২১ মে ২০২৫, ১৬:৩৮

হঠাৎ রাগ, কান্না, অবসাদ—পিএমএস কি এর পেছনে দায়ী?

মুড সুইং  © সংগৃহীত

অনেক নারী হঠাৎ হঠাৎ মেজাজ পরিবর্তনের শিকার হন, যাকে সাধারণভাবে মুড সুইং বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ, কেউ হাসিমুখে কথা বলতে বলতে হঠাৎ চুপ হয়ে যেতে পারেন, আবার কিছুক্ষণ পরেই স্বাভাবিক হয়ে যান। পিরিয়ড শুরুর আগের কয়েকদিনে এ ধরনের আচরণ আরও বেশি দেখা যায়। অনেকেই এই সময়ে অস্বস্তি, রাগ, খিটখিটে মেজাজ বা গভীর মানসিক চাপে ভোগেন। এসব লক্ষণকে সম্মিলিতভাবে প্রি-মিনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম বা পিএমএস বলা হয়। অনেকে মুড সুইংকে মানসিক অবস্থা বদলের ‘রোলার কোস্টার’ বলেও অভিহিত করেন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মুড সুইংয়ের মূল কারণ নারীদের দেহে হরমোনের পরিবর্তন। পিরিয়ড সাইকেলের বিভিন্ন পর্যায়ে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের মাত্রা ওঠানামা করে, যার প্রভাব পড়ে নারীদের মেজাজ ও আবেগে। বিশেষ করে ওভুলেশন পরবর্তী সময়ে ইস্ট্রোজেনের পরিমাণ দ্রুত কমে গেলে মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা দেখা দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, এই সময়ে সেরেটোনিন নামক ব্রেইন কেমিক্যালের মাত্রাও কমে যেতে পারে, যা বিষণ্নতা, হতাশা ও উদ্বেগ সৃষ্টি করে। পিরিয়ড শুরুর আগে অনেকের শরীরেও পরিবর্তন দেখা দেয়—পেটব্যথা, মাথা ধরা, অস্বস্তি বা খাওয়ার অনীহা—যেগুলোও মুড সুইংয়ের কারণ হতে পারে।

পিএমএস বা মুড সুইংয়ের কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো: হঠাৎ রেগে যাওয়া, ছোট ছোট বিষয়েও অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখানো, মন খারাপ থাকা বা অতীত নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভোগা, সামান্য কারণেও কান্নাকাটি, আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি ও কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলা। এসবই ইঙ্গিত দেয় যে আপনি হয়তো পিএমএসে আক্রান্ত।

যদিও মুড সুইংয়ের স্থায়ী কোনো চিকিৎসা নেই, কিছু অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। নিয়মিত ব্যায়াম, যেমন হাঁটা বা হালকা এক্সারসাইজ, শরীরে এন্ডোরফিন নিঃসরণ ঘটায়, যা মুড ভালো রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা জরুরি। জাংক ফুড ও ক্যাফেইন এ সময় এড়িয়ে চলাই ভালো। মানসিক চাপ কমানোর জন্য স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টও গুরুত্বপূর্ণ, যেমন: মেডিটেশন, ভালো ঘুম এবং প্রয়োজন হলে কাউন্সেলিং।

মুড সুইং কোনো ‘ন্যাকামি’ নয়, বরং এটি একটি বাস্তব ও স্বাভাবিক শারীরিক-মানসিক পরিবর্তনের অংশ। তাই নারীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া, বোঝা ও মানসিক সমর্থন দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের এই বিষয়ে সচেতনতা তৈরি হওয়া উচিত, যাতে ভুল ধারণা নয়, বরং সহানুভূতি ও সচেতনতা দিয়ে সমস্যার সমাধানে এগিয়ে যাওয়া যায়।