কেনাকাটার তোড়জোড়ে চাপা পড়েছে স্বাস্থ্যবিধি
- হাসান তামিম
- প্রকাশ: ০৩ মে ২০২১, ০১:৪৬ PM , আপডেট: ০৩ মে ২০২১, ০২:২৭ PM
স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মানার শর্তে দোকান-শপিংমল ও মার্কেট খুলে দেয়া হলেও বাস্তবে স্বাস্থ্যবিধির কোন চিহ্নও নেই এসব জায়গায়। ক্রেতা এবং বিক্রেতা কেউ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছেন না। মার্কেটগুলোতে নেই কোন জীবাণুনাশক বা হাত ধোয়ার স্থান। তার উপর অধিকাংশ ক্রেতা বিক্রেতাই ব্যবহার করছেন না মাস্ক।
সোমবার (৩ মে) সরেজমিনে রাজধানীর নিউমার্কেট ও সাইন্স ল্যাবরেটরি এলাকার বিপণিবিতান ও মার্কেটগুলো ঘুরে দেখা যায়, কেনাকাটার জন্য মার্কেটগুলোতে যেন মানুষের ঢল নেমেছে। বিপুল পরিমাণ মানুষের উপস্থিতিতে জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে পুরো নিউমার্কেট এলাকা।
সামাজিক দূরত্ব মেনে সুস্থ মানুষজনকে মার্কেটে এসে কেনাকাটা করতে উৎসাহিত করা হলেও বাস্তবে দেখা গেলো মার্কেটে আগতদের মধ্যে বয়স্ক, নারী ও শিশুদের সংখ্যাই বেশি। দোকানগুলোতে একই সঙ্গে একাধিক ক্রেতা ঘিরে ধরে রেখেছেন দোকানিদের। ছোটবড় সব দোকানগুলোতেই একই সঙ্গে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ মানুষজন প্রবেশ করছেন। মার্কেটের চেয়ে ফুটপাতের অবস্থা আরও ভয়াবহ। মানুষের ভিড়ে পা ফেলার জায়গা ফাঁকা নেই। ফুটপাতের অধিকাংশ দোকানিরাই ব্যবহার করছেন না মাস্ক।
তারা বলছেন, করোনা সংক্রমণের চেয়ে জীবিকা নির্বাহই এখন বড়। তাছাড়া অতিরিক্ত গরমের কারণে মাস্ক ব্যবহার করলে হাঁপিয়ে উঠতে হচ্ছে।
ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের সামনের ফুটপাতের শাড়ি কাপড় বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের করোনার ভয় নাই। ক্ষুধার ভয় বেশি। পরিবার পরিজন নিয়ে কিভাবে চলব সেই চিন্তায় আছি। লোকজন তত বেশি বাড়বে তত বেশি বেচা বিক্রি হবে। আর গরমের কারণে মাস্ক পড়তে পারি না। তাছাড়া মাস্ক পড়লে ক্রেতাদের সাথে কথা বলতেও সমস্যা হয়। দামদর টিকমতো করা যায়না।
এমন অবস্থায় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহামারী করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলতে হলে জমায়েতপূর্ণ জায়গায় স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে সরকারের নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। শুধুমাত্র কাগজে-কলমে থাকলেই চলবে না বরং সকল পর্যায়ে নিশ্চিত করতে হবে যে স্বাস্থ্যসুরক্ষা বজায় রয়েছে। না হলে সামনে ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোশতাক হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, যেখানে ভিড় বাড়বে সেখানেই সংক্রমণ বাড়বে আর সংক্রমণ বাড়লেই আনুপাতিক হারে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। আবার যেহেতু দীর্ঘ সময় একাধারে দোকানপাট মার্কেটও বন্ধ রাখা সম্ভব হচ্ছে না কাজেই স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিশ্চিতে দোকান মালিক ও ক্রেতাদের সমন্বিত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ঝুঁকিগুলোকে কিভাবে কমিয়ে নিয়ে আসা যায় সেটার উপায় বের করতে হবে। এভাবে এক জায়গায় এত বেশি লোক সমাগম হলে সংক্রমণ বেড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
এক্ষেত্রে বেশ কিছু নির্দেশনা বাস্তবায়ন করার সুপারিশ করেছেন তিনি। তার মধ্যে রয়েছে-
১. বদ্ধ জায়গায় একসাথে সকল দোকানপাট না খুলে পর্যায়ক্রমিকভাবে খোলা যেতে পারে।
২. প্রশাসনের মনিটরিং আরো বাড়ানো যেতে পারে।
৩.দোকান, মার্কেট ও শপিংমলগুলোর প্রবেশপথে কাউন্টার মেশিন থাকতে হবে যাতে নির্দিষ্ট সংখ্যক লোকের বেশি লোকজন মার্কেটে প্রবেশ করতে না পারে।
৪. মার্কেটের অভ্যন্তরে ক্রেতারা যেন একসাথে জড়ো না হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
তবে স্বাস্থ্য বিধি এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানালেন নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) স. ম. কাইয়্যুম। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি বলেন, একেবারেই স্বাস্থ্যবিধি মানছেনা বিষয়টি তেমন না। তবে অনেকেই শিথিলতার সুযোগ নিচ্ছেন। আমাদের পক্ষ থেকে জনসচেতনতায় মাইকিং করা হচ্ছে এবং পুলিশের একাধিক টিম কাজ করে যাচ্ছে। আমরা ইতোমধ্যেই দোকান মালিকদের সাথেও কথা বলেছি এবং তাদেরকে অনুরোধ করেছি যেন দোকানগুলোতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা হয়।