১৫ জুলাই ২০২১, ২০:০৮

১০১ বছর বয়সী নারীর সন্তান জন্ম দেওয়ার খবরটি ভুয়া

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের ১০১ বছর বয়সী রোজা ক্যাম্পফিল্ড তাঁর নাতনীর মেয়ের সঙ্গে  © সংগৃহীত

অত্যন্ত বয়োজ্যেষ্ঠ এক নারীর কোলে একটি নবজাতকের ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে তিনি ১০১ বছর বয়সে সন্তান জন্ম দিয়েছেন। এমডি ফারহানা নামক একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে করা পোস্টে বলা হয়, ইতালির আনাতোলিয়া ভার্তাদেলার কোল আলো করে এলো ফুটফুটে পুত্রসন্তান। তবে ওভারি ট্রান্সপ্লান্টের মাধ্যমে মা হয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন শতায়ু এই বৃদ্ধা। ইউরোপীয় আইন অনুযায়ী ওভারি ট্রান্সপ্লান্ট বেআইনি। তবে আনাতোলিয়া জানিয়েছেন, তুরস্কের এক বেসরকারি হাসপাতালে তিনি তার সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। তুরস্কে ওভারি ট্রান্সপ্লান্ট বৈধ।

অথচ এসব তথ্য সঠিক নয়। ওই নারী ইতালির নন, তাঁর নামও আনাতোলিয়া ভার্তাদেলা নয়, ছবিতে কোলে থাকা সন্তান তাঁর নিজের নয়, তিনি সন্তান জন্ম দেননি, সেটি পুত্রসন্তান নয় আর ওভারি ট্রান্সপ্লান্টের মাধ্যমে মা হননি তিনি। ইউরোপে ওভারি ট্রান্সপ্লান্ট বেআইনি হওয়ায় তিনি এ কাজের জন্য তুরস্ককে বেছে নিয়েছেন বলে দাবি করা তথ্যটিও বানোয়াট।

গত ১২ জুলাই ‘সময়লাইভ’ নামক একটি ফেসবুক পেজ থেকে এমন দাবি করে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। শিরোনাম ছিল ‘১০১ বছর বয়সে সন্তানের জন্ম দিলেন বৃদ্ধা, শোরগোল দেশজুড়ে!’ একই শিরোনামে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ‘টলি টাইমস’ নামক পেজের পোস্টটিতে এক হাজারের বেশি রিয়্যাক্ট ও শতাধিক মন্তব্য পড়েছে।

২০১৬ সালের ২০ আগস্ট ‘১০১ বছর বয়সে সন্তানের জন্ম দিলেন বৃদ্ধা’ শিরোনামে জাগো নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এটি তাদের ফেসবুক পেজে শেয়ার করা হলে ১৪ হাজার লাইক এবং ১৪০০ এরও বেশি শেয়ার হয়। এ ছাড়া  সময় লাইভবেঙ্গল টাইমসংবাদ বাংলানিউজ ইনসাইটসসহ এ ধরনের কিছু অনলাইন পোর্টালে কাছাকাছি শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

জাগো নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ভুল তথ্য সংবলিত প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট

যুক্তরাজ্যের ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের ১০১ বছর বয়সী রোজা ক্যাম্পফিল্ড তাঁর নাতনির মেয়ের সঙ্গে তোলা ছবিটি ভাইরাল হয়। ২০১৫ সালের ১ এপ্রিল রোজা ক্যাম্পফিল্ডের মৃত্যুসংবাদ সংবলিত প্রতিবেদনটিতে তাঁর সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে ডেইলি মেইল।

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজও রোজা ক্যাম্পফিল্ডের মৃত্যুসংবাদ প্রকাশ করে। সেখানেও তাঁর নাতনির মেয়ের সঙ্গে তোলা ছবিটি যুক্ত করা হয়। এই প্রতিবেদনে বলা হয়, রোজা ১৯১৩ সালে ১৩ জুন জন্মগ্রহণ করেন।

সম্প্রতি সংবাদ সংস্থা এএফপির বাংলা ফ্যাক্ট চেক সাইটে এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

এ ছাড়া ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট তসলিমা নাসরিন তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক একাউন্টে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইনের এ সংক্রান্ত ভুল তথ্য সংবলিত একটি প্রতিবেদনের লিঙ্ক পোস্ট করেন। পরে অবশ্য আনন্দবাজার পত্রিকা ভুল বুঝতে পেরে প্রতিবেদনটি সরিয়ে নেয়।

তসলিমা নাসরিনের ফেসবুক স্ট্যাটাস ও আনন্দবাজার পত্রিকার অনলাইনের প্রতিবেদন মুছে দেওয়ার স্ক্রিনশট

ফেসবুকে তসলিমা লেখেন, ‘ভাই আনন্দবাজার, ইহা কী করিয়াছো তুমি? একটি মহিলার ছবি ছাপাইয়া তাঁহার সম্পর্কে যে গল্পটি বলিয়াছো, তাহা তো সঠিক নহে। ১০১ বছর বয়সী ইতালির আনাতোলিয়া ভার্তাদেলা পুত্র সন্তান জন্ম দিয়াছে দাবি করিয়াছো। কিন্তু মহিলাটি আরিজোনার রোজা ক্যামফিল্ড। কোলে তাঁহার পুত্র ফ্রান্সিস নহে। কোলের শিশুটি তাঁহার নাতির ঘরের পুতি কায়লি। ইন্টারনেট হইতে খবর সংগ্রহ করিলে অনুগ্রহ করিয়া ছাপাইবার পূর্বে যাচাই করিয়া লইতে ভুলিও না।’