‘সরকারি নির্দেশনা না মানলে বিপর্যয়ের মুখে পড়ব’
বাংলাদেশ করোনার ব্যাপক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছি বলে মনে করছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান। বৃহস্পতিবার (০৬ জানুয়ারি) ডয়চে ভেলে বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
অধ্যাপক ডা. কামরুল বলেন, কোলকাতা করোনার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। বিশ্বব্যাপী করোনা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। সরকার যে নির্দেশনা দিয়েছে তা আমাদের মানতে হবে। নয়তো আমরা বিপর্যয়ের মুখে পড়ব। করোনার যে ভ্যারিয়েন্টই হোক না কেন টিকা কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে।
আরও পড়ুন: করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের পথে বাংলাদেশ
তিনি আরও বলেন, বাইরে সবাইকে মাস্ক অবশ্যই পরতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বিকল্প নাই। আগামী দুই মাসে করোনা অনেক বেড়ে যেতে পারে। সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানতে চায় না। অন্যদিকে টিকার প্রতিও আগ্রহ কমে গেছে।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ১৫ দফা নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নির্দেশনাসমূহ দেশব্যাপী কঠোরভাবে পালনের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: নিজেই টিকা হয়ে উঠতে পারে ওমিক্রন, ৩ মাসেই কাটবে ভয়াবহতা
নির্দেশনাসমূহ হচ্ছে- দেশের বন্দরগুলোতে ওমিক্রন আক্রান্ত দেশ থেকে আসা যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও স্ক্রিনিং জোরদার করতে হবে; সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় জনসমাগম নিরুৎসাহিত করতে হবে; বাড়ির বাইরে সব সময় সঠিকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরাসহ সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।
রেস্তোরাঁয় ধারণক্ষমতার অর্ধেক বা তার কম লোক বসে খেতে পারবে; সব ধরনের জনসমাবেশ, পর্যটন স্থান, বিনোদনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার, সিনেমা হল/ থিয়েটার হল ও সামাজিক অনুষ্ঠানে ধারণক্ষমতার অর্ধেক বা তার কম লোক অংশ নিতে পারবে।
আরও পড়ুন: বিধিনিষেধের প্রজ্ঞাপন যেকোনো সময়: স্বাস্থ্য সচিব
মসজিদসহ সকল উপাসনালয়ে মাস্ক পরাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে; গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে; আক্রান্ত দেশ থেকে আসা যাত্রীদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে; সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (মাদরাসা, প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়) ও কোচিং সেন্টারে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে।
সকল স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে সেবাগ্রহীতা, সেবা প্রদানকারী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সঠিকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরাসহ সকল স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে; যারা এখনো কভিড টিকা নেননি, টিকাকেন্দ্র গিয়ে তাঁদের প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে; কভিডের উপসর্গ/লক্ষণযুক্ত সন্দেহভাজন বা নিশ্চিত কভিড রোগীদের আইসোলেশন এবং কভিড রোগীদের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা অন্যদের কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
কভিডের লক্ষণযুক্ত ব্যক্তিকে আইসোলেশনে রাখা এবং তার নমুনা পরীক্ষার জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয় করে সহায়তা করতে হবে; অফিসে প্রবেশ এবং অবস্থানকালীন সময়ে বাধ্যতামূলকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে; সবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি দাপ্তরিকভাবে নিশ্চিত করতে হবে। টিকা নেওয়া থাকলেও বাইরে বের হওয়ার সময় অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে।
কমিউনিটি পর্যায়ে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে সচেতনতা তৈরির জন্য মাইকিং ও প্রচার চালানো যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে মসজিদ/মন্দির/গির্জা/প্যাগোডার মাইক ব্যবহার করা যেতে পারে এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর/ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যসহ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করা যেতে পারে।
আরও পড়ুন: ওমিক্রন ঠেকাতে ১৫ নির্দেশনা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের
এদিকে, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত করোনার টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন সাত কোটি ৬২ লাখ ৭৫ হাজার ৩৬৮ জন। দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন পাঁচ কোটি ৩৮ লাখ ৮৮ হাজার ৩৩৯ জন। বুস্টার ডোজ পেয়েছেন দুই লাখ ৬২ হাজার ৪৭ জন।
জাতীয় পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য নির্দেশনা না মানার প্রবণতা আছে। কিন্তু সরকারেরও দায়িত্ব আছে। সরকারের দায়িত্ব হলো স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করা। শুধু নির্দেশনা দিলেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। মহামারি সংক্রান্ত অনেক আইন আছে সেগুলো প্রয়োগ করতে হবে।