শীতে বাড়তে পারে চর্মরোগ, মুক্ত থাকবেন যেভাবে
চলছে শৈতপ্রবাহ আর এই সময় প্রকৃতি হয়ে ওঠে ধুলিজীর্ণ। ঘরে-বাইরে চলে ধুলোর উৎসব। আর তাতে সব বয়সী মানুষের ত্বকে শুষ্কতাজনিত রোগ দেখা দেয়। শুরু হয় হাত-পা ফাটা। দেখা দেয় সোরিয়াসিস নামক চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগ।
উত্তরাঞ্চলে ধীরে ধীরে জেঁকে বসছে শীত। প্রতিদিনই তাপমাত্রা একটু একটু করে কমছে। বিশেষত দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো এরইমধ্যে শীতে কাঁপতে শুরু করেছে। এতে করে দেশের সারাদেশেই হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে শীতকালীন চর্মরোগের প্রকোপ।
আরও পড়ুন: নবীনদের পদচারণায় মুখরিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
এসময় বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে এ ধরনের রোগীর চাপ দেখা যায়। শীত এলেই হাতের চামড়া উঠা শুরু হয়। চর্ম রোগে মাঝ বয়সী বা বৃদ্ধরাই ভুগছে, তা নয়। শীতে এ রোগে শিশু-কিশোরদেরও ভোগান্তি বাড়ছে।
অনেক সময় সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসচ্ছলতার কারণে গরিব, মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকরা শীতকালে এক বিছানায় চাপাচাপি করে ঘুমানো এবং অপরিষ্কার পোশাক পরিধান করা, শীতে নিয়মিত গোসল না করার জন্য চর্মরোগে সংক্রমিত হয়ে পড়েন। আবার স্কুলপড়ুয়া শিশুরাও এ সময় বিভিন্ন চর্মরোগ বা স্কেবিসে আক্রান্ত হয়ে থাকে এবং শরীরে অসম্ভব রকম চুলকানি হতে দেখা যায়। এতে রাতের বেলা চুলকানির তীব্রতা আরও বাড়ে। এ সময় ত্বকে ছত্রাকের সংক্রমণের কারণেও চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ছত্রাক মূলত গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালীন চর্মরোগ; কিন্তু বৈশ্বিক আবহাওয়ার ফলে ছত্রাকজনিত রোগ এখন শীতকালেও দেখা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: বিবাহিত ছাত্রীদের ঢাবির হলে থাকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসছে
শীতকালে সাধারণত চর্মরোগের হার বেশি। শীতকালে মানুষ মোটা কাপড় পরিধান করেন, যা অনেক সময় অপরিষ্কার ও অপরিচ্ছন্ন থাকে। ঘনবসতিপূর্ণ পরিবেশে থাকেন ও নিজেও অপরিচ্ছন্ন থাকেন এবং যারা নিয়মিত গোসল করেন না, তাদের ক্ষেত্রে ত্বকের সমস্যা বেশি দেখা দেয়। এ সময়ের কয়েকটি সাধারণ চর্মরোগ হচ্ছে খোস-পাঁচড়া, খুজলি ও দাদ। খোস-পাঁচড়া, খুজলি ও দাদ হলে আক্রান্ত স্থানে সব সময় চুলকানির ভাব অনুভূত হয়। এতে না চুলকিয়ে থাকা যায় না। চুলকাতে চুলকাতে চামড়া উঠে যায়। ফুসকুড়িগুলোয় পুঁজ-পানি জমে। আবার চুলকালে পুঁজ ছড়িয়ে পড়ে এবং চুলকানি অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে যায়। ব্যথায় শরীরে জ্বর আসে।
এসব রোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে অপরিষ্কার কাপড় পরিধান ত্যাগ করতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাপড়-চোপড় ব্যবহার করলে খোস-পাঁচড়া হবে না। নিয়মিত গোসল করতে হবে। গোসলের সময় পানি গরম করে নিতে হবে। গরম পানিতে নিমপাতা ও লবণ দিয়ে সেদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে গোসল করলেও উপকার পাওয়া যাবে। এক সপ্তাহের বেশি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
খোস-পাঁচড়া, দাদ ও খুজলিজাতীয় চর্মরোগ সাধারণত অপরিষ্কার থাকার কারণে বা ভিটামিন-সি ও এ-এর অভাবে হয়ে থাকে। ছেলেদের স্বপ্নদোষ হলে সঙ্গে সঙ্গে ধুয়ে পরিষ্কার করা উচিত অথবা প্যান্টের জাঙ্গিয়ার নিচে ঘেমে গেলে তা সব সময় পানি দিয়ে পরিষ্কার করা উচিত। এ রোগ হলে অবশ্যই ভিটামিন-সি ও এ-এর জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে।
আরও পড়ুন: স্কুলে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে
যেমন কমলা বা কমলার তৈরি জুস ইত্যাদি বেশি খেতে হবে। আরও কিছু কমন শীতকালীন রোগের মধ্যে মাথায় খুশকির পরিমাণ বেড়ে যায়। চামড়ার কিছু কিছু ক্ষত সহজে শুকাতে চায় না। শিশুদের একজিমা মারাত্মক রূপ ধারণ করে। অনেকের ঠোঁট ফেটে যায়। পা ফেটে যায় আবার অনেকের জিহ্বাও ফেটে যায়।
এ ছাড়া অনেকের ড্রাই কন্ডিশন রোগের জন্য পায়ে মাছের আঁশের মতো ফাটাফাটা দেখা যায়। তাই শীতকালে এসব রোগ থেকে মুক্তি পেতে ত্বকের একটু বাড়তি যত্ন চাই এবং এ সময় নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। মনে রাখবেন একটু অসাবধানতা শীতকালে আপনার শরীরের চামড়া যেকোনো বড় যন্ত্রণার সৃষ্টি করতে পারে।