ডায়াবেটিস আছে কি না যেভাবে বুঝবেন
ডায়াবেটিস একটি অত্যন্ত জটিল রোগ। এর ফলে রক্তে গ্লুকোজের (বা ব্লাড সুগার) মাত্রা অত্যাধিক পরিমাণে বেড়ে যায়। অনেক দিন ধরে রক্তে উচ্চ মাত্রায় গ্লুকোজ থাকলে হৃদপিন্ড, রক্তনালী, চোখ, কিডনি ও স্নায়ুর ক্ষয় সাধন হয়। সাধারণত দুই ধরনের ডায়াবেটিস রোগী পাওয়া যায়, টাইপ-১ ডায়াবেটিস এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিস। আমেরিকান ডায়াবেটিক এ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, বিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীদের ৫ শতাংশ টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং বাকি ৯৫ শতাংশ টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।
টাইপ-১ ডায়াবেটিস হলে মানবদেহের অগ্ন্যাশয় (প্যানক্রিয়াস) ইনসুলিন হরমোন তৈরি প্রায় বা সম্পূর্নভাবে বন্ধ করে দেয়। সাধারণত এটি কম বয়সীদের ক্ষেত্রে বেশি হয়। এই ইনসুলিন হরমোন দেহকোষের তালা খুলে রক্তের গ্লুকোজকে কোষে প্রবেশের সিগন্যাল দেয়। এটিকে তাই দেহ কোষে সুগার বিপাকের চাবি বলা হয়। আমরা জানি দৈনন্দিন খাদ্য গ্রহণের পর পরিপাকের মাধ্যমে উৎপন্ন গ্লুকোজ আমাদের রক্তে গিয়ে মিশে। আর রক্তের গ্লুকোজ ইনসুলিনের সাহায্যে কোষে প্রবেশ করে শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে।
টাইপ-২ ডায়াবেটিস মানুষের জীবনযাত্রার সাথে সম্পর্কিত। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে তার জীবনযাত্রার (অধিক শর্করা গ্রহণ, শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়ামের ঘাটতি) সাথে সম্পর্কযুক্ত একটি কমন রোগ হল এই টাইপ-২ ডায়াবেটিস। মানুষের দেহ যখন পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপন্ন করতে পারে না এবং উৎপন্ন ইনসুলিন অকার্যকর হয়ে পড়ে, তখন টাইপ-২ ডায়াবেটিস দেখা দেয়। সাধারণত অনেকদিন যাবত অতিরিক্ত শর্করা গ্রহণ ও পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম কিংবা ব্যায়ামের ঘাটতির কারণে দেহের ইনসুলিন অকার্যকর হয়ে পড়ে (যা "ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স" নামে পরিচিত)। তবে কিছু বিষয় খেয়াল করলেই আপনার শরীরে এই ডায়াবেটিস রোগ আছে কি না সহজে বুঝতে পারবেন। চলুন তাহলে জেনে নেই কিছু উপসর্গ যা দেখে বুঝবেন আপনি ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
ডায়াবেটিসের কিছু উপসর্গ:
একটু পর পর প্রস্রাব ও পানির পিপাসা লাগা: আপনার যদি ঘনঘন প্রস্রাব ও পানির পিপাসা লাগে তাহলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমনটি লক্ষ্য করলে সঙ্গে সঙ্গে ডায়াবেটিসের পরীক্ষা করাতে ভুলবেন না।
ওজন বেশি কমে যাওয়া: কোন কারণ ছাড়াই যদি আপনার শরীরের ওজন অনেক বেশি কমে যায় তাহলে আপনার ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই ওজন বেশি কমে গেলে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন।
আরও পড়ুন: কিডনি রোগ আছে কি-না বোঝার উপায়
মিষ্টি জাতীয় খাবারের প্রতি দুর্বলতা: ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের মিষ্টি জাতীয় খাবারের প্রতি দুর্বলতা বৃদ্ধি পায়।
ক্ষুধা বৃদ্ধি পাওয়া: কেউ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হলে তার ক্ষুধা বেশি পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। অল্পতেই ক্ষুধার মাত্রা তখন অসহ্য পর্যায়ে চলে যায়।
চোখে কম দেখা: ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা হঠাৎ চোখে কম দেখতে শুরু করেন।
সময়মতো খাওয়া-দাওয়া না করলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হওয়া: নিয়মাফিক খাওয়া-দাওয়া না হলে রক্তের শর্করার পরিমাণ কমে হঠাৎ কমে যায়। এতে হাইপোগ্লাইসেমিয়া নামক মারাত্মক স্বাস্থ্য সমাস্যা তৈরী হয়। যা হাইপো নামেও বেশ পরিচিত। এটি হলে রোগী হঠাৎ স্বাভাবিক কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন।
আরও পড়ুন: কাঁচা মরিচের স্বাস্থ্য উপকারিতা
শরীর দুর্বল ও ঘোর লাগা: ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে শরীর দুর্বল লাগে ও ঘোর ঘোর ভাব হয়। এমনটি হয় যখন শরীরে শর্করার পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়।
দেহের কাটাছেঁড়া সহজে না শুকালে: ডায়াবেটিস হলে শরীরে ক্ষত তৈরী হলে সেটা দীর্ঘদিনেও সারে না।
মেজাজ খিটখিটে হওয়া: ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের সবকিছুতে বিরক্তি প্রকাশ পায়। তখন তাদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়।
চামড়া শুষ্ক ও খসখসে হওয়া: ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের দেহের চামড়া শুষ্ক ও খসখসে হয়ে যায়। এছাড়াও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের প্রচুর চুলকানি হয়।