১২ জুন ২০২১, ১৪:২১

টিকার দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষা ১৫ লাখ মানুষ, বাড়ছে শঙ্কা ও প্রশ্ন

করোনার টিকা  © ফাইল ছবি

২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনার টিকার প্রথম ডোজ নেন গণমাধ্যমকর্মী শাহেদ ইসলাম। টিকাকার্ডে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার তারিখ ছিল ২৩ এপ্রিল। কিন্তু দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার জন্য এসএমএস না পেলে টিকা কবে নাগাদ নেওয়া যাবে জানতে তিনি আবার ঢামেক হাসপাতালে যান। কিন্তু সেখানে এসএমএস দেখতে চাইলে তিনি সেটা দেখাতে না পারায় তার টিকা নেওয়া হয়নি। আজ ১০ জুন পর্যন্ত টিকার দ্বিতীয় ডোজের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে কোনও নির্দেশনাও পাননি তিনি।

তার প্রশ্ন- তিনি এখন দেশে আসা সিনোফার্ম বা ফাইজারের টিকা নিতে পারবেন কিনা। কিংবা অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা এলে তা কবে নাগাদ নিতে পারবেন।

অন্য একজন আতকিয়া সাদিয়া ২৫ এপ্রিল টিকার প্রথম ডোজ নেন। দুই মাসের হিসাবে তার দ্বিতীয় ডোজের নির্ধারিত তারিখ ২৫ জুন। কিন্তু অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেশে কবে নাগাদ আসবে কিংবা অন্য টিকা নিতে পারবেন কিনা তা নিয়ে বিচলিত সাদিয়া।

শাহেদ ইসলাম বা সাদিয়ার মতো টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন ১৫ লাখ মানুষ। তাদের দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার মতো অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেশে নেই। সঙ্কট দেখা দেওয়ায় ২৬ এপ্রিল থেকে প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ ঘোষণা করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ২ মে’র পর থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় টিকার নিবন্ধনও। দ্বিতীয় ডোজ না পাওয়ায় টিকাদান কেন্দ্রে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অনেকে।

অবশ্য স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে তারা দ্বিতীয় ডোজের বিষয়ে আশাবাদী। অধিদফতর বলছে, টিকার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। টিকা পাওয়া যাবে। সরকার চেষ্টা করছে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আনার। আবার যারা অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছেন তারা দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে অন্য কোম্পানির টিকা নিতে পারবেন কিনা সে বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর পরামর্শ চেয়েছে বিশেষজ্ঞ কমিটির কাছে।

১৫ লাখ মানুষের অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড টিকা পেতে দেরি হবে বলে জানিয়ে অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি, সরকারও চেষ্টা করছে।’

‘অনেক দেশেই বাড়তি ভ্যাকসিন আছে। এগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাবে একসময়। ব্যবহার করতে পারবে না। কাজেই আমাদের মতো দেশ- যারা অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিয়েছে, তাদেরকে দিয়ে দেবে।’

দ্বিতীয় ডোজের জন্য অপেক্ষায় যারা আছেন তাদের ধৈর্য্য ধরার অনুরোধ জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘অনেক মানুষ থেকে যাবেন যাদের দ্বিতীয় ডোজ এখন দেওয়া যাবে না। তাদের বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, অপেক্ষা করুন, ধৈর্য্য ধরুন।’

প্রথম ডোজের ১২ থেকে ১৬ সপ্তাহ পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটুকু উইন্ডো পিরিয়ড আমাদের হাতে আছে। আশা করি টিকা পেয়ে যাবো।’

যদিও পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘যাদের কাছে টিকা আছে, তারা সবাই বলছে দেবে। কিন্তু কখন দেবে, তা পরিষ্কার করে কিছু বলে না।’

যুক্তরাষ্ট্র থেকে টিকা আনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে টিকার জন্য অনুরোধ করেছি। টিকা না পেলে আমাদের দেশের প্রায় ১৫ লাখ মানুষ দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারবেন না। আমরা জরুরি ভিত্তিতে তাদের কাছে টিকা চেয়েছি।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ১০ জুন টিকা বিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, দেশে বর্তমানে অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার মজুত রয়েছে এক লাখ ৩৯ হাজার ১২৯ ডোজ।

দুই কোম্পানির দুই ডোজ মিলে মিক্সড ডোজ নেওয়া যাবে কিনা সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটির কাছে পরামর্শ চেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। কিন্তু তারা এখনও কিছু জানায়নি জানিয়ে অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘এ নিয়ে এখনও বড় মাপে গবেষণা হয়নি। দ্বিতীয় ডোজের টিকা অলমোস্ট বন্ধ। দুই থেকে চারটি টিকাদান কেন্দ্রে আগে থেকে থাকা টিকা দিয়ে এখনও কার্যক্রম চলছে।’

গত ৭ ফেব্রুয়ারি করোনা ভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত টিকা দেওয়া হয়েছে এক কোটি ৬০ হাজার ৮৭১ ডোজ। এক কোটি ৬০ হাজার ৮৭১ ডোজের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪২ লাখ ৪০ হাজার ৮৫৬ জন। প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫৮ লাখ ২০ হাজার ১৫ জন।

পড়ুনঃ টিকা পেতে তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ নেই সাত কলেজ প্রশাসনের

দেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন দিয়ে। সেরামের সঙ্গে মোট তিন কোটি ডোজের চুক্তি হয় বাংলাদেশ সরকারের। প্রতিমাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা আসার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত এসেছে মাত্র এক কোটি দুই লাখ ডোজ।

রাজধানী ঢাকায় ৪৭টি টিকাদান কেন্দ্রে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা দেওয়া শুরু হয়। ১০ জুনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, ৪৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৭টি কেন্দ্রে টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া বন্ধ ছিল। দেশের ৮ বিভাগের ৪২ জেলায় টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া বন্ধ রয়েছে।