করোনা সংক্রমণ কমলেও উদ্বেগ কমছে না

করোনা সংক্রমণ কমলেও উদ্বেগ কমছে না
করোনা সংক্রমণ কমলেও উদ্বেগ কমছে না  © ফাইল ছবি

করোনা সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে থাকলেও উদ্বেগ কমছে না। প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ কয়েকটি দেশে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে সতর্ক করেছে করোনা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি ও বিশেষজ্ঞরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য বিভাগের সবাইকে সতর্ক করে বলেছেন, শীতে করোনার প্রকোপ বাড়তে পারে।

তবে প্রস্তুতির কোনো ঘাটতি নেই বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম। তিনি বলেন, করোনার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলো এখনও সেভাবে আছে। এর মধ্যে আরও কিছু চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনা হয়েছে। ফলে যে-কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে প্রস্তুত হাসপাতালগুলো।

শুক্রবার দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন সাত জন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা ২৭ হাজার ৮৫৪ জনে দাঁড়িয়েছে। গত ৫ আগস্ট দেশে সর্বোচ্চ ২৬৪ জন রোগী মারা যায় এবং গত ২৮ জুলাই সর্বোচ্চ শনাক্ত হয় ১৬ হাজার ২৩০ জন।

কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ‘‘সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে এসেছে এটা সত্য। কিন্তু রাশিয়াসহ কয়েকটি দেশে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। আগামীকালই (শনিবার) আমরা জাতীয় কমিটির একটা মিটিং ডেকেছি। সেখানে এগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। আমরা সরকারকে যেটা বলতে চাই, কোনো ধরনের শৈথিল্য দেখানো যাবে না। স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে জোর দিতে হবে।’’

এদিকে সরকার স্কুল শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সি শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া শুরু হবে ১ নভেম্বর থেকে।

করোনার সংক্রমণ কমে আসায় প্রায় দেড় বছর পর গত সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া হয়েছে। খুলে দেওয়া হয়েছে মেডিকেল কলেজও। টিকাদানেও গতি এসেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী অন্তত এক ডোজ টিকা পেয়েছেন দেশের ২৫ শতাংশ মানুষ। আর ১২ শতাংশের বেশি মানুষের দুই ডোজ সম্পন্ন হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আপাতত টিকার কোনো সংকট নেই।

তবে নিজেদের তৎপরতায় করোনার সংক্রমণের হার কমেছে বলে মনে করেন না বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘‘করোনার সংক্রমণ আমরা নিয়ন্ত্রণ করেছি, এটা বলা যাবে না। এখন সংক্রমণের হার কম, সেটা সত্য। কিন্তু কেন কমেছে সেটা আমরা এখনও নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। কারণ আপনি বাইরে গিয়ে দেখেন কেউ মাস্ক পরে না, কোনো স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই।’’

তাহলে করোনা কীভাবে নিয়ন্ত্রণে এসেছে? জবাবে তিনি বলেন, ‘‘সেটাই তো বলছি, গত বছরও এ সময় কম ছিল। আর শীতে আমাদের দেশে করোনা বাড়ে না। কারণ শীতের সময় নানা ধরনের স্থানীয় ভাইরাস আমাদের আক্রমণ করে। ফলে করোনা ভাইরাস স্থানীয় ভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকতে পারে না। আমাদের এখানে তৃতীয় ঢেউ যেটা বলা হচ্ছে, সেটা এলেও মার্চ-এপ্রিলের আগে নয়। শীতপ্রধান দেশগুলোতে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীয় হয়ত আমাদের সতর্ক করেছেন।’’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে শনাক্তের হার পাঁচ শতাংশের নিচে থাকলে সেটি অন্যান্য সাধারণ রোগের মতো গণ্য হবে। তবে ন্যূনতম ১৪ দিন এই হার বজায় থাকতে হবে। গত ২১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে তা পাঁচ শতাংশের নিচে নেমে আসে। এরপর থেকে টানা ৪৫ দিন ধরে শনাক্তের হার পাঁচ শতাংশের নিচে রয়েছে। ৩ অক্টোবর থেকে শনাক্তের হার তিন শতাংশের নিচে নেমে আসে। গত শুক্রবার তা আরও কমে এক দশমিক ৩৬ শতাংশে নেমে আসে। এরপর থেকে আর দুই শতাংশের উপরে উঠেনি।

রাশিয়ায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু ব্যাপক হারে বৃদ্ধির কারণে সব কর্মস্থল আট দিনের জন্য বন্ধ হতে যাচ্ছে। আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত সে দেশের সরকার এ প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন।

রোমানিয়ার হাসপাতালগুলোতে নতুন রোগী ভর্তি করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ইউরোপের আরও কয়েকটি দেশেও সংক্রমণের হার বাড়ছে। অথচ করোনা টিকাদানের ক্ষেত্রে ইউরোপ উল্লেখযোগ্য মাইলফলক স্পর্শ করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, ইউরোপ মহাদেশে একশ’ কোটির বেশি ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। গত তিন সপ্তাহ ধরে এ অঞ্চলের অর্ধেকেরও বেশি দেশে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রমণের হার ১১ শতাংশে নেমে আসার পর সংক্রমণ আবারও বাড়ছে সেখানে। যুক্তরাজ্যেও করোনার সংক্রমণ দ্রুতগতিতে বাড়ছে। ভারতেও কয়েকদিন ধরে সংক্রমণের হার বাড়ছে।

এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য কতটা উদ্বেগের জানতে চাইলে ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘‘করোনা ভাইরাসের তো কোনো চরিত্র নেই। ফলে কখন কী অবস্থা হবে সেটা বলা মুশকিল। তবে শীতে আমাদের এখানে খুব একটা বাড়ে না। তারপরও স্বাস্থ্যবিধি না মানলে যে-কোনো সময় এটা আবার ছড়িয়ে পড়তে পারে। স্বাস্থ্যবিভাগকেও পুরোপুরি প্রস্তুতি রাখতে হবে। করোনা জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলো বন্ধ করা যাবে না।’’ [সূত্র: ডয়চে ভেলে বাংলা]


সর্বশেষ সংবাদ