক অনিয়মিত হলে পরিবার তা হালকাভাবে নেয়। “বিয়ের পর ঠিক হয়ে যাবে”—এমন ভ্রান্ত ধারণা অনেকের মধ্যে প্রচলিত। কিন্তু চিকিৎসাবিদদের মতে, এ ধরনের অবহেলা ভবিষ্যতে বন্ধ্যত্বসহ নানা জটিলতায় রূপ নিতে পারে। তাই প্রথম থেকেই উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণ করাই শ্রেয়।

চিকিৎসা ও করণীয়
PCOS-এর জন্য এখন পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই, তবে সঠিক লাইফস্টাইল মেনটেন এবং হরমোন নিয়ন্ত্রণে ওজন কমানো, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন, নিয়মিত ব্যায়াম, মানসিক চাপ কমানো এবং প্রয়োজনমতো ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।