সোরিয়াসিস কি শুধু ত্বকের রোগ? সত্যটা জেনে নিন এখনই
সোরিয়াসিস হলো একটি অসংক্রামক চর্মরোগ, যা সাধারণত হাত-পা, কনুই, হাঁটু এবং শরীরের নিচের পেছনে লাল দানা বা ফুসকুড়ির মতো চিহ্ন দিয়ে শুরু হয়। এসব দানার উপরে ধীরে ধীরে সাদা, মাছের আঁশের মতো আস্তরণ সৃষ্টি হয়। এই আস্তরণ খোঁচালে ছোট ছোট রক্তক্ষরণ হতে পারে। অনেক সময় সোরিয়াসিসে আক্রান্ত ত্বক চুলকায় না। মাথার ত্বকেও এর প্রভাব পড়তে পারে, যেখানে মরা ত্বক সাদা গুঁড়োর মতো ঝরে, যা খুশকি ভেবে ভুল চিকিৎসা হতে পারে।
সোরিয়াসিস শুধুমাত্র ত্বকের রোগ নয়, এটি কখনো কখনো পুরো শরীরে পুঁজ ভরা ফুসকুড়ি সৃষ্টি করে জ্বালা ও জ্বরের কারণ হতে পারে। এমনকি তীব্র ক্ষেত্রে এক্সফোলিয়েটিভ ডারমাটাইটিস নামে গম্ভীর প্রদাহ হতে পারে, যা হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। কিছু রোগীর সন্ধি আক্রান্ত হয়ে সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস হতে পারে, যার ফলে হাতের সন্ধিগুলো বিকৃত ও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই রোগের শুরু থেকেই সঠিক চিকিৎসা নেওয়া খুব জরুরি।
জীবনধারা ও যত্ন
সোরিয়াসিস পুরোপুরি সেরে না গেলেও এটিকে নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ জীবনযাপন সম্ভব। পারিবারিক ইতিহাস থাকলে বিশেষভাবে সতর্ক থাকা উচিত। ধূমপান সম্পূর্ণ বাদ দিতে হবে কারণ এটি রোগ বাড়ায়। ওজন কমানো এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ রোগের উন্নতিতে সহায়ক। লাল মাংস ও টমেটো এড়ানো ভালো, কারণ এগুলোতে থাকা অ্যারাকিডনিক অ্যাসিড সমস্যা বাড়াতে পারে। কাটাছেঁড়া বা সার্জারির পর flares হতে পারে, তখন অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
কিছু ওষুধ যেমন বিটা ব্লকার (রক্তচাপের জন্য) বা ম্যালেরিয়ার ওষুধ সোরিয়াসিস জটিল করে তুলতে পারে; তাই নতুন কোনো চিকিৎসা শুরু করার আগে অবশ্যই নিজের রোগের কথা জানাতে হবে।
খাবারে বিশেষ যত্ন
বাদাম, সামুদ্রিক মাছ ও ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ মাছের তেল, সবুজ শাক-সবজি সোরিয়াসিসে উপকারী। রোদে সময় কাটানোও ভিটামিন ডি সরবরাহ করে, যা রোগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। শীতকালে ত্বক শুষ্ক হয়ে রোগের অবস্থা খারাপ হতে পারে, তাই নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার জরুরি। গর্ভাবস্থায় ওষুধ বন্ধ করতে হতে পারে, ফলে flares বাড়তে পারে, তাই সন্তান ধারণের আগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
চিকিৎসার ধরন
মৃদু ক্ষেত্রে স্টেরয়েড জাতীয় মলম, ক্যালসিপট্রিওল বা ইমিউনোমডুলেটর মলম ব্যবহার করা হয়। প্রয়োজন হলে ময়েশ্চারাইজারও দেওয়া হয়। উন্নত বা বিস্তৃত ক্ষেত্রে মুখে মিথোট্রেক্সেট, সাইক্লোস্পোরিন, এসিট্রেসিন জাতীয় ওষুধ দেয়া হয়। তাতেও কাজ না হলে বায়োলজিক ওষুধ যেমন এডালিমুমাব, ইনফ্লিক্সিমাব, ইটানারসেপ্ট ব্যবহার করা হয়, তবে এসব ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেশি হওয়ায় বিশেষজ্ঞ তত্ত্বাবধান আবশ্যক। বাংলাদেশে বর্তমানে ইন্টারলিউকিন-১৭ অ্যান্টাগনিস্ট পাওয়া যায়, তবে দাম কিছুটা বেশি।
কিছু ক্ষেত্রে ফটোথেরাপি, আলট্রাভায়োলেট রশ্মি চিকিৎসাও প্রযোজ্য। নখ আক্রান্ত হলে ইনজেকশন দেয়া হয়। সন্ধি আক্রান্ত হলে রুম্যাটোলজিস্ট বা বাতরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ প্রয়োজন।
সচেতনতা ও জীবনযাপন
বিশ্বে প্রায় ২-৩ শতাংশ মানুষ সোরিয়াসিসে আক্রান্ত। রোগ পুরোপুরি সেরে না গেলেও সঠিক চিকিৎসা ও জীবনযাপন করলে স্বাভাবিক জীবন যাপন সম্ভব। রোগ ও চিকিৎসার কারণে রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে, তাই ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, আদর্শ ওজন বজায় রাখা।