করোনাকালে ১৭ মাসে ২০০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

আত্মহত্যার মিছিলে স্কুল পড়ুয়া থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সব শিক্ষার্থীই রয়েছেন
আত্মহত্যার মিছিলে স্কুল পড়ুয়া থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সব শিক্ষার্থীই রয়েছেন  © প্রতীকী ছবি

করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ ১৭ মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা ঘরবন্দি। মহামারির এই সময়ে শিক্ষার্থীরা মানসিক চাপের মধ্য রয়েছে। পড়াশোনা নিয়ে হতাশা, পারিবারিক কলহ, প্রেমঘটিত টানাপোড়েন, আর্থিক সংকট, বেকারত্ব, নিঃসঙ্গতা, মানসিক চাপ, তীব্র বিষন্নতা— এসব কারণে মূলত আত্মহননের পথ বেঁচে নিচ্ছে তারা। আত্মহত্যার মিছিলে স্কুল পড়ুয়া থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সব শিক্ষার্থীই রয়েছেন।

সম্প্রতি আঁচল ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠনের জরিপে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে গেছে বলে জানানো হয়েছে। জরিপে বলা হয়, করোনাকালে মানসিক বিভিন্ন চাপের ফলে আত্মহত্যা করার কথা ভেবেছে ২১ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। এ সময়ে মানসিক চাপ পড়েছে ৬৩.৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর। সংগঠনটি বলছে, পারিবারিক, সম্পর্কজনিত, আর্থিক, পড়াশোনা এবং অন্যান্য বিভিন্ন কারণে মানুষ আত্মহত্যা করেছে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সংবাদকর্মীদের তৈরি এক পরিসংখ্যান বলছে, দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। এরপর ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। চলতি মাসের ১৭ আগস্ট পর্যন্ত ১৭ মাসে মোট ২০০ জন শিক্ষার্থী আত্মঘাতী হয়েছেন। সর্বশেষ এ আত্মহননের মিছিলে যোগ দেন চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা এলাকায় বসবাসরত সঙ্গীতা (১৮) নামে এক কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী।

পরিসংখ্যান বিবেচনায়, মোট আত্মহননকারীর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়-মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী রয়েছে ৫২ জন; কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী ৩৮ জন; মাদ্রাসার শিক্ষার্থী রয়েছে ১২ জন। তবে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মিলে এ সংখ্যা একশোর কাছাকাছি; ৯৮ জন। অন্যদিকে আত্মহত্যাকারীদের বেশির ভাগেরই বয়স ১২ থেকে ২০ বছরের মধ্যে।

২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে গত ১৭ আগস্ট পর্যন্ত মোট ১৭ মাসে বিভিন্ন প্রিন্ট ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যের ভিত্তিতে এ পরিসংখ্যানটি তৈরি করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত জীবনের উপর মানসিক চাপ কাজ করছে। দুঃশ্চিন্তা, হতাশা, বিষন্নতা ও মানসিক বিপর্যয়সহ নানান ছোটখাটো সমস্যায় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে অনেক শিক্ষার্থী। ফলে তারা আত্নহননের সিদ্ধান্তে ধাবিত হতে বাধ্য হয়েছেন। তবে পরিবারের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন, সচেতনতা সৃষ্টিসহ তরুণদের অনুকূলে পরিবেশ গড়তে পারলে আত্নহত্যা প্রবণতা অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব বলে মনে করছেন তারা।

এ প্রসঙ্গে স্কুল পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, বাচ্চারা ছোট ছোট কারণেই আত্নহত্যা করছে। দেখা যায়, অধিকাংশ বাচ্চাদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে। বাচ্চাদের এখন শাসন করতেও ভয় হয়। কারণ কখন কি করে বসে! আত্নহত্যার ঘটনা থামাতে অভিভাবকসহ সমাজের সবাইকে সচেতন হতে হবে৷ বাচ্চাদের বুঝাতে হবে তাদের ভালো-মন্দ।

কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী ফাহিমের মা রোকসানা বলেন, দীর্ঘ ছুটিতে অনেক শিক্ষার্থী ছোটখাটো বিষয় নিয়ে বাবা-মায়ের অবাধ্য হয়ে উঠছে। নানান নেতিবাচক কর্মকাণ্ড ও অভ্যাসের সাথে জড়িয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা৷ একটু শাসন করলেই আত্নহত্যা করে বসছে। সংকটকালীন সময়ে বাচ্চাদের বুঝাতে হবে এবং পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। এসময় পরিবারের সহযোগিতামূলক আচরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এ প্রসঙ্গে আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি তানসেন রোজ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, একজন শিক্ষার্থী কেন আত্নহত্যা করছে সেটির কারণ সর্বপ্রথম বের করতে হবে। কোনো একটি সমস্যার কারণ বের করা গেলে সমাধানের ব্যবস্থা আসবে। করোনার দীর্ঘছুটিতে বয়সভেদে অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা নানাভাবে হতাশাগ্রস্ত।

“কারণ শিক্ষার্থীদের বয়স বেড়ে যাচ্ছে, বেকারত্ব আরও জটিল রূপ নিচ্ছে, পারিবারিক আর্থির টানাপোড়েনসহ নানান কারণে বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হতাশা বাড়ছে। এছাড়া আমাদের দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থী নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। এসব পরিবারে সন্তানের প্রতি একটা বাড়তি চাহিদা বা চাপ কাজ করে৷ করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধে শিক্ষার্থীরা তাদের জীবনের লক্ষ্য হারিয়ে ফেলছে। শিক্ষার্থীদের জীবনাচরণে এসেছে বিরাট পরিবর্তন। ফলে আত্নহত্যা বাড়ছেই।”

তিনি আরও বলেন, করোনাকালে যে হারে মানসিক সমস্যা বাড়ছে সে হারে সচেতনতা বাড়ছে না। আত্নহত্যা প্রবণতা রুখতে প্রয়োজন সঠিক কাউন্সেলিং। একজন তরুণ বা তরুণী কেনো আত্মহত্যাপ্রবণ বা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছে তার কারণ বের করে সমাধান করে সমস্যার মূলোৎপাটন করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আফজাল হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আত্মহত্যা মূলত একটা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত; যে আত্মহত্যা করবে সেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে৷ কেউ হয়তো আগে থেকেই অনেক ধরনের মানসিক যন্ত্রণায় ভুগে থাকতে পারে। যখন এই যন্ত্রণাগুলো পরিমাণে বেশি হয় কিংবা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছে যায় যেটাকে আমরা বলি 'তীব্র মনোবেদনা'।

“এটি যখন সহ্য ক্ষমতার বাইরে চলে যায় অর্থাৎ ব্যক্তি মনে করতে পারে আমার বেঁচে থেকে লাভ নেই, নিজেকে মূল্যহীন মনে করে। এভাবে অনেকগুলো মানসিক সমস্যা যখন একত্রিত হয় মনোজগৎকে নাড়া দেয় কিংবা আন্দোলিত করে তখন ব্যক্তি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিতে পারে বা নেয়। করোনাকালে শিক্ষার্থীরা মানসিক বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন ফলে আত্মহত্যাও বেড়েছে।”

তিনি আরও বলেন, আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকগুলো ক্ষেত্র কাজ করে। ব্যক্তি বিশেষে ক্ষেত্রগুলো ভিন্ন হয়ে থাকে। একজন ব্যক্তির যখন নৈতিক মূল্যবোধ একেবারে ফুরিয়ে যায় তখনই সে আত্মহননের পথ বেছে নেয়। আত্নহত্যা মহাপাপ জেনে ও ব্যক্তি তখন আত্মহত্যা করে।

“এক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। একটি শিশু তার পরিবার থেকে কি ধরনের মূল্যবোধ নিয়ে বেড়ে উঠছে সেই মূল্যবোধগুলো আঁকড়ে ধরে কিন্তু শিশুকে ভবিষ্যতে পরিচালিত করবে৷ বাবা-মা কর্তৃক গৃহীত আদর্শ শিশুর জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”

চলতি বছরের জুলাই থেকে সর্বশেষ গত ১৭ আগস্ট পর্যন্ত মোট আত্নহননকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৬ জন। গত ১ জুলাই নাটোরের বাগাতিপাড়ায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর দশম শ্রেণির ছাত্রী রিমা হাঁসদাক উর্ণা দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্নহত্যা করেছে। একইদিনে নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলায় কলি আক্তার (১৪) নামে এক শিক্ষার্থী ঘরের আড়ায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। কলি আক্তার সদর উপজেলার বাগবেড় গ্রামের মো. ইসমাইল হোসেনের মেয়ে। বর্ণাকান্দা মহিলা মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ছিল।

২ জুলাই বাবা-মার শাসন সহ্য করতে না পেরে অভিমানে এক কলেজছাত্রী গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন ওই শিক্ষার্থীর নাম রুমা আক্তার (১৮)। নারায়গঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।

৪ জুলাই চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র আবিদ হাসান আত্মহত্যা করেছেন। তিনি ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী ছিলেন। জিআরইতে তার স্কোর ছিল ৩১২ এবং ভালো কিছু পাবলিকেশনও ছিল। কিন্তু পরিবারের পক্ষ থেকে বিসিএস কিংবা সরাকারি চাকরির চাপ ছিল বলে সহপাঠীরা জানিয়েছেন। ফলে হতাশা থেকে আত্মহত্যা করতে পারেন বলে ধারণা সহপাঠীদের।

গত ৫ জুলাই রাজধানীতে উর্মি আক্তার নামে ষষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। ঘটনার দিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাসাবোর একটি বাসা থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

একইদিন বরগুনায় বাড়ির মালিকের ছেলের যৌন হয়রানি ও মিথ্যা বদনাম সহ্য করতে না পেরে মাকে চিঠি লিখে সামিয়া নামে ৮ম শ্রেণির এক ছাত্রী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।

একইদিনে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ৫ নম্বর বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নে বোনের সঙ্গে অভিমান করে গলায় ফাঁস দিয়ে মো. রাহুল (১৪) নামে এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। ওইদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে চিটাগাং কেমিক্যাল কমপ্লেক্সের কোয়াটারে এ ঘটনা ঘটে। মো. রাহুল পিতার নাম মো. দেলোয়ার হোসেন। সে ওই এলাকার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র।

মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার সীমান্তবর্তী কাজীপুর গ্রামে রিতা খাতুন নামে এক স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। ১৪ বছর বয়সী এই শিক্ষার্থীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দেয়ায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় বলে স্থানীয়দের ধারণা। ৫ জুলাই দুপুর দেড়টার দিকে রিতার নানা কাজীপুর গ্রামের কিন্নাল আলীর ঘর থেকে রিতার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয় ভবানীপুর পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা।

গত ৮ জুলাই ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ী ইউনিয়নের আওলাতলী গ্রামে বাড়ির রান্না ঘরের আড়ায় গলায় মাফলার পেঁচিয়ে স্কুলছাত্রী তানজিনা আক্তার (১৪) আত্নহত্যা করেন। নিহত তানজিনা আক্তার ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ী ইউনিয়ন সোনার বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।

নাটোররের সিংড়া উপজেলায় ভাত খাওয়া নিয়ে বড়বোনের ওপর অভিমান করে মো. আকাশ (৯) নামের এক শিশু শিক্ষার্থী গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। ১০ জুলাই রাতে সিংড়া উপজেলার সুকাশ ইউনিয়নের ধাপ কুড়াইল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আকাশ একই এলাকার জিল্লুর রহমানের ছেলে ও কুড়ি পাকুরিয়া ফাজিল মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে।

১৩ জুলাই মোবাইল ফোনে গেম খেলা নিয়ে বকা দেয়ায় মায়ের সঙ্গে অভিমান করে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইল দক্ষিণ পাড়া এলাকায় চাঁদনী আক্তার (১৩) নামে এক স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা করেছে।

একইদিন প্রেমঘটিত বিরোধের জেরে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় সামিয়া আক্তার স্বপ্না (১৫) নামে এক স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। সামিয়া আক্তার স্বপ্না সোনাকান্দা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী।

১৪ জুলাই দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে নার্সিং পড়ুয়া এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। উপজেলার আউলিয়াপুকুর ইউনিয়নের বড়গ্রাম চেয়ারম্যান পাড়ার আবুল কালাম আজাদের কন্যা ও দিনাজপুর আনোয়ারা নার্সিং কলেজের ১ম বর্ষের ছাত্রী ফারজানা অপি ঘটনার দিন রাতে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। তার বাবা ১৫ জুলাই সকালে মেয়েকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে থানায় সংবাদ দেয়।

১৬ জুলাই পিরোজপুরের কাউখালিতে ধর্ষণের ভিডিও ছড়ানোর হুমকি দেওয়ায় এক স্কুল ছাত্রীর আত্নহত্যার ঘটনা ঘটেছে৷ একইদিন চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানা এলাকার প্রবর্তক সংঘের হোস্টেল থেকে এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত সোনিয়া সাতকানিয়া উপজেলার আমিলাইষ এলাকার লালু দাশের মেয়ে।

গত ১৭ জুলাই রাজধানীর গুলশান নিকেতনের একটি বাসায় গলায় ফাঁস দিয়ে ফারিয়া হায়দার (২১) নামে এক মেডিকেল ছাত্রী আত্মহত্যা করেছেন।

একইদিন ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় প্রেমে বাধা দেয়ায় দশম শ্রেণীর এক মাদ্রাসা ছাত্র আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিহত মো. ছালাহ উদ্দিন (১৮) চরদরবেশ ইউনিয়নের দক্ষিণ চরসাভিকারী গ্রামের সাহাব উদ্দিনের ছেলে। তিনি কারামতিয়া দাখিল মাদ্রাসার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন।

২১ জুলাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন অনুষ্ঠিত ২০১৯ সালের অনার্স ৪র্থ বর্ষ পরীক্ষার ফলাফলে হয়েছে। ফলে অকৃতকার্য হয়ে মশিউর রহমান নামে এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন বলে জানা গেছে।

একইদিন ফরিদপুরে প্রেমিক যুগলের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। প্রেমিকের নাম অধীর সিকদার (২০)। এ বছর ভাঙ্গা সরকারি কে এম কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল অধীরের।প্রেমিকার নাম মুন রানী মজুমদার (১৫)। স্থানীয় ব্রাহ্মনদী উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল মুন। জানা গেছে, অধীর সিকদার ও মুন রানী মজুমদারের মধ্যে দুজনের পরিবারের সদস্যরা এই সম্পর্কে মেনে নিতে রাজি না হওয়ায় অধীর গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। আর মুন বিষপান করে আত্মহনন করেছে।

গত ২২ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলায় মায়ের সঙ্গে অভিমান করে শারমিন আক্তার (১৬) নামে এক স্কুল ছাত্রী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। ২৩ জুলাই কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের রাতে তিন বখাটে কর্তৃক সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন এক মাদ্রসাছাত্রী। ধর্ষণের অপমান সইতে না পেরে ২৪ জুলাই ভোর রাতে বিষপান করে আত্মহত্যা করে ওই মাদ্রাসাছাত্রী। একইদিন নীলফামারীর সৈয়দপুরে বাবার ওপর অভিমান করে গলায় ফাঁস লাগিয়ে কলেজ পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। তার নাম আরিফ হোসেন (২০)।

২৫ জুলাই টাকা চেয়ে না পেয়ে পটুয়াখালীর মহিপুরে অভিমানে মায়ের ওড়নায় সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেছেন সোহাগ (২২) নামের এক কলেজছাত্র। একইদিন মোটরসাইকেল কিনে না দেওয়ায় বাবার ওপর অভিমান করে গ্যাসের ট্যাবলেট খেয়ে রেজাউল (১৫) নামে এক কিশোর আত্মহত্যা করেছে। নিহত রেজাউল চককালিকাপুর টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ও স্থানীয় ভ্যানচালক মহাতাব আলীর ছেলে বলে জানা গেছে।

গত ২৬ জুলাই রাজধানীর মুগদা মানিকনগর এলাকায় একটি বাসায় আফসান ওমি (১৭) নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।

গত ২৭ জুলাই বগুড়ার শাজাহানপুরে পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করতে না পেরে অভিমানে গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে ফয়সাল হোসেন লিটন (২০) নামের এক কলেজছাত্র আত্মহত্যা করেছেন। তিনি বগুড়া সরকারি শাহ-সুলতান কলেজে ডিগ্রিতে পড়ালেখা করতেন।

গত ২৮ জুলাই অর্থাভাবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পেরে ফারজানা বিন কাইয়ুম (২১) তরুণী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। মৃত ফারজানা রাজধানীর সিটি কলেজে ম্যানেজমেন্ট বিভাগে পড়াশোনা করছিলেন।

চলতি মাসের ১ আগস্ট করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মা ও ভাইয়ের মৃত্যু হয় আলিফ নামের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর। পরে হতাশায় তিনি রাজধানীর গুলশান-২ এর সিকদার হাসপাতালের পাশের একটি সাত তলা ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন।

একইদিন রাজধানীর কদমতলীর রায়েরবাগ মদিনাবাগ এলাকায় মোবাইল ব্যবহার করতে না দেওয়ায় বাবার ওপর অভিমান করে তাসলিমা আক্তার তাসমিন (১৬) নামের এক কিশোরী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তাসলিমা আক্তার রাজধানীর শনির আখড়া বর্ণমালা স্কুল থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল।

গত ৮ আগস্ট কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে প্রেমিকের বিয়ের তিন দিন পর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে মিতু (১৪) নামের মাদ্রাসা পড়ুয়া এক কিশোরী। মিতু শিমুলবাড়ী দাখিল মাদ্রাসার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।

গত ৯ আগস্ট চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে এক স্কুলছাত্রীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনার দিন দুপুরে উপজেলার রুপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের সাহেবগঞ্জ গ্রামে ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত স্কুলছাত্রী সুমাইয়া আক্তার আলিকা (১৬) ওই গ্রামের প্রবাসী বোরহান উদ্দিনের মেয়ে এবং গৃদকালিন্দিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী ও এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল।

১০ আগস্ট রাজধানীর তুরাগের মোস্তফা হাজির বস্তিতে গলায় ফাঁস দিয়ে সুলতানা আক্তার নামের (১৬) এক কিশোরী আত্মহত্যা করেছে। নিহতের ভাই শহিদুল ইসলাম বলেন, আমার বোন জেদি প্রকৃতির ছিল। আগে পড়াশোনা করলেও লকডাউনের কারণে এখন ঠিকমতো পড়াশোনা করে না। 

গত ১৫ আগস্ট পিরোজপুরের স্বরূপকাঠির শশিদ গ্রামে দিপা মালি নামের এক কলেজছাত্রী (১৮) আত্মহত্যা করেছে। কলেজের অ্যাসাইনমেন্টের জন্য অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল সেট কিনে দিতে না পারায় পরিবারের ওপর অভিমান থেকে সে আত্মহত্যা করেছে বলে জানান প্রতিবেশীরা। সে শেখেরহাট কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন।

গত ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামের নন্দনকানন এলাকা থেকে দিপিতা প্রাচী তিসি (২২) নামের এক ছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনার দিন বিকেলে নগারীর কোতোয়ালি থানাধীন নিজ বাসা থেকে ওই ছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। দিপিতা নগরীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রিমিয়ারের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

সর্বশেষ গত ১৭ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা এলাকায় সঙ্গীতা (১৮) নামে এক কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্নহত্যা করেছেন। সঙ্গীতার বাবা শ্রীরাম দাশ বলেন, ঘটনার দিন সে বাসায় সবার সাথে কথা বলেছে। রাতে ভাত খেয়ে ইউটিউব দেখে সাজগোছ করেছে। রাতে সবার সাথে কথা বলে ঘুমাতে গেলো। ভোরে উঠে দেখি আমার মেয়েটা রশিতে ঝুলছে। নিহত সঙ্গীতা এইচএসসিতে পড়তো পতেঙ্গা সিটি করপোরেশন বালিকা মহাবিদ্যালয়ে।


সর্বশেষ সংবাদ