লিভার বড় হয়ে গেলে কী করবেন?
মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর মধ্যে যকৃৎ বা লিভার অন্যতম। এটি পেটের ওপরের ডান পাশে অবস্থান করে এবং প্রতিনিয়ত শরীরের হজম, বর্জ্য নিষ্কাশন ও শক্তি সঞ্চয়ের কাজে নিরবিচারে কাজ করে যাচ্ছে। যকৃৎ খাবারের হজমে সহায়ক পিত্তরস তৈরি করে এবং শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত গ্লুকোজকে গ্লাইকোজেনে রূপান্তর করে শক্তি হিসেবে সংরক্ষণ করে।
তবে কখনো আলট্রাসনোগ্রাম বা শারীরিক পরীক্ষার সময় ধরা পড়ে যকৃৎ বড় হয়ে গেছে। তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে—কেন এমন হয়?
যকৃৎ বড় হওয়ার সম্ভাব্য কারণ
ভাইরাস সংক্রমণ: হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি ও ই ভাইরাস ছাড়াও হারপিস সিম্পলেক্স, ইপস্টেইন-বার ও সাইটোমেগালো ভাইরাসের সংক্রমণ যকৃৎ বড় করার একটি সাধারণ কারণ।
ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক: টাইফয়েড (সালমোনেলা টাইফি), যক্ষ্মা (টিউবারকিউলোসিস) এবং কিছু ছত্রাকের সংক্রমণে যকৃৎ আকারে বড় হয়ে যেতে পারে।
বিপাকীয় জটিলতা ও চর্বি জমা: শরীরে বিপাকক্রিয়া বিঘ্নিত হলে বা যকৃতে অতিরিক্ত চর্বি জমলে ফ্যাটি লিভারের সৃষ্টি হয়। এটি অনিয়ন্ত্রিত থাকলে ভবিষ্যতে ক্যানসারের ঝুঁকি তৈরি হয় এবং লিভারের আকারও বড় হয়।
ক্যানসার ও টিউমার: শরীরের অন্যান্য অংশ থেকে ক্যানসার যকৃতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। পাশাপাশি যকৃতেই সরাসরি সিস্ট, টিউমার বা ক্যানসার হলে তার আকৃতি অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে।
হৃদ্রোগ ও অতিরিক্ত রক্ত জমা: হৃদ্যন্ত্র, ফুসফুস কিংবা রক্তনালির কিছু সমস্যায় যকৃতে অতিরিক্ত রক্ত জমে এটি ফুলে যেতে পারে।
মদ্যপান: দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত মদ্যপান যকৃৎ ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং এটি আকারে বড় হওয়ার একটি প্রধান কারণ।
যেসব উপসর্গ দেখা দিতে পারে
অনেক সময় যকৃৎ বড় হলেও তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। এ কারণে অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না যে তাঁর লিভারে সমস্যা হয়েছে। তবে কিছু সাধারণ উপসর্গ হলো—পেটের ডান পাশে চাপ বা ভারী অনুভব, হালকা ব্যথা বা গুটির মতো কিছু অনুভব হওয়া, চোখ বা শরীর হলুদ হয়ে যাওয়া (জন্ডিস), চুলকানি, পেট বা পায়ে পানি জমা, রক্ত বমি বা রক্তমিশ্রিত মলএসব লক্ষণ দেখা গেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
কী করবেন
যকৃৎ বড় হয়ে গেলে প্রথমেই জানতে হবে এর কারণ। এজন্য প্রয়োজন যথাযথ পরীক্ষা–নিরীক্ষা এবং পরিপাকতন্ত্র ও লিভার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ। সঠিক রোগ নির্ণয়ের ভিত্তিতে চিকিৎসা শুরু করলেই এই সমস্যা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।