২৪ মে ২০২৫, ১৯:০৭

কিডনি বিকল হওয়ার আগেই সতর্ক হোন

কিডনি রোগ  © সংগৃহীত

কিডনি রোগ মানেই শুধু কিডনি রোগীদের ব্যাপার নয়। এটি এক নীরব ঘাতক, যা আমাদের অজান্তেই শরীরের ভেতরে ক্ষয় সাধন করে। অনেক সময় শরীরে কোনো উপসর্গ না থাকলেও কিডনি তার কার্যক্ষমতা হারাতে থাকে। যখন উপসর্গ প্রকাশ পায়, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। তাই সুস্থ থাকলেও সবারই কিডনি সচেতনতা জরুরি।

কিভাবে রাখবেন কিডনি ভালো?
সুস্থ কিডনির প্রথম শর্ত– পর্যাপ্ত নিরাপদ পানি পান। ডায়রিয়া, জ্বর বা ব্যায়ামের পরে দেহে পানির ঘাটতি পূরণে সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য পানি প্রয়োজনীয়তার মাত্রা আরও বেশি।

খাদ্যাভ্যাসেও আনতে হবে পরিবর্তন। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, সুষম খাবার খাওয়া, অতিরিক্ত লবণ বর্জন করা এবং রান্নায় মসলার সঠিক ব্যবহার কিডনির জন্য উপকারী। সেদ্ধ ও বেকড খাবার খেতে হবে বেশি। ট্রান্স ফ্যাট, অতিরিক্ত চর্বি, মিষ্টি ও রিফাইন্ড খাবার এড়িয়ে চলা বাঞ্ছনীয়।

রোজ অন্তত ৩০ মিনিট করে ব্যায়াম যেমন হাঁটা, দৌড়ানো বা হালকা ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করতে হবে। ধূমপান, পান-জর্দা ও অ্যালকোহল কিডনির রক্তপ্রবাহ হ্রাস করে। এগুলো থেকে দূরে থাকা কিডনি রক্ষার জন্য অপরিহার্য।

ঘুম ও মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গেও কিডনির সম্পর্ক রয়েছে। ঘুমের ঘাটতি এবং মানসিক চাপ দীর্ঘ মেয়াদে কিডনির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। পাশাপাশি, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যথানাশক বা অন্যান্য ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকা জরুরি। কিডনির অনেক রোগই নিয়মিত ব্যথানাশক গ্রহণের ফলে হয়ে থাকে।

বয়স বাড়লে সচেতনতা আরও জরুরি
৪০ বছরের পর থেকে রক্তচাপ, রক্তে চর্বির মাত্রা, ডায়াবেটিস এবং প্রস্রাবের সাধারণ পরীক্ষাগুলো বছরে অন্তত একবার করা উচিত। প্রস্রাবে প্রোটিন বা সুগার থাকলে তা হতে পারে কিডনির ক্ষতির ইঙ্গিত। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস থাকা ব্যক্তিরা নিয়মিত কিডনি পরীক্ষা করিয়ে রোগকে আগেই শনাক্ত করতে পারবেন।

গবেষণা বলছে, উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বহু মানুষ জানেন না তারা আক্রান্ত, আবার অনেকে জেনেও নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হন। অথচ এই রোগগুলোই ধীরে ধীরে কিডনি বিকলের প্রধান কারণ।

লক্ষণগুলো চিনুন, সময়মতো ব্যবস্থা নিন
ক্ষুধামান্দ্য, বমিভাব, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, পায়ে পানি আসা ইত্যাদি কিডনি সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। এসব উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি রোগ থাকলে তার নিয়মিত চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা উচিত।

সবাইকে হতে হবে সচেতন
কেবল রোগী বা তার পরিবার নয়, চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, নীতিনির্ধারক ও সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষেরই কিডনি স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া দরকার।

দেশে এখনো অনেকেই কিডনি রোগের সাধারণ তথ্য জানেন না। ভুল ধারণা ও অসচেতনতাই বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতি বদলাতে হলে স্বাস্থ্য শিক্ষা, প্রচারণা এবং ব্যক্তিগত দায়িত্ববোধের বিকাশ প্রয়োজন।

নীরব ঘাতক কিডনি রোগ প্রতিরোধযোগ্য, যদি আগে থেকেই সচেতনতা গড়ে তোলা যায়। তাই এখনই সময়, নিজেকে এবং আশেপাশের সবাইকে কিডনি সুস্থতার বার্তা পৌঁছে দেওয়ার। কারণ কিডনি ভালো তো জীবন ভালো।