এন্টিবডি তৈরি হলেও করোনা টিকে থাকছে শিশুর দেহে!
শিশুদের দেহে করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) আচরণ শুরু থেকেই ঝামেলায় ফেলছিল গবেষকদের। এখন তা আরও বাড়িয়ে তুলল যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণা। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক শিশুর দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার পরও ভাইরাসটি টিকে থাকছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির ‘চিলড্রেনস ন্যাশনাল হাসপাতাল’ পরিচালিত এই গবেষণায় ৬ হাজার ৩০০ কভিড-১৯ পজিটিভ শিশুকে নিয়ে পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া ২১৫ শিশুর অ্যান্টিবডি পরীক্ষাও করা হয়।
হাসপাতালের ল্যাবরেটরি ইনফরমেকটিকসের পরিচালক বুরাক বাহার ডেইলি মেইলকে জানান, ‘আমরা দেখতে চেয়েছি রোগীদের মধ্যে আসলে কী ঘটছে? সংক্রমিত শরীর থেকে ভাইরাস নির্মূল হয়ে যাওয়া ও অ্যান্টিবডির উপস্থিতির মধ্যে কি কোনো সম্পর্ক আছে? আমরা এই সময়সীমাটা দেখতে চেয়েছি।’
এ রোগীদের সবাই ১৩ মার্চ থেকে ২১ জুন পর্যন্ত চিলড্রেনস ন্যাশনাল হাসপাতালে ভর্তি ছিল। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৫ শতাংশ শিশুর শরীরে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি থাকার পাশাপাশি ওই ভাইরাসেরও অস্তিত্ব মিলেছে।
২১৫ জন অসুস্থ শিশুর মধ্যে ৩৩ জনের সার্স-সিওভি-২ ও অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করে দেখা হয়। এর মধ্যে ৯ জনের রক্তে অ্যান্টিবডি মেলে।
অ্যান্টিবডি দুই রকমের হয়ে থাকে। এর মধ্যে আইজিএম তৈরি হয় শরীরে সংক্রমণ শুরু কয়েকদিনের মধ্যেই। অন্যদিকে আইজিজি অ্যান্টিবডি তৈরি হতে একটু সময় লেগে যায়। একবার শরীরে আইজিজি তৈরি হলে আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হওয়ার পর এ অ্যান্টিবডি এক মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত থাকে।
হাসপাতালের ল্যাবরেটরি ইনফরমেকটিকসের পরিচালক বলেন, ‘আমাদের সাধারণ মেডিকেল জ্ঞান বলে, যখন শরীরে অ্যান্টিবডি শনাক্ত হয়, তখন আর ভাইরাসের অস্তিত্ব থাকে না। কিন্তু এক্ষেত্রে আমরা কিছু রোগীর শরীরে দুই ধরনের অ্যান্টিবডির অস্তিত্বই পেয়েছি।’
আবার গবেষণায় দেখা গেছে যে, শরীরের ভেতর থেকে করোনাভাইরাস নির্মূল হতে কিশোর ও ২০ বছরের কম বয়সী রোগীদের চেয়ে ছোট শিশুদের দ্বিগুণ সময় লাগছে। শিশুদের ৩২ দিনের মতো লেগেছে কভিড-১৯ নেগেটিভ হতে। সে তুলনায় প্রাপ্ত বয়স্কদের লাগছে ১৮ দিন। নারীদের আরও একটু বেশিই সময় লাগছে সেরে উঠতে।
গবেষকরা বলছেন, ‘শিশুদের সংক্রমণ সারতে কেমন সময় লাগতে পারে; আবার ঠিক কখন থেকে তাদের শরীরে কভিড-১৯ বিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি শুরু হয়, এসব উত্তর জানতেও চেষ্টা চলছে তাদের।’
গবেষকরা বলছেন, এখনও অনেক প্রশ্নের উত্তরই অজানা রয়ে গেছে। শুরু থেকেই গবেষকরা দেখছিলেন, শিশুরা নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে কভিড-১৯ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় না। এখন শরীরে অ্যান্টিবডির উপস্থিতির মধ্যেই করোনাভাইরাস থাকলে, তা থেকে অন্য কাউকে তারা সংক্রমিত করতে পারে কি না, এবার তা নিয়েই মাথা ঘামাচ্ছেন গবেষকরা। শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থায় অ্যান্টিবডির ভূমিকা কতটুকু, তাও এখনও অজানা।
ওই পরিচালক বলেন,‘শরীরে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি মানেই ওই ব্যক্তি সুরক্ষিত থাকবেন অথবা ভাইরাস ছড়াবেন না, এমন নয়’। তাই মাস্ক পরা, হাত ধোয়া আর সামাজিক দূরত্ব মেনে চলাকেই গুরুত্ব দিতে চান তিনি।