০৪ জানুয়ারি ২০২১, ১৯:১৫

ভারত বায়োটেকের টিকার ‘তড়িঘড়ি অনুমোদন’ নিয়ে উদ্বেগ

  © সংগৃহীত

ভারতে একটি কোম্পানির তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা ব্যবহারে ট্রায়াল সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই যেভাবে সরকারি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। বিবিসির খবরে এমনটি বলা হয়েছে। 

ভারতীয় সরকারি প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চের সঙ্গে যৌথভাবে বেসরকারি কোম্পানি ভারত বায়োটেক কোভ্যাক্সিন নামের এই টিকাটি উৎপাদন করেছে। গতকাল রোববার টিকাটির অনুমোদন দেওয়া হয়।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভ্যাক্সিনের অনুমোদন দেওয়ার প্রক্রিয়ায় তাড়াহুড়ো করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে নজরদারি করে এমন একটি প্রতিষ্ঠান অল ইন্ডিয়া ড্রাগ অ্যাকশন নেটওয়ার্ক বলেছে, ব্যাপারটায় তারা 'স্তম্ভিত।'

প্রতিষ্ঠানটি বলছে, টিকাটি কতটুকু কার্যকর সে ব্যাপারে কোনো উপাত্ত নেই এবং এ ব্যাপারে স্বচ্ছতারও অভাব রয়েছে, যা গুরুতর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।

এর আগে ভারতের ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল ভি জি সোমানি জোর দিয়ে বলেন, 'অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড ও ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন ১১০ শতাংশ নিরাপদ এবং এটা মানবদেহে শক্তিশালী রোগপ্রতিরোধী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ভ্যাকসিন দুটি সীমিত ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত হয়েছে এবং "এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অন্য সব টিকার মতই - যেমন সামান্য জ্বর, ব্যথা এবং এ্যালার্জি।'

কিন্তু অল ইন্ডিয়া ড্রাগ অ্যাকশন নেটওয়ার্ক বলছে, যে ভ্যাকসিনের পরীক্ষা অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে তাকে এভাবে অনুমোদন দেওয়া বৈজ্ঞানিক যুক্তি তারা বুঝতে পারছেন না।

ভারতের অগ্রগণ্য চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের একজন ড. গগনদীপ কাং বলেন, এরকম ঘটনা তিনি আগে কখনো দেখেননি। টিকাটির কার্যকারিতা কতখানি সে ব্যাপারে কোনো উপাত্তই নেই যা প্রকাশ বা উপস্থাপন করা হয়েছে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, যেহেতু টিকাটির কার্যকারিতার উপাত্তগুলো অন্য বৈজ্ঞানিকদের যাচাই করে দেখার জন্য প্রকাশ করা হয়নি। সেটাই এ উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

ভারত বায়োটেকের পক্ষ থেকে গত বছর জানানো হয়েছিল, তাদের টিকা ৬০ শতাংশের মতো কার্যকারিতা দেখাতে পারবে। কিন্তু এখন তাদেরই টিকাকে ১১০ শতাংশ কার্যকর বলা হচ্ছে।

বিতর্কে জড়িয়েছেন রাজনীতিবিদরাও

টুইটারে সরকারের মন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় রাজনীতিবিদদের মধ্যে এই কোভ্যাক্সিনকে তড়িঘড়ি করে অনুমোদন দেয়া নিয়ে বিতর্ক হয়। ভারত নিজেই এই টিকা তৈরি করেছে কিন্তু এ সাফল্যের প্রশংসা করতে বিরোধী নেতারা ব্যর্থ হয়েছেন বলে তাদের সমালোচনা করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন। 

কিন্তু যেভাবে এ টিকা অনুমোদন করা হয়েছে তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন শশী থারুর ও জয়রাম রমেশের মত কংগ্রেস-নেতারা, এবং উত্তর প্রদেশ রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব।

এদিকে, ভারত বায়োটেকের চেয়ারম্যান ড. কৃষ্ণ এল্লা সমালোচনার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, আমাদের তথ্য নিয়ে কোনো গোপনীয়তা নেই। আমরা আন্তর্জাতিক কোম্পানি। ১৬টি টিকা উৎপাদন করছি আমরা। যুক্তরাজ্যসহ পৃথিবীর বহু দেশে আমরা ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালাই। যেসব সমালোচনা হচ্ছে তা কোনোভাবেই কাম্য নয়।