অর্থাভাবে ঢাকা ছেড়েছেন গরিবের ডাক্তার বুলবুলের স্ত্রী
বুলবুলের ব্যক্তিগত কোনো সঞ্চয় ছিল না। এখন তো আমার কোনো কর্মসংস্থান নেই। তাই বাবার কাছে চলে এসেছি। বাবা দায়িত্ব নিয়েছে। একটি চাকরির ব্যবস্থা হলে ছেলেমেয়েকে নিয়ে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে পারতাম। কথাগুলো বলছিলেন ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে নিহত দন্ত চিকিৎসক বুলবুলের স্ত্রী শাম্মী আক্তার। ঢাকায় বাসাভাড়া থেকে শুরু করে সব মিলিয়ে এত খরচ বহন করা সম্ভব নয় বলে গ্রামে চলে গেছেন বুলবুলের পরিবার।
শাম্মী বলেন, মেয়েটাকে অনেক স্বপ্ন নিয়ে মিরপুরের একটি স্কুলে ভর্তি করেছিলাম। বাসা ভাড়া প্রায় ২০ হাজার টাকা। ছেলেমেয়ের খরচ, খাওয়া-পরা সব মিলিয়ে চোখে এখন অন্ধকার দেখছি। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিল বুলবুল। আমি তো একজন গৃহিণীর বাইরে অন্য জগৎ সম্পর্কে জানি না। রাজধানীতে একমাস চলার মতো অর্থনৈতিক অবস্থা আমার নেই। বাধ্য হয়ে বাসাটা ছেড়ে দিয়েছি। বুলবুলের ব্যক্তিগত কোনো সঞ্চয় ছিল না। এখন তো আমার কোনো কর্মসংস্থান নেই। তাই বাবার কাছে চলে এসেছি। বাবা দায়িত্ব নিয়েছে। একটি চাকরির ব্যবস্থা হলে ছেলেমেয়েকে নিয়ে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে পারতাম। চলতি সপ্তাহের প্রথমদিকে জিনিসপত্র নিয়ে বাবার বাড়ি দিনাজপুরে এসেছি।
আরও পড়ুন: গরম চায়ের সঙ্গে সিগারেটে সুখটান ডেকে আনতে পারে বিপদ
ডা. বুলবুলের স্ত্রী বলেন, বাবা ইয়াকুব আলী সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। অনেক আগে অবসরে এসেছেন। শ্বশুরবাড়ির অবস্থা ভালো নয়। বুলবুলের আয়ে পুরো পরিবার চলতো। এখন কি হবে? সামনের দিনগুলো কীভাবে চলবো কিছুই জানি না। শাম্মী বলেন, বুলবুল আর দুই সন্তানকে নিয়ে আমাদের দিনগুলো সুখের ছিল। শাম্মী বলেন, এটা কি শুধুই ছিনতাই ছিল, না পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড? তারা বুলবুলকে মেরে ফেললো অথচ সঙ্গে থাকা টাকা, মোবাইলফোন কিছুই নেয়নি। বুলবুলকে কেন হত্যা করা হলো। আসলেই কি তারা ছিনতাইকারী ছিল না কি অন্য কিছু হিসাব মিলছে না। আমাদের চারজনকে একসঙ্গে মেরে ফেললেই পারতো। আমার সন্তানদের বাবা হারা করলো। ছোট দুই সন্তান বাবার অপেক্ষায় পথ চেয়ে থাকে। সন্তানদের চোখে চোখে রাখতেন বুলবুল। একটু পরপর ভিডিও কলে বাবাকে দেখতো ছোট্ট সামী। এখন সে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। সারাক্ষণ ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে। কোনো নম্বর থেকে ফোন আসলেই বাবা বাবা বলে ডাকে। কিন্তু বাবাকে আর দেখতে পায় না। ছেলেকে কীভাবে বোঝাবো তার বাবা আর নেই।
তিনি আরও বলেন, মেয়েটা হঠাৎ কেমন চুপ হয়ে গেছে। কারও সঙ্গে খুব বেশি কথা বলে না। বাবাকে খুঁজতে থাকে। আর কাঁদে। বাচ্চাদের লেখাপড়া শেখানো ও ভালো মানুষ করে গড়ে তুলতে এক বুক স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় এসেছিলাম। কিন্তু আজ শূন্য হাতে গ্রামে ফিরে আসতে হলো। তিনি বলেন, ডা. বুলবুল এক সময় বিনা পয়সায় গরিবের চিকিৎসাসেবা দিতেন। অথচ অর্থাভাবে তার সন্তানদের ভবিষ্যৎ এখন শঙ্কায়। রংপুর শহরের কোতোয়ালি ভগিবালাপাড়া গ্রামের আব্দুস সামাদ ও বুলবুলি সামাদ দম্পতির দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে সবার বড় ছিলেন বুলবুল। ২০০৮ সালে দিনাজপুরের মেয়ে শাম্মীকে বিয়ে করেন তিনি। তাদের সংসারে জন্ম নেয় মেয়ে আয়ন ও ছেলে সামী। রাজধানীর পশ্চিম শেওড়াপাড়া এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে থাকতেন ডা. বুলবুল। গত ২৮শে মার্চ ছিনতাইকারীর হাতে নিহত হওয়ার ১৫ দিন পার হয়েছে ইতিমধ্যে। শাম্মী বলেন, আমার একটি চাকরি বা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হলে সন্তানদের নিয়ে একটি নিশ্চিত ভবিষ্যৎ হতো। ওদেরকে ঠিকমতো মানুষ করতে পারতাম।
চিকিৎসক আহমেদ মাহী বুলবুল গত ২৮শে মার্চ ভোর সাড়ে পাঁচটায় নোয়াখালী যাওয়ার পথে কাজীপাড়া এলাকায় ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন। ২৯শে মার্চ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছিনতাইকারী দলের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।