২২ মে ২০২৫, ২২:০০

ভিটামিনের অভাব ওষুধ খেয়ে মেটাচ্ছেন? লাভের চেয়ে ক্ষতি হতে পারে বেশি

ওষুধ এবং সাপ্লিমেন্ট  © সংগৃহীত

আজকের ব্যস্ত জীবনে শরীরকে চাঙ্গা রাখতে অনেকেই হাত বাড়াচ্ছেন ভিটামিন সাপ্লিমেন্টের দিকে। কিন্তু জানেন কি, ভিটামিনের ঘাটতি মেটাতে ওষুধ খাওয়া যেমন উপকারী হতে পারে, তেমনই অনিয়মিত বা অতিরিক্ত সেবনে তা হয়ে উঠতে পারে মারাত্মক ক্ষতির কারণ? 

যুক্তরাজ্যের গবেষণা সংস্থা মিনটেলের তথ্যানুযায়ী বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষ এখন নিয়মিত ভিটামিন বা মিনারেল সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করে।

ভিটামিন কি
ভিটামিন এক ধরনের জৈব খাদ্য উপাদান, যা সাধারণত খাদ্যে অতি অল্প পরিমাণে থাকে। শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ এবং কোষের কার্যক্রম ঠিক রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ভিটামিন। আমাদের শরীর নিজে থেকে বেশিরভাগ ভিটামিন তৈরি করতে পারে না আর তাই অনেকেই প্রাকৃতিক উৎস বাদ দিয়ে এর চাহিদা পূরণে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই নিজে থেকে সাপ্লিমেন্ট খেয়ে থাকেন।

নিজ থেকে ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট খেলে কী হতে পারে
কেউ যদি শরীরে ভিটামিনের সঠিক পরিমাণ বজায় রাখতে চান তবে তাকে প্রোটিন এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। ব্যাপারটা এমন নয় যে, পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার না খেয়ে কেবল মাল্টিভিটামিন খেলেই স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। মাল্টিভিটামিনের মাত্রাতিরিক্ত ডোজ কিডনি এবং লিভারের ক্ষতি করতে পারে। এর ফলে কিডনি ফেইলিউর এবং লিভার সংক্রান্ত জটিলতা বাড়তে পারে। শরীরের চাহিদার বাড়তি যেকোনো খাদ্য উপাদানই ক্ষতির কারণ হতে পারে। 

একজন মানুষের কি রোজ ভিটামিন খাওয়া দরকার
ভিটামিন দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি পানিতে দ্রবণীয় এবং আরেকটি চর্বিতে দ্রবণীয়। চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন (ভিটামিন এ, ডি, ই এবং কে) আপনার শরীরের মাধ্যমে জমা হয়। সুতরাং প্রতিদিন এরকম ভিটামিন না খেলেও আপনার শরীরে এই ভিটামিনগুলোর সরবরাহ বজায় থাকবে। যদি আপনি অতিরিক্ত পরিমাণে ভিটামিন গ্রহণ করেন তাহলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে শরীরে। সুতরাং কখনোই অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করা যাবে না।
পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন ( ভিটামিন সি এবং বি ভিটামিন যেমন ফলিক অ্যাসিড) আপনার শরীরের মাধ্যমে জমা হয় না, সুতরাং প্রতিদিন এমন এমন ভিটামিন গ্রহণ করে এর সরবরাহ ঠিক রাখতে হবে। যদি আপনি প্রয়োজনের তুলনায় কোনও একটি ভিটামিন বেশি গ্রহণ করেন তবে অতিরিক্ত মূত্রত্যাগ করতে হবে আপনাকে। যদিও ভিটামিন বি১২ আপনার লিভারের মাধ্যমে শরীরে জমা হতে পারে।

কত ধরনের ভিটামিন আপনার প্রয়োজন
আপনার শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেলগুলো শুধু আপনার জন্যই প্রযোজ্য হবে। আপনার বয়স, অ্যাক্টিভিটি লেভেল, লিঙ্গ এবং অন্যান্য বিষয়গুলোর ওপর এটি নির্ভর করে। বিশেষজ্ঞরা এজন্য গাইড করে থাকেন।বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ বিশ্বাস করেন যে ভিটামিন ডি বাদে আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় সমস্ত ভিটামিন ও মিনারেল পেতে পারি একটি স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাদ্যাভ্যাস থেকে। যদিও, বিভিন্ন দেশের খাদ্য ও পুষ্টি সমীক্ষায় দেখা গেছে, অনেকেই আছেন যারা খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে ভিটামিন ও মিনারেলের চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ হন।ফলে তারা চেষ্টা করেন মাল্টিভিটামিন সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করে সেই ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করে যেন তারা ভালো থাকতে পারেন।

সাপ্লিমেন্ট কাদের জন্য দরকার
যারা দিনের বেলায় রোদের সংস্পর্শে আসতে পারেন না তাদের জন্য ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট নেয়া খুব জরুরি। যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের শরৎ এবং শীতকালে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট নেয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে এনএইচএস। কিন্তু ভিটামিন ডি পাবেন একদম বিনামূল্যে, যদি আপনি নিয়মিত সূর্যের আলোতে যান। বিশেষজ্ঞদের মতে খাবার দিয়ে শরীরের ভিটামিন ডি’র চাহিদা পূরণ হয় খুব কমই। এই ভিটামিন শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং সূর্যের আলো ছাড়া মানুষের শরীর ভিটামিন ডি তৈরি করতে পারে না।
চিকিৎসকরা সাধারণত ক্যালসিয়ামের জন্য নিয়মিতভাবে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ও দুধজাতীয় খাবার খাওয়ার পাশাপাশি প্রতিদিন ১৫ থেকে ৩০ মিনিট সূর্যের আলোতে থাকার কথা বলেন।

যাদের ক্ষুধা কম এবং বয়স্ক তারা প্রয়োজনীয় মাল্টিভিটামিন গ্রহণ করে উপকৃত হতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বয়স্ক বা ঘরে যারা বেশিরভাগ সময় থাকেন তাদের ক্যালসিয়ামসহ ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা উচিত।

আপনি যদি ডায়েটে থাকেন তাহলে বেশ কিছু খাবার পরিমিত গ্রহণ করতে হচ্ছে আপনাকে। লাইফস্টাইল হোক বা ওজন কমানোর জন্য হোক নির্দিষ্ট কোনও ডায়েটে থাকলে ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা উচিত শরীরের পুষ্টির জন্য। আর আপনি যদি লো-ক্যালরি ডায়েটে থাকেন তাহলে মাল্টিভিটামিন গ্রহণ করা উচিত চিকিৎসকের পরামর্শে।

কিশোরী এবং নারী যাদের পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত হয় তারা হয়ত আয়রনের ঘাটতি পূরণে যথেষ্ট খাবার খান না। তাদের আয়রন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা জরুরি। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ডায়েট অ্যান্ড নিউট্রিশন সার্ভের তথ্য অনুযায়ী, ৩৫-৪৯ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে চার দশমিক আট শতাংশই আয়রন ঘাটতিজনিত অসুখ অ্যানিমিয়ায় ভুগছেন। আর আয়রন স্বল্পতায় ভুগছেন সাড়ে ১২ শতাংশ নারী। সবসময় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আয়রন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা উচিত।

যে সব নারী গর্ভধারণের চেষ্টা করছেন এবং যারা গর্ভাবস্থার প্রথম ১২ সপ্তাহে আছেন তাদের ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। এটি তাদের সন্তানদের ‘স্পিনা বিফিডা’র মতো নিউরাল টিউব ত্রুটির ঝুঁকি হ্রাস করে।

অতিরিক্ত ভিটামিন: উপকার নয়, ক্ষতি
শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি যেমন ক্ষতিকর, অতিরিক্ত গ্রহণও তেমনি বিপজ্জনক। উদাহরণস্বরূপ: ভিটামিন এ অতিরিক্ত গ্রহণে যকৃতের ক্ষতি, মাথাব্যথা, বমি ও দৃষ্টিশক্তির সমস্যা হতে পারে। ভিটামিন ডি অতিরিক্ত গ্রহণে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বেড়ে কিডনি ও হৃদ্‌যন্ত্রের জটিলতা তৈরি করতে পারে। আয়রন সাপ্লিমেন্ট: অপ্রয়োজনে গ্রহণ করলে পেটের সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য এমনকি আয়রন অতিরিক্ত জমে শরীরে বিষক্রিয়া হতে পারে।

চিকিৎসকের পরামর্শ কেন গুরুত্বপূর্ণ
প্রতিটি মানুষের শরীর ও স্বাস্থ্যগত চাহিদা আলাদা। শুধু ক্লান্তি লাগছে বলে ভিটামিন খাওয়া ঠিক নয়—এর পেছনে অন্য কোনো কারণও থাকতে পারে। চিকিৎসক প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে বুঝতে পারেন কোন ভিটামিনের ঘাটতি আছে এবং কী মাত্রায় সাপ্লিমেন্ট প্রয়োজন।